০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫
`

উজানের ঢলে ডুবছে সিলেট

সুরমা কুশিয়ারা ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার উপরে
সুনামগঞ্জে বন্যায় তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি হতৌহিদ চৌধুরী প্রদীপ -

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ডুবে গেছে উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ জনপদ। সিলেট নগরীতেও দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। সিলেটের দুই প্রধান নদী সুরমা ও কুশিয়ারার সব পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ অঞ্চলের নদ-নদীগুলো এবং হাওর এলাকা টইটুম্বর থাকায় পানি নামতে না পারায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। এছাড়া উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। আকস্মিক বানের পানিতে নদীগুলো উপচে বিস্তীর্ণ জনপদ প্লাবিত হয়েছে। এ এলাকার ব্রহ্মপুত্র নদ ও ধরলা নদীতে বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে তৃতীয় দফায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার ১৩ উপজেলায় ৯৭টি ইউনিয়ন। এতে সাত লাখ ১১ হাজার ২২৬ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর ছয়টি পয়েন্টেই পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সকাল ৯টার দিকে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীর সিলেট পয়েন্টে পানি বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশিদ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৩৫ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৪৩ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৮ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢলের কারণে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এ ছাড়া দুই দফা বন্যায় সব নদ-নদী ও হাওর এলাকা পানি ভর্তি থাকায় পানি নামার গতি কম।
জানা যায়, গত সোমবার থেকে সিলেটে তৃতীয় দফায় পানি বাড়তে থাকায় দেখা দেয় বন্যা। গত মঙ্গলবার দুপুর থেকে বৃষ্টি কমলেও সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার সব পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
টানা বৃষ্টির কারণে সিলেট নগরীতেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। শিবগঞ্জ, সোবহানীঘাট, যতরপুর, মিরাবাজার, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, শামীমাবাদ, মির্জাজাঙ্গাল, মনিপুরি রাজবাড়ী, তালতলা, জামতলা ও চৌকিদেখী এলাকাসহ আরো বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা পানিবন্দী অবস্থায় আছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, মঙ্গলবার সিলেট নগরের মিরাবাজার এলাকার কিশোরী মোহন বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনে ৮০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা বাসিন্দাদের খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
সিলেটে সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ সবচেয়ে বেশি বন্যার কবলে পড়েছে। তবে প্লাবিত হয়েছে সব কটি উপজেলাই।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: তৌহিদুল ইসলাম বলেন, অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে উপজেলার ১৫১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে পানিবন্দী লোকের সংখ্যা প্রায় ৯৮ হাজার।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যার কারণে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ আর দুর্দশা যেন পিছু ছাড়ছে না। শহর ও শহরতলি এলাকার বন্যাকবলিত মানুষ হাটবাজার ও আশপাশ এলাকায় যেতে পারলেও, হাওর এলাকার বিচ্ছিন্ন পল্লীগ্রামের লোকজন পানিবন্দী অবস্থায় কোথাও বের হতে পারছেন না।
এদিকে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষজন পড়েছেন চরম বিপাকে । জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গত কয়েক দিনে দেশের অভ্যন্তরে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সুনামগঞ্জে গড়ে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ২৫০ থেকে ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হওয়ায় নদী-খাল ও হাওর ভরাট হয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। একইসাথে সীমান্তের ওপারে মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ায় সুনামগঞ্জের সব উপজেলায় পানি বেড়ে গেছে।

চলতি বর্ষা মৌসুমে গত ১৭ জুন একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৩৬৭ মিলিমিটার। এরপরই পুরো জেলায় শুরু হয় বন্যা।। এই বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে না হতেই আবারো রোববার রাত থেকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বেশী বেশি বৃষ্টি হলে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল নেমে পরিস্থিতির অবনতি হয়।
ঢলের পানিতে সুরমা, যাদুকাটা, রক্তি, ধনু, বৌলাই মরা-সুরমা নদী উপচে পানি প্রবেশ করে লোকায় ও বসাবাড়িতে। তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুর ও বালিজুরি, একই সড়কের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা-দুর্গাপুর, জামালগঞ্জের সাচনাবাজার-সুনামগঞ্জ সড়কের নিয়ামতপুর ও আহমদাবাদ এলাকার সড়ক প্লাবিত হয়ে বিশ্বম্ভরপুর-তাহিরপুর সড়কে তিন দিন ধরে ও সাচনাবাজার সুনামগঞ্জ সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, ছাতক-আন্ধারীগাঁও-সুনামগঞ্জ সড়কের আন্ধারীগাঁও এলাকায় বিশাল ভাঙনে দুই উপজেলার যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে দুই উপজেলার অন্তত চারটি ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতব্যবস্থা।
সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এসব মানুষ অনেকটাই বন্দিদশায় দিনানিপাত করছেন। গত ২০ জুন ছাতক-সুনামগঞ্জ পাকা সড়কের আন্ধারীগাঁও এলাকায় ঢলের পানির ধাক্কায় ভেসে যায় সড়কের একটি অংশ । বিষয়টি অতি জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় আমলে নিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে বিকল্প পথ সৃষ্টি করে জনদুর্ভোগ লাঘবে উদ্যোগ গ্রহণ করেন নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

এদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ ছাতক-আন্ধারীগাঁও-সুনামগঞ্জ সড়ক মেরামতের জন্য অনেক আগেই একটি টেন্ডার হলেও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এখনো পর্যন্ত এ সড়কে কাজ শুরু করা হয়নি। বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করায় ছাতক উপজেলার ছাতক সদর, দোয়ারা উপজেলার দোহালিয়া, মান্নারগাঁও এবং পান্ডারগাঁও ইউনিয়নের অর্ধলক্ষাধিক মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ঠিকাদার নিজের কাজের স্বার্থে হলেও এ ভাঙা অংশটুকু মেরামত করা জরুরি বলে স্থানীয়রা মনে করেন।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ।
প্লাবিত হয়েছে নাগেশ্বরী, রৌমারী, রাজিবপুর, চিলমারী, ভুরঙ্গামারী, উলিপুর, ফুলবাড়ী, রাজারহাট ও সদর উপজেলার নদ-নদী তীরবর্তী চর-দ্বীপ চর ও নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ী, গ্রামীণ সডক, পাট, আমন বীজতলা ও সবজি জাতীয় মৌসুমি ফসলের ক্ষেত। ভেঙে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা।
স্থানীয পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায, গতকাল সকাল ৬টায় শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ধরলার পানি ১২ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১ সেন্টিমিটার এবং নুন খাওযা পয়েন্ট ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রৌমারী (কুড়িগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় আবারো বন্যায় শতশত মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয় দফায় আকস্মিক ভাবে বন্যার পানিতে জিঞ্জিরাম, হলহলিয়া, ধর্নি, সোনাভরি, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি উপচে প্লাবিত হয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। প্রচুর বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা প্রবল ¯্রােতের পানিতে এ নদীগুলো ভরাট হয়ে বন্যায় পরিণত হয়ে যায়। অন্যদিকে শুল্ক স্থলবন্দরে বন্যার পানি উঠায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকারত্বে দিনযাপন করছে।
৩ জুলাই বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক ও উচ্চবিদ্যালয়ে রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। অনেক বাড়িঘরে পানি উঠার ফলে এক বেলা না খেয়ে জনদুর্ভোগ পোহাতে হয় অনেক পরিবারকে। দ্বিতীয় দফায় বন্যার পানিতে সদ্য রোপণকৃত আমন ফসলের বীজতলাসহ কৃষকের সবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

নালিতাবাড়ী (শেরপুর) সংবাদদাতা জানান, শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে পাগাড়ী নদী ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পার ভেঙে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের প্রায় ছয় ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
গত রোববার থেকে নালিতাবাড়ী উপজেলায় ভারী বর্ষণ শুরু হয়। চার দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজানে ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্য থেকে বয়ে আসা ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীতে প্রবল স্রোতে পাহাড়ি ঢল নামে। নদীতীর উপচে প্রবল স্রোতে ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর তীরভেঙে ঘরবাড়িতে ঢলের পানি ঢুকছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ পাঠক আলমগীর হোসেন ও মুকুল মিয়া জানান, গত মঙ্গলবার সকালে চেল্লাখালী নদীর বারোমারী বাজার পয়েন্টে ৩১৪ সেন্টিমিটার ও ভোগাই নদীর নালিতাবাড়ী পয়েন্টে ৪৭ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ রানা জানান, পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহী হলেও পানি কমে যাচ্ছে। যাদের ত্রাণ বা অন্য কোনো কিছুর প্রয়োজন আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
জুড়ী (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, মৌলভীবাজারের জুড়ীতে টানা কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে আবারো জুড়ী উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বন্যার ফলে, জুড়ী উপজেলার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। মানুষজন গরু-বাছুর, হাঁস, মুরগিসহ অন্যান্য প্রাণী নিয়ে দুর্ভোগের সাথে দিনাতিপাত করছেন। অত্রাঞ্চলের বন্যার পানি দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। বর্তমানে উপজেলার প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ অসহায় ও দুর্ভোগের সাথে যুদ্ধ করে কোনো রকমে বেঁচে আছেন। এ পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু ত্রাণসহায়তার দরকার তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। বন্যার্তদের জন্য প্রসাশনের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতার প্রয়োজন তা তাদের পক্ষ থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলে অভিযোগ অত্রাঞ্চলের বন্যার্তদের অনেকের। বন্যার পানি দিন দিন এতই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, অত্রাঞ্চলের বেশির ভাগ বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন স্থান তলিয়ে গেছে। বন্যায় শত শত ফিশারির মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আর খামারিসহ অন্যান্য মানুষের গরু-বাছুর নিয়ে থাকার ব্যবস্থা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাঘাটা (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি জানান, টানা ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীর পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধির দরুণ গাইবান্ধার সাঘাটা থানার পূর্ব পাশের পয়েন্টে পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। ফলে একটি গ্রামীণ বাঁধ ভেঙে গেছে। উপজেলার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বাংশের সমস্ত এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জানায় যায়,গত ৫ দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে পাহাড়ি ঢল নেমে আসায় উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বাংশ প্লাবিত হয়েছে। ভরতখালী ইউনিয়নের শ্মশান ঘাট এলাকয় বাঁধ ভেঙে বরমতাইড়, উত্তর উল্যা ও দক্ষিণ উল্যা এলাকার লোকারয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া হলদিয়া, ঘুড়িদহ ও জুমারবাড়ী ইউনিয়নে ১৫টি গ্রাম পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি কৃষকের জমির পাট, কাউন, তীল ও শাকসবজিসহ বর্ষাকালীন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজারের উখিয়ায় টানা বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার কারণে ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করেছে উপজেলা প্রশাসন। গত এক সপ্তাহ ধরে উখিয়ায় থেমে থেমে মাঝারি ও ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। টানা এক সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের আশঙ্কা বেড়েছে, এমনটাই বলছে প্রশাসন। স্থানীয়দের সচেতন ও সতর্ক করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তানভীর হোসেন। তিনি বলেন, স্থানীয় ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ক্ষয়ক্ষতি ও জানমাল রক্ষায় সচেতন বিভিন্ন এনজিওদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও মাইকিং করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমেও মাইকিং করে নিরাপদ স্থানে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে যানবাহন ও মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন বাড়িঘরে এবং গ্রামীণ রাস্তাঘাটে পানি উঠায় মানুষকে অনেক কষ্ট ভোগ করতে হচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন না মানুষ। এতে খেটে খাওয়া মানুষ কাজ করতে না পারায় কষ্টে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
এ দিকে বৃষ্টির কারণে উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নদীর তীরবর্তী জলাঞ্চল খ্যাত বাঙ্গড্ডা, রায়কোট উত্তর, দক্ষিণ, মৌকরা, ঢালুয়া, বক্সগঞ্জ, সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বিভিন্ন গ্রামগুলোর রাস্তাঘাট এবং বাড়িঘরে পানি উঠেছে।

মিরসরাইয়ে মানবেতর জীবন কাটছে পানিবন্দী দেড় হাজার পরিবারের
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, টানা ছয় দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলায় পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন কাটছে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের। গতকাল ৪৫০ পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করেছেন উপজেলা প্রশাসন। বেশির ভাগ পরিবারের রান্নাঘরে পানি ওঠায় চুলায় আগুন জ্বলছে না। দীর্ঘদিন ধরে খাল সংস্কার না থাকা ও অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ ছাড়া পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে রোপা আমন ও সবজিক্ষেত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টানা ছয় দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার করেরহাট, হিঙ্গুলী, বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভার নিম্নাঞ্চল, জোরারগঞ্জ, কাটাছরা, দুর্গাপুর, মিঠানালা, মিরসরাই সদর, খৈয়াছড়া, ওসমানপুর ও ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও বারইয়ারহাট-রামগড় সড়কের বিভিন্ন স্থানে। সড়কে গর্তের কারণে অনেকটা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে জনবহুল বড়দারোগাহাট-বগাচতর সড়ক, জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট সড়ক।

 


আরো সংবাদ



premium cement