০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫
`

আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ইউনূসের সাজার দণ্ড কার্যকর থাকবে

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
র‌্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট মিস সুজানা নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী প্রফেসর ইউনূসকে বিশেষভাবে কমিশন করা একটি প্রতিকৃতি উপহার দেন -

শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং আপিল শুনানিতে অংশ নিতে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আসবেন। গতকাল ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন এ তথ্য জানিয়েছেন।
ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন আরো জানান, মঙ্গলবার ড. মুহাম্মদ ইউনূসের স্থায়ী জামিন আবেদন করা হবে। এ ছাড়া তার আপিল আবেদনও বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য রয়েছে। এ জন্য বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আসবেন ড. ইউনূস।
আজ বৃহস্পতিবার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের সদস্য জেলা ও দায়রা জজ এম এ আউয়ালের আদালতে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের আপিলের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। এ ছাড়া জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ড. ইউনূসসহ অন্যদের পক্ষে আবেদন করা হবে বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
এ দিকে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের দণ্ড (কনভিকশন) কার্যকর থাকবে, কারণ আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ড স্থগিতের কোনো বিধান নেই। এটা কেবল আপিল নিষ্পত্তি করে বাতিল, বহাল বা সংশোধন হতে পারে বলে লিখিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে এ নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের রায়ে দণ্ড ও সাজার রায় স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের আদেশ বাতিলের রায়ে এ নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট।
গত ১৮ মার্চ বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সম্প্রতি প্রকাশ করা হয়েছে।

৫০ পৃষ্ঠার রায়ে হাইকোর্ট তার নির্দেশনায় বলেন, আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের দণ্ড (কনভিকশন) কার্যকর থাকবে, কারণ আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ড স্থগিতের কোনো বিধান নেই। এটা কেবল আপিল নিষ্পত্তি করে বাতিল, বহাল বা সংশোধন করতে পারে।
আদালত বলেছেন, যেহেতু শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল থেকে ড. ইউনূসসহ চারজন জামিন পেয়েছেন সেহেতু দণ্ড স্থগিত বা সাসপেন্ড আদেশের কোনো দরকার নেই। জামিন পাওয়ার পর সাজা সংক্রান্ত আদেশ ও রায় সয়ংক্রিয়ভাবে এবং অন্তর্নিহিতভাবে সাসপেন্ড হয়ে যায়। যত দিন পর্যন্ত ড. ইউনূসসহ চারজন জামিনে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত সাজা স্থগিত থাকবে। জরিমানাও আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। এ ছাড়া ১ জানুয়ারি ছয় মাসের দণ্ড দিয়ে শ্রম আদালতের দেয়া আদেশ ও রায় স্থগিত করে ২৮ জানুয়ারি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের স্থগিতাদেশ বাতিল করা হলো।
গত ১ জানুয়ারি ঢাকার শ্রম আদালত-৩ এর বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানা তাদের বিরুদ্ধে সাজার রায় দেন। তাদের শ্রম আইনের ৩০৩ (ঙ) ধারায় সর্বোচ্চ ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
অপর দিকে ৩০৭ ধারায় ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেন আদালত। এরপর আসামিপক্ষ আপিলের শর্তে জামিন আবেদন করেন। আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করে পাঁচ হাজার টাকা বন্ডে এক মাসের জন্য জামিন দেন। সেই সময়সীমার মধ্যেই আপিল করেন তারা। ড. ইউনূস ছাড়া অন্য তিন বিবাদী হলেন- গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো: আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো: শাহজাহান।
গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে জামিন দেন। আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে নথি তলব করেন। এ ছাড়া গত ১ জানুয়ারি দেয়া দণ্ডের রায়ের কার্যক্রম স্থগিত করেন। এরপর স্থগিতের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করে কলকারখানা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর। গত ৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এ বিষয়ে রুল জারি করেন। এ ছাড়া দণ্ডিতদের বিদেশ যেতে হলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করে যেতে হবে বলে আদেশ দেন। ওই রুলের শুনানি শেষে ১৮ মার্চ রায় দেন হাইকোর্ট।


আরো সংবাদ



premium cement