অর্থবছরের শেষ দুই দিনে ৩১ হাজার কোটি টাকা ধার
- আশরাফুল ইসলাম
- ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:২৯, আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৮
নগদ টাকার সঙ্কট কাটছে না ব্যাংকগুলোর। প্রতি নিয়তই দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলো। মুদ্রাবাজারে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা কাটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর চাহিদা মোতাবেক টাকার জোগান দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সহযোগিতার কারণে ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে ঠিকই কিন্তু স্থায়ী কোনো সমাধান হচ্ছে না। খেলাপি ঋণ আদায় বাড়ানো গেলে ও ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা টাকা ফেরত দিলে সঙ্কট অনেকাংশেই কেটে যেতো।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে প্রতি দিনের পরিবর্তে সপ্তাহে দুই দিন টাকার জোগান দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তহবিল ব্যবস্থাপনায় কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরের দিনই ব্যাংকগুলোর
তহবিল ব্যবস্থাপকরা বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃষ্টিতে আনেন। এতে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপকরা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল দৈনিক ভিত্তিতে আর তহবিল জোগান দেয়া হবে না।
তবে, এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বলা হয়, ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে জরুরি প্রয়োজনে তারল্যের জোগান দিতে আগের মতো এখনো দৈনিক ভিত্তিতে প্রচলিত তৎক্ষণিক ঋণ সুবিধা ও তাৎক্ষণিক আমানত সুবিধা অব্যাহত রাখা হবে। এসব উপকরণ ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ ও আমানত সুবিধা নিতে পারবে। এ বিষয়ে গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ দিকে ব্যাংকগুলো বছরের শেষ দিনে তারল্য সঙ্কট মেটানোর প্রচণ্ড চাপে পড়ে যায়। বিশেষ করে ১৫ দিন অন্তে ব্যাংকগুলো বাধ্যতামূলক নগদ জমার হার সংরক্ষণ (সিআরআর) করতে হয়। কিন্তু টাকার সঙ্কটে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই ওই দিন দিন শেষে সিআরআর ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
এরই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওই দিন ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা বিভিন্ন উপকরণ বন্ধক রেখে টাকার চাহিদা পূরণ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে অনেক ব্যাংকই বছরের শেষ দিনে সিআরআর ঘাটতি হওয়া থেকে রক্ষা পায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অর্থবছর শেষ হওয়ার আগের দুই কার্যদিবস ছিল ২৭ জুন বৃহস্পতিবার ও ৩০ জুন রোববার। ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোকে ১৬ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা ধার দেয়। আর গত বৃহস্পতিবার ধার দেয়া হয় ১৫ হাজার ৫১ কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ দুই কার্যদিবসে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে ধার দেয়া হয় ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, নানা কারণে ব্যাংকগুলোতে দীর্ঘ দিন যাবত টাকার সঙ্কট রয়েছে। কিছু ব্যাবসায়ী গ্রুপ ও ব্যাংকের পরিচালকরা ব্যাংক থেকে নামে বেনামে ঋণ নিচ্ছেন। কিন্তু এ ঋণের বেশির ভাগ অর্থই পরিশোধ করছেন না। আবার বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিসহায়তার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা ছাড় পেয়ে যান। যেমন, কখনো নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে, আবার কখনো সুদহারে ছাড় পেয়ে ঋণ পরিশোধ না করেই ঋণ নবায়ন করেন। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর নগদ আদায় তুলনামূলকভাবে কমে গেছে। বিপরীতভাবে প্রতিটি পণ্যের দাম দ্বিগুণ তিনগুণ হয়েছে। কিন্তু এ অনুযায়ী আয় বাড়েনি। বাধ্য হয়ে মানুষ তার ব্যয় নির্বাহের জন্য ব্যাংকের জমানো টাকা তুলে নিচ্ছেন। এসব কারণে ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনায় টান পড়ে। বাধ্য হয়ে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ ধার করে চলছে।
দেশের প্রথম প্রজন্মের একটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, গ্রাহকদের অনেকভাবে অনুরোধ করে অর্থবছরের শেষ কয়েক দিন আমানত প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছিল। জুনের হিসাব সমাপ্ত করার সুবিধার জন্য ব্যাংকারদের এ অনুরোধ অনেক গ্রাহকই রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু জুন শেষ হওয়ার পরের কার্যকদিবস অর্থাৎ ২ জুলাই থেকেই আবার আমানত প্রত্যাহারের চাপ বেড়ে গেছে। এখন অনেক ক্ষেত্রে সামাল দেয়াই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। অথচ ব্যাংক থেকে যারা ঋণের নামে টাকা বের করে নিয়েছেন তারা যদি কিছু টাকাও ফেরত দিতেন তাহলেও এ সঙ্কটের সম্মুখীন হতে হতো না বলে ওই কর্মকর্তা আক্ষেপ করেন।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, গত রোববারের সিদ্ধান্তের প্রভাব সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে আনা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে। পরের দিনই সোমবার এক সার্কুলারের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্তের পরিবর্তন আনা হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে তারল্যের জোগান দিতে তৎক্ষণিক ঋণ সুবিধা ও তাৎক্ষণিক আমানত সুবিধা- এ দুটি উপকরণ আগে থেকেই চালু আছে।
এর নিলামও প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এর ব্যবহার কম হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এ দুটি উপকরণ ব্যবহার করে তারল্যের জোগান কম দিত। এখন আইএমএফের শর্তের কারণে রেপো সুবিধা কমাতে হয়েছে। যে কারণে তৎক্ষণিক ঋণ সুবিধা ও তাৎক্ষণিক আমানত সুবিধা উপকরণ দুটিকে এখন আবার সক্রিয় করা হবে। ব্যাংকগুলো চাইলে প্রতিদিন এসব উপকরণ ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সুবিধা নিতে পারবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা