সিলেটে দুটি কূপ খননের দায়িত্ব পেল চিনা কোম্পানি
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:২৯
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে সিলেট-১১ (উন্নয়ন কূপ) ও রশিদপুর-১৩ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খননের কাজ পেয়েছে চিনা কোম্পানি। এই কোম্পানিটির নাম সিনোপ্যাক ইন্টারন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম সার্ভিস করপোরেশন। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮৯৩ টাকা।
চীনের প্রতিষ্ঠানটিকে কূপ খননের কাজ দিতে সম্মতি দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। গতকাল সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
দুটি গ্যাস কূপ খননে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানিসহ ৯টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এতে মোট ব্যয় হবে ১৪৬৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো: মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধির (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ অনুসরণে সিলেট-১১ (উন্নয়ন কূপ) ও রশিদপুর-১৩ নম্বর কূপ (অনুসন্ধান কূপ) খনন করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৮৫ লাখ ৭৯ হাজার ৮৯৩ টাকা ৪৮ পয়সা। এ নিয়ে সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল) ও সিনোপ্যাক ইন্টারন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম সার্ভিস করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। তিনি বলেন, প্রস্তাবক মন্ত্রণালয় জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ। সুপারিশকৃত দরদাতা প্রতিষ্ঠান চীনের সিনোপ্যাক ইন্টারন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম সার্ভিস করপোরেশন।
জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২৬ সালের ৩০ জুন শেষ হবে। চিহ্নিত কূপ ২টি খনন সফলভাবে সম্পন্ন হলে প্রথম ৫ বছর দৈনিক ২০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং পরবর্তী ৫ বছর দৈনিক ১৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন সম্ভব হবে। ১০ বছরে উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ হবে ৬৫.৭ বিসিএফ যার মোট মূল্য হবে ৪ হাজার ৫৪৫ কোটি টাকা।
এ দিকে সভায় ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১’-এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে (২০২৪ সালের ২২তম) এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
জানা গেছে, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিইএ) সভার অনুমোদনক্রমে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি ক্রয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত ২৩ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এমএসপিএ চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। পেট্রোবাংলা কর্তৃক এক কার্গো এলএনজি সরবরাহের জন্য ২৩ প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপ্রস্তাব আহ্বান করা হলে দুটি প্রতিষ্ঠান দর প্রস্তাব দাখিল করে। দুটি প্রস্তাবই কারিগরি ও আর্থিকভাবে রেসপনসিভ হয়।
দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে প্রস্তাব প্রক্রিয়াকরণ কমিটির (পিপিসি) সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রের মেসার্স এক্সেলারেট এনার্জি এলপির কাছ থেকে এই এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। প্রতি এমএমবিটিইউ ১৩.৫৫৮০ মার্কিন ডলার হিসাবে মোট খরচ হবে ৬০৯ কোটি ২৭ লাখ ৬৫ হাজার ৮৯৭ টাকা।
সমন্বয় ও সংস্কার সচিব জানান, বৈঠকে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)-এর জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত চুক্তির আওতায় সৌদি আরব ও রাশিয়া থেকে সার আমদানির দুটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মেট্রিক টন ৫২৩ ডলার (পূর্বমূল্য ৫১৯ ডলার) হিসাবে সৌদি আরব-এর মা’এডেন থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার আমদানিতে ব্যয় হবে ২ কোটি ৯ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় ২৪৬ কোটি ৮৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
আর প্রতি মেট্রিক টন ২৭৫.৫০ ডলার (পূর্বমূল্য ২৮৯.৭৫ ডলার) দরে রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক করপোরেশন প্রুডিনটর্গ থেকে প্রথম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানিতে ব্যয় হবে ৮২ লাখ ৬৫ হাজার ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় ৯৭ কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তিনি জানান, বৈঠকে এডিবি, এএফডি, জিইএফ ও বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন গ্রেটার ঢাকা সাসটেইনেবল আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট (বিআরটি, গাজীপুর-এয়ারপোর্ট) শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্যাকেজের (আরপিডব্লিউ-১.২) পূর্ত কাজ সম্পাদনে ঠিকাদার নিয়োগের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যৌথভাবে এ কাজটি করবে- বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস লিমিটেড ও রিমি নির্মাণ লিমিটেড। এতে ব্যয় হবে ২২ কোটি ৬৭ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
সমন্বয় ও সংস্কার সচিব জানান, এ ছাড়া বৈঠকে রাজধানীর গাবতলী সিটি পল্লীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ক্লিনারবাসীর জন্য বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ (৩য় সংশোধিত) প্রকল্পের পৃথক চারটি প্যাকেজের (প্যাকেজ নং ডব্লিউ-২, ৩, ৪ ও ৫) পূর্ত কাজের ব্যয় বৃদ্ধির ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্যাকেজ নং ডব্লিউ-২-তে ১৩ কোটি ৪ লাখ টাকা; প্যাকেজ নং ডব্লিউ-৩-তে ১১ কোটি ৬১ লাখ টাকা; প্যাকেজ নং ডব্লিউ-৪-তে ১৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ও প্যাকেজ নং ডব্লিউ-৫-তে ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা টাকা ব্যয় বেড়েছে।
পদ্মা সেতু সমাপনী ব্যয় অনুমোদন : এ দিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আগামীকাল শুক্রবার পদ্মা বহুমুখী সেতুর সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে নেয়া কার্যক্রমগুলো হবে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে। এতে যে ব্যয় হবে, তা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করার অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
গতকাল সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো: মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, আমরা সবাই জানি ২০২২ সালের ২৫ জুন আমাদের গর্বের, অহঙ্কারের পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণের মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। এই সমাপ্তি উপলক্ষে মাওয়া প্রান্তে একটা সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। এই সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী থাকার সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। তিনি বলেন, আগামী ৫ জুলাই এই অনুষ্ঠান হবে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যেখানে হয়েছিল সেখানেই সমাপনী অনুষ্ঠান হবে। এই অনুষ্ঠান উপলক্ষে যে কার্যক্রমগুলো নেয়া হবে, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে তা সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমাদের সময় কম, তাই ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে করা সম্ভব হবে না। সে জন্য সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কাজটি করার জন্য বিষয়টি এখানে উত্থাপন করা হয়েছে এবং মন্ত্রিসভা কমিটি সেটি অনুমোদন দিয়েছে।
সমাপনী অনুষ্ঠানের বাজেট কত, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে সচিব বলেন, বাজেট ৫ কোটি টাকার উপরে বিধায় এখানে এসেছে। ৫ কোটি টাকার কম হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা অনুমোদন করতে পারেন। তিনি বলেন, খরচ না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত খরচ বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, গত দুই বছরে পদ্মা সেতু দিয়ে ১ কোটি ২৭ লাখ যানবাহন চলাচল করেছে। ২৯ জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে যান চলাচল করেছে প্রায় ১৯ হাজার। প্রতিদিন গড়ে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা