০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫
`

খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আইনি লড়াইয়ে যাবে বিএনপি

১১ দিন পর হাসপাতাল থেকে ফিরলেন বাসায়
চিকিৎসা শেষে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় ফিরছেন বেগম খালেদা জিয়া : নয়া দিগন্ত -


বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে এই মুহূর্তে তিন দিনের কর্মসূচিতে রয়েছে বিএনপি। আজ সারা দেশের জেলাপর্যায়ে সমাবেশ করবে দলটি। এর আগে গত শনিবার রাজধানীতে বড় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই সমাবেশ থেকে নেতারা বেগম জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দেয়া না হলে কঠিন পরিণতির হুঁশিয়ারি দেন। জানা গেছে, বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে আরো কর্মসূচি দেবে বিএনপি। একই সাথে দলের আইনজীবীরা আবারো আইনি লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি মাসের মধ্যেই তারা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন।
বিএনপির আইনজীবীরা ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে নতুন করে আইনি দিকগুলো খতিয়ে দেখা হবে বলে ঈঙ্গিত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, আইনের বিভিন্ন দিক আছে, ব্যাখ্যা আছে এবং উদাহরণও আছে। তারা তাদের এক্সপার্টদের সাথে কথা বলবেন এবং সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। তারপর সেটিকে একটা জুডিশিয়াল সিস্টেমের মধ্যে নেয়ার চেষ্টা করবেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট মামলা রয়েছে ৩৭টি। এর মধ্যে দু’টি মামলায় তার সাজা হয়েছে। বাকি ৩৫টি মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। এর মধ্যে উচ্চ আদালতের আদেশে কিছু মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি মামলা নি¤œ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক কারামুক্ত হলেও বেগম জিয়ার জীবণাচরণ মূল্যায়ন করলে এটা স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, তিনি স্বাধীন নন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তিনি এ পর্যন্ত অংশ নেননি। বিএনপির দাবি, খালেদা জিয়া এখনো কারান্তরীণ।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছিল। ওই দিনই তিনি কারাগারে যান। এরপর ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে আপিল করেন বেগম জিয়া। আপিলে খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের মার্চে হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের সাজা থেকে খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে আপিল করেন কারাবন্দী খালেদা জিয়া। আপিল আবেদনে তার জামিন এবং সাজার কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়। সে আপিল এখন পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন। অন্য দিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার আট মাসের মাথায় ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসনের সাত বছরের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এই রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া আপিল করলে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে অর্থদণ্ড স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এর পর থেকে মামলাটি সে অবস্থায় আছে।
দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। ওই সময় আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ দেশব্যাপী মানববন্ধন, অবস্থান, গণঅনশন, লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ সমাবেশ, সমাবেশসহ নানান কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। কিন্তু দলীয় চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হন তারা। পরে করোনা মহামারীর সময় দণ্ডিত খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে সাময়িক স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার। কারামুক্তির পর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে আসা-যাওয়ার মধ্যে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থাকছেন শারীরিকভাবে অসুস্থ খালেদা জিয়া। এমন অবস্থার মধ্যে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২১ জুন গভীর রাতে খালেদা জিয়াকে বাসা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে ২৩ জুন তার হৃৎপিণ্ডে পেসমেকার লাগানো হয়। পেসমেকার বসানোর পর সপ্তাখানেক নিবিড় চিকিৎসার পর বেগম জিয়ার অবনতিশীল শারীরিক অবস্থায় কিছুটা স্থিতিশীলতা আসে। এর ফলে মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে গতকাল সন্ধ্যায় তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। বাসায় পৌঁছানোর পর পরিবারের কয়েকজন সদস্যসহ দলের একাধিক সিনিয়র নেতা বিএনপি-প্রধানকে স্বাগত জানান। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বেগম সেলিমা রেহমান, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, শিরিন সুলতানা, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিনুল হকসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক জাহিদ হোসেন জানান, পেসমেকার বসানোর পর এখন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। বাসায় রেখেই তাকে আগের মতো চিকিৎসা দেবেন চিকিৎসকেরা।
খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এই সময়ে বিএনপি তার মুক্তির দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে কর্মসূচির মধ্যে গত সোমবার জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নতুন সভাপতিসহ নেতাদের নিয়ে শেরেবাংলানগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আইনজীবী ফোরামের নতুন সভাপতি অ্যাডভেকেট জয়নাল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ইনশা আল্লাহ অল্প কিছু দিনের মধ্যে আমরা চেষ্টা করব বিচার বিভাগের মাধ্যমেই আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করার এবং সে জন্য সব আইনজীবী প্রস্তুত হয়ে আছে।
জয়নাল আবেদীন গতকাল মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান অবস্থায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আইনগত কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, সেটা নিয়ে আমরা ভাবছি। আইনের বিভিন্ন দিক আছে, ব্যাখ্যা আছে এবং উদাহরণও আছে। আমরা এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করব। তারপর এটিকে একটা জুডিশিয়াল সিস্টেমের মধ্যে নেয়ার চেষ্টা করব। কবে নাগাদ আইনি লড়াই শুরু হবে-জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আইনের জগতে বৃহত্তর পেশাজীবী সংগঠন। আমরা সংগঠনকে সুসংগঠিত করছি। খুব শিগগিরই আমরা এ ব্যাপারে আমাদের এক্সপার্টদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে আইনের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখব। তারপর আইনি লড়াই শুরুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো। খালেদা জিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে মুক্ত করতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিও অব্যাহত থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তিন দিনের চলমান কর্মসূচির পর আরো কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। অবশ্য নতুন কর্মসূচি এখনো চূড়ান্ত না হলেও মানববন্ধন, বিক্ষোভ, অবস্থান, অনশনের মতো কর্মসূচি দলের হাইকমান্ডের বিবেচনায় রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement