০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫
`

ভারতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে নিহত ১০৭

-

ভারতের উত্তর প্রদেশের হাথরাসে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পদদলিত হয়ে ২৫ নারীসহ ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। যোগীর রাজ্য উত্তর প্রদেশের হাথরাস জেলায় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পদদলিত হয়ে এই ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়া টুডে ও এনডিটিভি।
হাথরাসের সিকান্দারা রাউ শহরে বিশেষভাবে তৈরি করা তাঁবুতে এক ধর্মপ্রচারক তার অনুগামীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সেই সময় এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আলিগড় রেঞ্জের ইন্সপেক্টর জেনারেল শলভ মাথুর বলেন, এটা ছিল ভোলে বাবা নামে এক ধর্মপ্রচারকের সৎসঙ্গ সভা। মঙ্গলবার বিকেলে এটাহ ও হাথরাস জেলার সীমান্তে জমায়েত হওয়ার জন্য সাময়িক অনুমতি দেয়া হয়। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেছেন, অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে পদদলনের এই ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, ১০৭টিরও বেশি লাশ ইটাহ জেলা হাসপাতালে পৌঁছেছে এবং প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে দমবন্ধ অবস্থার মধ্যে পড়েছিলেন তারা। যারা জড়ো হয়েছিলেন তারা এখানে সেখানে দৌড়াদৌড়ি করেছিল বাঁচার জন্য। যার ফলে পদপিষ্টের ঘটনা হয়েছে। আলিগড়ের আইজি জানিয়েছেন, হতাহতের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। যারা বেঁচে আছেন তাদের কাছ থেকে গোটা বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে।
পুলিশ বলছে, প্রাথমিকভাবে তাঁবুতে ঘেরা থাকায় অনুষ্ঠানস্থলে দমবন্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ফলে সৎসঙ্গ সভায় আসা লোকজনের মাঝে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানটির সময় সেখানে প্রচণ্ড গরম ছিল। অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেঁচে জীবিত ফেরা এক ব্যক্তি বলেন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সাথে সাথে লোকজন সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য ছোটাছুটি করছিলেন। সেই সময়ই এই পদদলনের ঘটনা ঘটেছে।

আহত অপর একজন বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে ভক্তদের অনেক ভিড় ছিল। সেখান থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় ছিল না। লোকজন তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে একে-অপরের ওপর পড়ে যায় এবং পদদলনের শিকার হয়। আমি বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু পথে মোটরসাইকেল পার্ক করে রাখা ছিল। এর ফলে আমার বাইরে যাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। অনেকে অজ্ঞান হয়ে লুটিয়ে পড়লেও অন্যরা মারা যান।
ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার কথা স্মরণ করে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আমরা সৎসঙ্গের জন্য এসেছি। সেখানে অনেক ভিড় ছিল। সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার পরপরই আমরা বাইরে চলে যেতে শুরু করি। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ অনেক সরু ছিল। আমরা যখন মাঠের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করি, তখন হঠাৎ করে হইচই শুরু হয়। সেই সময় আমরা কী করব বুঝতে পারছিলাম না। অনেক মানুষ মারা গেছেন।
আরেকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার সাথে সাথে সবাই বেরিয়ে আসতে শুরু করে। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরের একটি ড্রেন ঘেঁষে রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। এই রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় একের পর এক মানুষ ড্রেনে পড়তে থাকেন। এতে কিছু মানুষ পিষ্ট হয়েছেন।
তবে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। পদদলনে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। এই ঘটনা তদন্তে কয়েকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যোগী আদিত্যনাথ। পাশাপাশি দুর্ঘটনাস্থলে ত্রাণ কাজ ত্বরান্বিত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement