০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জিলহজ ১৪৪৫
`

কোটা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ

২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল ও কোটা বাতিলের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণ পদযাত্রা : নয়া দিগন্ত -


সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার ও উচ্চ আদালত কর্তৃক ২০১৮ সালে জারিকৃত পরিপত্র বাতিলের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের আন্দোলনেও সাড়া ফেলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তারা।
গতকাল বিকেলে শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী একত্র হয়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে শুরু করে নীলক্ষেত, ঢাকা কলেজ, সাইন্সল্যাব, এলিফেন্ট রোড, কাঁটাবন হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে। এরপর বেশ কিছক্ষুণ শাহবাগ মোড়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় শাহবাগ সড়কসহ আশপাশের রাস্তাগুলোতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষোভ সমাবেশে ‘কোটা না মেধা’, ‘কোটা প্রথার বিলুপ্তি চাই’; হাইকোর্ট না রাজপথ, সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে বলে স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাবি প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শারজিস আলম বলেন, ১৯৭১ সালে বৈষম্যের বিলুপ্তির জন্যই মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। কোটা প্রথা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই বৈষম্যকে আবার ফিরিয়ে আনার চক্রান্ত চলছে। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ সেটা কখনোই মেনে নেবে না। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য যোক্তিক মাত্রায় কোটা রাখা যেতে পারে। এ ছাড়া অন্য সব কোটা বাতিল করতে হবে। সরকারি চাকরিতে কোটায় পদ পূর্ণ না হলে মেধা তালিকা থেকে শূন্যপদ পূরণ করতে হবে। এ দাবি না আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী হৃদি বলেন, বাংলাদেশে কোনো কোটা থাকা উচিত নয়। আমি নারী হয়ে বলছি, আমি কোনো নারী কোটা চাই না। আমরা মেধার মাধ্যমে দেশকে পরিচালনা করতে চাই। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে বলতে চাই, মেধাবীদের হাতে দেশটাকে ছেড়ে দিন। কোটা প্রথা বাতিল না হলে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবে।

উল্লেখ্য, বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের একাংশ লাইব্রেরি খোলার দাবিতে ভিসির বাসভবনে গিয়ে অবস্থান করে। পরে ভিসি তাদের সংলাপের আশ্বাস দেন।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ জাবি শিক্ষার্থীদের : এদিকে একই দাবিতে ২০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) একদল শিক্ষার্থী। এর আগে গতকাল বিকেলে সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংশপ্তক ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে অবরোধ ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও এসে দেখছি, সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা বিদ্যমান। এ বৈষম্যের জন্য কি আমরা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম? আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা কি এই বৈষম্যের জন্য যুদ্ধ করেছিলেন? আমরা আবারো যুদ্ধে নেমেছি এই বৈষম্য দূর করার জন্য। ৪ জুলাই যদি সরকার আমাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে সারা দেশ অচল করে দেয়া হবে। তারা বলেন, দেশে প্রতিদিন শিক্ষিত বেকার বাড়ছে। যে পরিমাণে উচ্চশিক্ষিত বেকার বের হচ্ছে, সেই পরিমাণে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে না। সরকারের কোনো চিন্তা নেই কিভাবে এই বেকারত্বের সংখ্যা কমানো যায়, উল্টো এই বৈষম্যমূলক কোটা প্রথার মাধ্যমে বেকারত্বের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করার পাঁয়তারা চলছে।

২০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করায় সড়কের দুই পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।
এ সময় আজ বুধবার বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম। সমাবেশে তিনি বলেন, ‘৪ জুলাই কোটা নিয়ে আপিল বিভাগের শুনানি আছে। তাই এই আন্দোলন বেগবান করতে বুধবার বিকেলে দুই ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : একই দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা কলেজের মূল ফটকের সামনে জড়ো হন তারা। পরে স্লোগানসহ মিছিল নিয়ে মিরপুর সড়কের সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ঘুরে নীলক্ষেত হয়ে আবার কলেজের গেটের সামনে আসেন তারা।

এসময় শিক্ষার্থীদের ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘কোটা নয়, মেধা চাই’, ‘চাকরি পেতে, স্বচ্ছ নিয়োগ চাই’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘এই বাংলায় হবে না, বৈষম্যের ঠিকানা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে ওঠো আরেকবার’, ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করতে হবে। এই দাবি সারা বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের। কোটাব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষকে চাকরিতে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এই ব্যবস্থা যোগ্যতাভিত্তিক নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কোটাপ্রথা সমাজের সাধারণ প্রার্থীদের প্রতি অসমতা তৈরি করে।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকা কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর এক শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্যমুক্ত মেধাবীদের বাংলাদেশ চাই। সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবি সব সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৮ সালেও কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হয়েছে। এটি একটি অসম বিন্যাস। সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতি অবিচার করা হচ্ছে। আমরা কোটাব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিলের দাবি জানাই। এই ইস্যুতে সারা দেশের শিক্ষার্থীরাই অসন্তুষ্ট। আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করব।
এছাড়া কোটাপদ্ধতি শিগগিরই স্থায়ীভাবে বাতিল ঘোষণা না করলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একসাথে সম্মিলিত আন্দোলনের নামার হুঁশিয়ারিও দেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement