১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ধেয়ে আসছে বন্যা

নদ-নদীর পানি বাড়ছেই, সুনামগঞ্জ-সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পার্বত্য জেলায় ভূমিধসের শঙ্কা
বন্যায় প্লাবিত সুনামগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা : নয়া দিগন্ত -


আবারও ধেয়ে আসছে বন্যা। ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পাশাপাশি ভারী বর্ষণে এরই মধ্যে সিলেট, সুনামগঞ্জ, রংপুরের প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এছাড়া পার্বত্য জেলা বান্দরবান ও মধ্যাঞ্চল শেরপুরের বিভিন্ন নদীর পানিও বাড়ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী বিপদজনক অবস্থানে রয়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা। সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার নি¤œাঞ্চল তলিয়ে যাবার সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সিলেটে তৃতীয় দফা বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জেলায় নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এ ছাড়া বেড়েই চলেছে জেলার অন্য নদ-নদীর পানি। অন্যদিকে পার্বত্য জেলাগুলোর কোথাও কোথাও টানা বৃষ্টিপাতে ভুমিধসের শঙ্কা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় আবারও বাড়তে শুরু করেছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের নদ-নদীর পানি। এরই মধ্যে নি¤œাঞ্চলে পানি প্রবেশ করে অনেক এলাকা পুরোপুরি ডুবে গেছে। গতকাল সোমবার সকালে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করে বলে জানিয়েছে সিলেট পাউবো। আবার পাহাড়ি ঢলের কারণে পানি যাদুকাটা নদী হয়ে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুরের একটি অংশ প্লাবিত করেছে। ফলে খেয়া নৌকা ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা।

আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে এ অঞ্চলে ভারী বর্ষণের সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, রোববার বিকাল ৪টা থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগের ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টি) থেকে অতি ভারী (২৪ ঘণ্টায় ৮৯ মিলিমিটারের ওপরে) বৃষ্টি হতে পারে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো: সজীব হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার তিন ঘণ্টায় ৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরো ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৭ ঘণ্টায় সিলেটে ১০৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ ছাড়া ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি রয়েছে বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার উপরে। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হয়েছে ১৮৬ মিলিমিটার। এ দিকে সারা রাত সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হওয়ায় উজানের পানিতে সীমান্তের নিচু সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

একটি মাত্র নদী ব্যতীত দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থার সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে সিলেট বিভাগে। এই বিভাগের নদীগুলো ইতোমধ্যে ভরে গেছে। অন্যদিকে রংপুর বিভাগে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কিছু কিছু এলাকায় বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে আগামী বুধবার থেকে। সব মিলিয়ে সামনের এক সপ্তাহ দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদী তীরবর্তী মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না।
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদফরের তথ্য অনুসারে গত শনিবার সকাল থেকে গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পর্বত এলাকায় ৮০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের উজানে ভারতীয় এলাকায় হওয়া বৃষ্টির পুরো পানিটাই নেত্রকোনা, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার নদীগুলো দিয়ে নিচে নেমে আসবে। কানাডা প্রবাসী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, গতকাল সোমবার সারা দিনে উজানে ৩০০ থেকে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস ছিল। এত পানি নিচে নেমে আসলে নদীগুলো উপচে দুই তীরে প্রবল বন্যা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী ৩ দিন ব্রহ্মপুত্র-যমনা, গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেটের বর্তমান বন্যাপরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে সিলেট ও ভারতে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। উজানের পাহাড়ি ঢলও আসছে। তাই রোববার সকাল থেকে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। গতকাল সোমবার পানি আরো বেড়েছে। দেখা দিয়েছে, ফের বন্যার আশঙ্কা। পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, বিপদসীমা ছাড়িয়ে সুরমা নদীর পানি ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রও সতর্কবার্তায় জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানির সমতল স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানির সমতল বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী এবং আগামী ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে এ সময় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নদীগুলোর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। একই সাথে আগামী ৭২ ঘণ্টায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, পুরাতন-সুরমা, সারিগোয়াইন নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
অপর দিকে বৃষ্টি নিয়ে নতুন বার্তা দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। দেশের বিভিন্ন এলাকায় টানা আট দিন অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে জানানো হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে আবহাওয়া অধিদফতরের এক কর্মকর্তা এমন তথ্য জানিয়েছেন। আবহাওয়া অফিস থেকে বলা হয়েছে, সারা দেশে আগামী ৫ জুলাই পর্যন্ত অতি বৃষ্টি হতে পারে। একই সাথে বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের চেল্লাখালী নদীর পানি বিপদসীমার ২৪৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সাথে বেড়েছে মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই, মৃগী ও পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, গেল ২৪ ঘণ্টায় শেরপুরে ৩০৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে শেরপুরসহ আশপাশের এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। চলমান পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার সীমান্তবর্তী শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শেরপুর সদর উপজেলায় বন্যার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে পাহাড়ি ঢলের প্রবল স্রোতে ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদীর কাঁচা বাঁধের কয়েকটি স্থানে ভাঙনের ফলে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় কলা চাষি ও মাছ চাষিরা দুশ্চিন্তায় রয়েছে। ইতোমধ্যে ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ীতে জমিতে উঠতে শুরু করেছে ঢলের পানি।
এদিকে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সাঙ্গু নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে আতঙ্কে দিন কাটছে নদীতীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের। এরই মধ্যে নিজেদের আবাসস্থল থেকে গবাদি পশু সরিয়ে উঁচু স্থানে নিয়েছেন অনেকে। দিনের বেলায় যেমন তেমন হলেও বৃষ্টির কারণে রাতের বেলায় অনেকটা নির্ঘুম সময় কাটে সাঙ্গু তীরের মানুষের। স্থানীয়রা জানান, গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যার কথা এখনো ভুলতে পারেননি তারা। টানা বৃষ্টিপাতে এখন নতুন করে চিন্তায় আছেন। এর মধ্যে টানা ৭২ ঘণ্টার বৃষ্টি তাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যাবেন। বান্দরবান আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মণ্ডল জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আগামী আরো কয়েক দিন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টিপাতের কারণে সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে, পাহাড় ধসের শঙ্কাও আছে।

আবারো ডুবছে সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, পাহাড়ি ঢল আর বর্ষণে আবারো সুনামগঞ্জ প্লাবিত হয়েছে। সুরমা, যাদুকাটা, কুশিয়ারা, বৌলাই, ধনু, রক্তিসহ সব নদ-নদীর পানি বাড়ছেই। গতকাল বিকেলে সুরমার পানি বিপদসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, ধর্মাপাশাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল। ডুবেছে হাটবাজার ও গ্রামীণ সড়ক। জেলা শহরের সাথে তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পাহাড়ি ঢলে ডুবছে ঘরবাড়ি, হাটবাজার, রাস্তা-ঘাট। এতে আবারো বন্যার গ্যাঁড়াকলে পড়েছেন সুনামগঞ্জবাসী।
এ দিকে, জেলা শহর ও শহরতলীর আশপাশ এলাকার বন্যার পানি আবারো বাড়ছে। গত শুক্রবার থেকে ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় এমন উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জুলাই মাসের প্রথম দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা, কুশিয়ারা, কালনীসহ বিভিন্ন নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যাদুকাটা নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডুবে গেছে তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক, জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খলা-কৈয়ারকান্দা সড়ক।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ঢলের কারণে রোববার থেকেই সোমবার দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জের বাকি সবগুলো নদনদীর পানিই বাড়ছে। এ দিকে টানা কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পৌর শহরের উত্তর আরপিননগর, সাহেববাড়ি ঘাট, পুরানপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকার রাস্তাঘাট। এমনকি ঢলের পানিতে বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ-তাহিরপুর, সুনামগঞ্জ-সাচনাবাজার সড়কের প্রায় জায়গায়ই ডুবতে শুরু করেছে। এতে জেলা শহরের সাথে তাহিরপুর-জামালগঞ্জ উপজেলার সরাসরি সড়ক পথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। অপর দিকে ছাতক, দোয়ারাবাজার, মধ্যনগরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় আবারো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নিম্নাঞ্চলের লাখো মানুষ। পর দুইবার পানি বাড়ায় নাজেহাল হয়ে পড়েছে নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের জীবন।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, তাহিরপুর সীমান্ত এলাকার নদ নদীর পানি বাড়ছে। ভাটির দিকে বৃদ্ধি পাওয়ার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার সীমান্ত এলাকার সড়ক, তাহিরপুর-বাদাঘাট সড়ক, আনোয়ারপুর সড়ক ও পাশের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা শক্তিয়ারখলা সড়কে ভাঙন ধরেছে। শক্তিয়ার-খলা কৈয়ারকান্দা সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ জেলা শহরের সাথে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় নৌকায় চলাচল করছে মানুষজন।
তাহিরপুর বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সেলিম আখঞ্জি ও সাধারণ সম্পাদক পারভেজ জামান জানান, সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় জেলায় যেতে নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে মধ্যনগর, ধর্মপাশা, তাহিরপুর উপজেলার বাসিন্দারা।

সিলেটে ৩ নদীর পানি বিপদসীমার উপরে
সিলেট ব্যুরো জানায়, এক মাসের মধ্যে দুইবার বন্যার পর আবারো ভারতের মেঘালয়ে অতিবৃষ্টির প্রভাবে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। সিলেট ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ভারী বর্ষণের কারণে ফের বিপদসীমার উপরে তিন নদীর পানি। সোমবার সকালে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেলেও বেলা ৩টায় কুশিয়ারা ও সারি নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ের প্রবাহিত হচ্ছে। এরমধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ১০২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারা নদীর পানি ২৮ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৮৮ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এ দিকে সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১৫৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো: সজীব হোসাইন নয়া দিগন্তকে বলেন, সোমবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যন্ত ১৫৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরআগে গত ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত ছিল ৩৯ দশমিক ৬ মিলিমিটার।

বান্দরবানে নৌকা উল্টে ২ শিশু নিখোঁজ
বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে ইঞ্জিনচালিত নৌকা উল্টে দুই শিশু শিক্ষার্থী নিখোঁজ হয়েছে। গতকাল দুপুরে থানচি উপজেলা সাঙ্গু নদীপথের পদ্মমুখ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। টিমংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী শান্তি রাণী ত্রিপুরা ও একই স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফুলবানি ত্রিপুরা। স্থানীয়রা জানান, দুপুরে নৌকাটি হরিশচন্দ্র ত্রিপুরাপাড়া থেকে থানচি বাজারে আসার পথে সাঙ্গু নদীর পদ্ম মুখ এলাকায় প্রচণ্ড পানির স্রোতে ইঞ্জিনচালিত বোটটি উল্টে যায়। এ সময় নৌকায় থাকা অন্যান্যরা সাঁতরিয়ে তীরে উঠতে পারলেও দুই শিশু শিক্ষার্থী পানিতে ডুবে নিখোঁজ হয়। থানচি দমকল বাহিনীর স্টেশন মাস্টার তরুণ বড়ুয়া জানিয়েছেন তারা দেরিতে খবর পেয়েছেন এবং নদীর পানি প্রবল গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় নিখোঁজদের উদ্ধারে সেখানে যাওয়া যায়নি। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে তারা সেখানে উদ্ধার অভিযানে যাবেন। এ দিকে টানা প্রবল বর্ষণে বান্দরবানের সাঙ্গু মাতামুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। বান্দরবান থানচি রুমা সড়কের বেশ কয়েকটি জায়গায় পাহাড় ধসে পড়ে যান চলাচল বিঘিœত হচ্ছে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় শহরে সতর্কতামূলক মাইকিং করা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement