০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫
`
আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব

রেমিট্যান্স ৫ বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ : প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ

-

বিদায়ী অর্থবছরে (২০২৩-২৪) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের চেয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। এ রেমিট্যান্স গত ৫ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডলার সঙ্কটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শেষ তিন মাসে রেমিট্যান্স আহরণে অনেকটা ছাড় দিয়েছিল। নির্ধারিত দরের চেয়ে বাড়তি দামে রেমিট্যান্স আহরণের সুযোগ পায়। এর ওপর বিদায়ী মাস জুনে ছিল ঈদুল আজহা। এ কারণে বিদেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীরা দেশে থাকা আত্মীয়-পরিজনের কাছে বাড়তি অর্থ পাঠায়। আর এ সুবাদে বিদায়ী মাস জুনে বছরের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে ২৫৪ কোটি ডলার। আর এ সুবাদেই রেমিট্যান্স ২৩ বিলিয়নের ঘর অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে।
জানা গেছে, দেশে দীর্ঘ দিন যাবত ডলার সঙ্কট রয়েছে। এ সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা উদ্যোগ গ্রাহণ করা হয়। প্রথমে পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ি করা হয়। নিরুৎসাহিত করা হয় বিলাসজাত পণ্য আমদানিতে। শতভাগ মার্জিন দিয়ে পণ্য আমদানি করতে বলা হয় ব্যাংকগুলোকে। এতে আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। কিন্তু এর পরেও ডলার সঙ্কট কাটছে না। সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হয়। আমদানি ব্যয় মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে থাকে। প্রথমে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে কিছু ডলার বিক্রি করলেও পরবর্তীতে শুধু সরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে বিশেষ কেনকাটার ব্যয় মেটাতে ডলার সরবরাহ করতে থাকে। এতে প্রতি মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এক বিলিয়ন করে কমতে থাকে। সর্বশেষ আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার প্রকৃত রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে আসে। এমনি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলারের সরবরাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই অংশ হিসেবে আইএমএফের পরামর্শে ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি রেমিট্যান্স আহরণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অনেকটা নমনীয় হয়।

এর অন্যতম কারণ হিসেবে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে আন্তঃব্যাংকে ডলারের যে দাম নির্ধারণ করা হতো তাই বাস্তবায়নের জন্য চাপ প্রয়োগ করা হতো। অর্থাৎ ঘোষিত দরের চেয়ে বাড়তি দামে রেমিট্যান্স আহরণ করা হলে ব্যাংকগুলোকে শোকজসহ জরিমানা করা হতো। কিছু কিছু ব্যাংক ঘোষিত দরের চেয়ে বাড়তি দামে রেমিট্যান্স আহরণ করছিল। যেমন, ঘোষিত দাম ছিল ১০৭ টাকা। কিন্তু ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স আহরণ করতে ছিল ১১৩ টাকা পর্যন্ত। কিন্তু এতে অনেক ব্যাংকই কাক্সিক্ষত হারে ডলার সংগ্রহ করতে পারতো না। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১০৭ টাকা দরে রেমিট্যান্স আহরণ করতে বাধ্য করা হয়। আর এ জন্য অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে ১৯৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স আসলেও পরের মাস আগস্ট থেকে তা কমতে থাকে। আগস্টে আসে ১৬০ কোটি ডলার। পরের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে তা আরো কমে হয় ১৩৩ কোটি ডলার, যা বিদায়ী অর্থবছরে সর্বনি¤œ। এ বিষয়ে নানা দিক থেকে হই চই শুরু হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আবারো কিছুটা নমনীয় হয়। ব্যাংকগুলোতে তদারকি কিছুটা কমিয়ে দেয়া হয়। ফলে আবারো কিছু কিছু ব্যাংক ঘোষিত দরের চেয়ে বেশি মূল্যে রেমিট্যান্স আহরণ করতে থাকে। ফলে আক্টোবর থেকে আবারো রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। অক্টোবরে রেমিট্যান্স আসে প্রায় ২০০ কোটি ডলার, যা আগের মাস অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে ছিল ১৩৩ কোটি ডলার। এর পর থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তেই থাকে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরেও একই পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে। জানুয়ারির পর থেকে ২ বিলিয়ন অর্থাৎ ২০০ কোটি ডলারের ওপরে রেমিট্যান্স আসতে থাকে। মাঝে মার্চ মাস বাদে এপ্রিল পর্যন্ত ২ বিলিয়নের ওপরে রেমিট্যান্স আসে। ডলারের দাম ১১৭ টাকা উঠে যাওয়ায় রেমিট্যান্সের ডলার কোনো কোনো ব্যাংক ১২৩ টাকা পর্যন্ত আহরণ করতে থাকে। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যায়। আর এ সুবাদে গত মে মাসে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলার। আর একই ধারবাহিকতায় অর্থবছরের শেষ মাস জুনে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২৫৪ কোটি ডলার, যা একক মাস হিসেবে অর্থবছরের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রবাসীরা বৈধ পথে বেশি হারে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। তবে, আইএমএফ থেকে সম্প্রতি রেমিট্যান্সের ওপর দেয়া আড়াই শতাংশ প্রণোদনা তুলে দেয়ার সুপারিশ করেছে সরকারের কাছে। ঋণ দেয়ার শর্ত হিসেবে এ পরামর্শ দেয়া হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে। এতে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম আবারো কমে যেতে পারে। আর ডলারের দাম কমে গেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ আবারো কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। প্রণোদনা তুলে দেয়ার আগে আরো ইচিবাচক বিবেচনায় নেয়ার জন্য ব্যাংকাররা সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন।


আরো সংবাদ



premium cement