০৪ জুলাই ২০২৪, ২০ আষাঢ় ১৪৩১, ২৭ জিলহজ ১৪৪৫
`

কোটার বিরোধিতায় সরব শিক্ষার্থীরা আজ থেকে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

কোটা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল শিক্ষার্থীদের সমাবেশ : নয়া দিগন্ত -

 


মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের মাসখানেক পর লাগাতার আন্দোলনের দিকে এগোচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।
২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী গতকাল সোমবার বিক্ষোভ দেখিয়ে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
একই দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে।
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, গ্রীষ্মকালীন ও ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই কোটা পুনর্বহাল সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে রাজপথে বিক্ষোভ শুরু করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়িয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থী’ ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচিটি পালিত হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলে চার দফা দাবি পেশ করে।

দাবিগুলো হলো : ১) ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা (২) পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যতীত)। (৩) সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া। (৪) দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বিক্ষোভ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী শারজিস ইসলাম বলেন, আমাদের আন্দোলন মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নয়। তারা জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান। বাংলাদেশ গঠনে তারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাদের অবদান আমরা অস্বীকার করি না। কিন্তু তাদের সন্তান, উত্তরসূরিরা বৈষম্যমূলকভাবে সুবিধা ভোগ করবে এটা মেনে নেয়া যায় না। রাষ্ট্রটি বংশানুক্রমিক নয়। সাংবিধানিকভাবে প্রত্যেক নাগরিকের সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আজও আমাদের বৈষম্য শিকার হতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আন্দোলনের তোপে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। সংসদে কোটা বাতিলে পরিপত্র ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু আজ তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন হাইকোর্ট এ সিদ্ধান্ত রহিত করে রায় জারি করেন কিভাবে?। আমরা চাই কোর্টের রায় আপিলের খেলা বন্ধ করে যেন দ্রুতই পরিপত্র বহাল ঘোষণা দেয়া হয়। সেটা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কঠোর থেকে কঠোরতম আন্দোলনে যাবো।

কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীরা জানান, আজ মঙ্গলবার বেলা ২টায় রাজু ভাস্কর্যে আবার বিক্ষোভ করবে তারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : গতকাল সোমবার দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী কলা ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের সামনে এসে সমাবেশে পরিণত হয়।
শিক্ষার্থীদের হাতে নানা স্লোগানের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়, যার মধ্যে আছে-‘আঠারোর হাতিয়ার, জেগে উঠো আরেকবার’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথায় কবর দে’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘শেখ হাসিনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’।

সমাবেশে বাংলা বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেন মুন্না বলেন, ‘২০১৮ সালে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সেসময় কোটাপদ্ধতি বাতিল করে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে হাইকোর্ট সেই কোটা পুনর্বহাল করেছেন, হাইকোর্টের রায়কে আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।’
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জসীম উদ্দিন বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোটা নয়, বরং মেধাকে যাচাই করে চাকরি নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো আমাদের দেশেও কোটা আধুনিকায়ন করতে হবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : একদল শিক্ষার্থী কোটাপদ্ধতি বাতিলসহ চার দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।
সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে ছাত্র সমাবেশ করে শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে। ১০ মিনিট অবরোধ শেষে সড়ক ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের চার দাবির মধ্যে রয়েছে- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। পরিপত্র বহালসাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটাসুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

আন্দোলনরত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নামে কোটা চালু করে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও তারা কোনো প্রকার বৈষয়িক লাভের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করেননি। ‘মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননাকর এই কোটাব্যবস্থা চাই না। এই মহান সংগ্রামে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলমান থাকবে।’
আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের জাহিদুল ইমন বলেন, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই অসাম্য রায়ের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement