হাতেগোনা কয়েকজন দুর্নীতি করে, বাকি সবাই বিব্রত হয়
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০২ জুলাই ২০২৪, ০১:৪৪
প্রশাসনের হাতেগোনা কয়েকজন কর্মকর্তা দুর্নীতি করে, আর বাকি সবাই বিব্রত হয় বলে মন্তব্য করেছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ইদানীং সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমি জানি না, একটা বিষয় আপনারা আমার সঙ্গে স্বীকার করবেন কি না, দুর্নীতি তো সবাই করে না। একটা অফিসের সবাই কি দুর্নীতিবাজ? হাতেগোনা কয়েকজন করে, ওই কয়েকজনের জন্য বাকি সবাই বিব্রত হয়। অবস্থা তো তাই দাঁড়িয়েছে, তাই না? তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অবস্থানটা পরিষ্কার হয়েছে যে, দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদের বিষয়ে কোনো সহানুভূতি দেখানো হবে না এবং দেখানো হচ্ছে না। এটা আপনারা খেয়াল করেছেন। সেটি আমরা এখন অনুসরণ করছি। সেটিই আমরা এখন সিরিয়াসলি ফলো করছি। ‘তাহলে আপনি বলতে পারেন ফাঁকে ফাঁকে কেন (দুর্নীতি) হচ্ছে। দুর্নীতিটা এত কাঠামোর মধ্যে থাকার পরও হচ্ছে। এটা সব সমাজে সব জায়গায় হয়। যাদের দুষ্ট চিন্তার মানসিকতা, যাদের দুষ্ট বুদ্ধির মানসিকতা, তারা এই (দুর্নীতি) কাজগুলো করতে চান। আমরা এটুকু দেখতে পাচ্ছি। যখনই এ বিষয়টি সরকারের নজরে আসে, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রশ্রয় দেয়া হয় না।’
একজন সাবেক আমলা বলেছেন, মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো দুর্নীতির দেরাজ খুলে বসেছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রণালয়ের সচিবরা এ বিষয়ে ভালো উত্তর দিতে পারবেন।
তিনি বলেন, কোনো একটা জায়গায় দুর্নীতি প্রমাণিত হয়েছে, কিন্তু ছেড়ে দেয়া হয়েছে, এমন কোনো তথ্য আমার কাছে নেই। এমন কোনো বিষয় থাকলে আমার নজরে আনেন। আমি আবার তদন্তের ব্যবস্থা করব। সেটি আমি আপনাদের বলতে পারি।
সরকারি কর্মচারীদের পাঁচ বছর পরপর সম্পদের হিসাব দেয়ায় বিধান থাকা ১৯৬৯ সালে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা এখনো কার্যকর আছে কি না? জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অ্যাকশন তারা নিয়েছে কি না? কোনো সার্কুলার দিয়েছে কি না, সেটি আমি জেনে নিই।
পদ্মা সেতু পরিচালনায় কোম্পানি হচ্ছে : পদ্মা সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকার আলাদা একটি কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি হবে শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি। এর মাধ্যমে পদ্মা সেতুর টোল আদায়সহ পরিচালনার কাজ চলবে। মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘পদ্মা ব্রিজ অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স কোম্পানি, পিএলসি’ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।
পদ্মা সেতু এখন সরকারের সেতু বিভাগের সম্পদ। সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল থেকে যে আয় হচ্ছে, তা জমা হচ্ছে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের ব্যাংক হিসাবে। এখন কোম্পানি গঠিত হলে এই সেতু পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চলে যাবে কোম্পানির অধীন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, কোম্পানি আইন অনুযায়ী এই কোম্পানি গঠন করা হচ্ছে। এই বোর্ডে থাকবেন ১৪ জন। তাঁরা জনবল কাঠামো ঠিক করবে। বোর্ডে সেতু বিভাগ, অর্থ বিভাগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন।
বর্তমানে কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে ও চীনের মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণ ও টোল আদায়ের কাজ পরিচালনা করছে। পাঁচ বছরের জন্য তাদের ৬৯৩ কোটি টাকায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা সেতু বিভাগের হয়ে টোল আদায়, সেতুর দুই প্রান্তে ওজন মাপার যন্ত্র বসানো, সেতুতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন ও আনুষঙ্গিক মেরামতের দায়িত্বে রয়েছে।
নিজের নামে ইনস্টিটিউট স্থাপনে প্রধানমন্ত্রীর ‘না’ : মাদারীপুরের শিবচরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে চায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি)। তবে প্রধানমন্ত্রী তার নামে এটি স্থাপনের বিষয়ে ‘না’ বলেছেন। ফলে প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে হচ্ছে ‘ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি’। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি আইন ২০২৪’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো: মাহবুব হোসেন বলেন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ থেকে উপস্থাপিত শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (শিফট) আইন-২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের জন্য আজকের সভায় উপস্থাপিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই বললেন এটি তার নামে হবে না। এটি থেকে শেখ হাসিনা নাম বাদ দিয়ে ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি আইন-২০২৪ এই নামে অনুমোদিত হয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে স্বচ্ছতার সাথে বাজেট বাস্তবায়নের নির্দেশ : মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে যতœ ও স্বচ্ছতার সাথে পাস হওয়া নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেট বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গতকাল বাজেট পাস হয়েছে, আজ প্রধানমন্ত্রী সবাইকে একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। সবাই যাতে যত্নের সাথে, নজরদারির সাথে যাতে বাজেট বাস্তবায়ন করেন। দ্রুততার সাথে, নিপুণতার সাথে, স্বচ্ছতার সাথে যাতে বাজেট বাস্তবায়ন হয়, সেই বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রী ও সচিব সবাইকে বলেছেন- এদিকে সবাই যাতে আমরা মনোনিবেশ করি। বাজেট সঠিকভাবে বাস্তবায়নে যাতে আমরা সবাই মনোনিবেশ করি।
রফতানি নীতি ২০২৪-২৭ এর খসড়া অনুমোদন : রফতানি নীতি ২০২৪-২৭ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। তিন বছর মেয়াদি এ রফতানি নীতিতে ওষুধ, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি, হস্তশিল্পজাত পণ্য, সফটওয়্যার এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস রফতানিতে জোর দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটা প্রস্তাব ছিল। প্রতি তিন বছর অন্তর রফতানি নীতি পরিবর্তন করা হয়। এ বছর ছোটখাটো কিছু অবজারভেশন ছিল। সেগুলো অনুমোদন পেয়েছে। এবারের নীতিতে নারী রফতানিকারকদের বিশেষ কিছু সুযোগ-সুবিধা দেয়ার নীতিগত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইলেকট্রনিক ডিভাইস রফতানির ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ওষুধ, মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট এবং হস্তশিল্পজাত পণ্য রফতানিতে যাতে বিশেষ যতœ পায় সে নির্দেশনা দিয়েছেন। সফটওয়্যার রফতানির নির্দেশনাও এসেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা