ইসরাইলকে ২০০০ পাউন্ডের ১৪ হাজার বোমা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ৩০ জুন ২০২৪, ০০:০৫
- শুজাইয়াতে অভিযানে বাস্তুচ্যুত ৬০ হাজার মানুষ
- হামাসের হামলা ৪ ইসরাইলি সেনা নিহত
গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন বিপুল পরিমাণ সামরিক রসদ ইসরাইলকে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে তারা জানিয়েছেন, গত অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কিছু দিন আগ পর্যন্ত অন্তত ১৪ হাজার এমকে-৮৪ বোমা দিয়েছে। ২০০০ পাউন্ডের এসব বোমাকে অত্যাধিক ধ্বংসাত্মক বলে বিবেচনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা অস্ত্রের তালিকায় আছে সাড়ে ছয় হাজার ৫০০ পাউন্ড বোমা, তিন হাজার হেলফায়ার প্রিসিশন গাইডেড এয়ার-টু-গ্রাউন্ড ক্ষেপণাস্ত্র, এক হাজার বাঙ্কার-ব্লাস্টার বোমা, ছোট ব্যাসের এয়ার-ড্রপড দুই হাজার ৬০০ বোমা এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্র। ওই কর্মকর্তারা নিজদের নাম প্রকাশ করতে চাননি।
রয়টার্স লিখেছে, অস্ত্রের চালান পাঠানোর সময় সম্পর্কে তারা স্পষ্ট ধারণা না দিলেও মোট অস্ত্রের পরিমাণ দেখে বোঝাই যায় যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রকে অস্ত্র সরবরাহ তেমন কমায়নি। তার মানে অস্ত্র সরবরাহ সীমিত করার আন্তর্জাতিক আহ্বান এবং শক্তিশালী বোমা না পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজায় গত আট মাসের অভিযানে ব্যবহৃত অস্ত্রের সরবরাহ পূরণ করতে যা প্রয়োজন তার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রের চালান সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অস্ত্র বিশেষজ্ঞ টম কারাকো বলেন, “যদিও এই সংখ্যক (অস্ত্র) একটি বড় সঙ্ঘাতে তুলনামূলকভাবে কম সময়ে খরচ হতে পারে, তবে এই তালিকা আমাদের ইসরাইলি মিত্রদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের স্পষ্ট প্রতিফলন দেখাচ্ছে।” হামাস বা হিজবুল্লাহর সাথে সঙ্ঘাতে ইসরাইল যাতে ব্যবহার করতে পারে- এমন অস্ত্রই তালিকায় দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। রয়টার্স লিখেছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরাইলে পাঠানো সামরিক রসদের এতো বিস্তৃত ও হালনাগাদ তথ্য এর আগে প্রকাশ হয়নি। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইল এবং ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহর মধ্যে গোলাগুলি চলে আসছে। যেকোনো সময় তাদের মধ্যে যুদ্ধ বাধতে পারে বলেও উদ্বেগ আছে।
অস্ত্র সরবরাহের বিষয়ে হোয়াইট হাউজ কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ওয়াশিংটনে ইসরাইলি দূতাবাসের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তারা সাড়া দেননি। যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন, গাজাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অস্ত্রের বড় তালিকার অংশ হিসেবে এসব চালান পাঠানো হয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরাইলকে ৬৫০ কোটি ডলারের নিরাপত্তা সহায়তা দিয়েছে ওয়াশিংটন। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুদ্ধে ফিলিস্তিনি নিহতের সংখ্যা ৩৭ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়ায় এবং ওই ভূখণ্ড ধ্বংসস্তূপে পরিণত করায় ইসরাইলের সামরিক অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি আরো জোরাল হয়েছে। ওয়াশিংটন তার দীর্ঘদিনের মিত্র ইসরাইলকে বছরে ৩৮০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেয়। বাইডেন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইসরাইল যদি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে এবং গাজায় আরো মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি না দেয় তবে সামরিক সহায়তায় যেমন শর্ত আরোপ করবেন, তেমনই মে মাসে স্থগিত হওয়া চালানও ছাড় করবেন না।
হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইসরাইলের প্রতি বাইডেনের সমর্থনকে রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে তরুণ ডেমোক্র্যাটদের কাছে; কারণ তিনি এই বছর ফের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন। এই সমর্থনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইউক্রেনকে দেয়া সামরিক রসদের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করলেও ইসরাইলকে দেয়া মার্কিন অস্ত্র ও যুদ্ধাস্ত্রের বিষয়ে খুব কম তথ্যই প্রকাশ পেয়েছে।
অস্ত্রের চালানগুলো শনাক্ত করাও কঠিন, কারণ কয়েক বছর আগে কংগ্রেস অনুমোদিত বিক্রির অস্ত্রও এখন সেখানে পাঠানো হচ্ছে। এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পেন্টাগনের নিজস্ব মজুদে পর্যাপ্ত পরিমাণ অস্ত্র রয়েছে এবং বোয়িং, জেনারেল ডায়ানামিকসের মতো অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানির সাথে যোগাযোগ রেখে চলছেন।
শুজাইয়াতে পালাল ৬০ হাজার বাসিন্দা : জাতিসঙ্ঘের মানবিক কার্যক্রম বিষয়ক সমন্বয় দফতরের (ওসিএইচএ) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বৃহস্পতিবার গাজার শুজাইয়া এলাকায় স্থল অভিযান শুরুর পর গাজা শহরের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের ৬০ হাজার থেকে ৮০ হাজার বাসিন্দা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। সাধারণ জনগণকে অবিলম্বে শুজাইয়া এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।
চার ইসরাইলি সেনা নিহত : ইসরাইলের ব্যবহৃত অস্ত্র দিয়েই ইসরাইলি সেনাদের ওপর হামলা চালিয়েছে গাজায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের আল-কুদস ব্রিগেডের যোদ্ধারা। এ হামলায় চার ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরো পাঁচ সেনা। গাজার শুজাইয়া এলাকায় ইসরাইলের স্থল অভিযানের পর এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার এক বিবৃতিতে, ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখা আল-কুদস ব্রিগেড জানায় যে, তারা শুজাইয়ার একটি আবাসিক ভবন বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়েছে, এতে চার ইসরাইলি সৈন্য নিহত এবং পাঁচজন আহত হয়েছে। তারা জানায়, হামলায় ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছিল। ইসরাইলের অবিস্ফোরিত এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরাইলি যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়ার পরে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল। তারা আরো জানায় অ্যান্টি-ট্যাংক রকেট এবং ছোট অস্ত্র দিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর ওপর হামলা চালায় তারা।
ফিলিস্তিনিদের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনসহ নানা কারণে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় দেয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে রুশ ফেডারেশনের অংশ চেচনিয়া প্রজাতন্ত্র। রাশিয়ার মুসলিমপ্রধান এই প্রজাতন্ত্রের নেতা রমজান কাদিরভ এ ঘোষণা দিয়েছিলেন গত বছরের নভেম্বরে। এরই ধারাবাহিকতায় বাস্তুচ্যুত দুই শতাধিক ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দেয়া হচ্ছে চেচনিয়ায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা