০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫
`

দেশবিরোধী চুক্তি আড়াল করতে নানা কাণ্ড সামনে আনা হচ্ছে : বিএনপি

প্রেস ব্রিফিং করছেন রুহুল কবির রিজভী : নয়া দিগন্ত -


দেশবিরোধী চুক্তি আড়াল করতেই ছাগলকাণ্ড, বেনজীরকাণ্ড, আজিজকাণ্ড, হেলিকপ্টারে আসামি গ্রেফতারকাণ্ড সামনে আনা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
রিজভী বলেন, ‘একজন ডিক্টেটরের হুকুমে দেশ চলছে বলেই জনগণ আজ ত্যাজ্য, প্রত্যাখ্যাত ও নিজ দেশে পরবাসী হতে চলেছে। দেশে প্রাণভরে কেউ শ্বাস গ্রহণ করতে পারছে না। তবে জনগণ চূড়ান্ত বাধা টপকিয়ে বাংলাদেশকে কারো আশ্রিত রাজ্য বানাতে দেবে না।’
গতকাল শুক্রবার বিকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, যারা ভারত বিরোধিতার ইস্যু খুঁজছেন, তারা আবারো ভুল পথে যাচ্ছে। ওবায়দুল কাদেরের কথায় ধরে নিতে হবে আমাদের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করে কেউ বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে স্থাপনা করে যাবে তারপরও এর বিরোধিতা করলে সেটি ভুল পথ হবে, এ ধরনের কথা কেবল নতজানু, জনগণের ক্ষমতা ছিনতাইকারী দেশদ্রোহীদের মুখেই সাজে।’

তিনি বলেন, ‘জনগণের সম্মতি ব্যতিরেকে চিকেননেককে বাইপাস করে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারত রেলপথ নির্মাণ করবে আর সেটি চুপ করে দেখা হবে ৭১’র শহীদদের রক্তকে অসম্মান করার শামিল। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেলপথ বসানোর চুক্তি করে শেখ হাসিনা স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লক্ষ মা-বোনের নির্যাতনের সাথে বেঈমানি করছেন। বাংলাদেশের সীমান্ত রক্তে ভেজা, ভারত থেকে বয়ে আসা বাংলাদেশের নদীগুলো ঊষর মরুভূমিতে পরিণত হওয়া, চরম বাণিজ্য ঘাটতির পটভূমিতে বাংলাদেশের বুক চিরে রেললাইন বসিয়ে ভারতের সামরিক ও বেসামরিক পণ্য পরিবহনের সুযোগে বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যে শনিরদশা ডেকে আনা হবে।’

বিএনপির এই মুখপাত্র আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা রক্ষা এবং নিজস্ব শক্তির ওপর নির্ভরশীল থাকতে পারবে না। এমনিতেই আমাদের দেশের জনগণের এনআইডির সব তথ্য ভারতকে জানানো হয়েছে। ভারত সবসময় বিগব্রাদারসুলভ গরিমা থেকে বাংলাদেশকে বিবেচনা করে।’
বিএনপির এই সিনিয়র নেতার অভিযোগ, ৭ জানুয়ারি একতরফা ডামি নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে বৈধতা দিয়েছে ভারত, তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিনিময়ে ভারতকে সব উজাড় করে দিতে কুণ্ঠিত হচ্ছেন না। জনগণ মনে করে, দেশে দুর্নীতির মহামারী, লুণ্ঠন আর কুৎসিত অনাচারের নানা রং-বেরঙের কাহিনী এখন মানুষের মুখে-মুখে। আর এ সব অপকর্মে জড়িতরা প্রায় সবাই ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ। এসব ঘটনা ফাঁস হওয়ায় সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা বেসামাল হয়ে পড়েছেন। ভারসাম্যহীন কথাবার্তা বলছেন। একদিকে বলছেন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রচার ষড়যন্ত্রের অংশ, আবার অন্যদিকে বলছেন অভিযোগ সত্য। এ কথার কী অর্থ হতে পারে তা আমার জানা নেই। অভিযোগ সত্য হলে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে প্রচার ষড়যন্ত্রের অংশ হবে কেন? এরা বিভ্রান্তিতে ভুগছেন, কারণ এই দখলদার আওয়ামী সরকারের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারাই ছিল ডামি সরকারকে টিকিয়ে রাখার বিশ্বস্ত সৈনিক। অবৈধ একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে এসব কর্মকর্তাই ভোটারদের নতজানু রাখতে রীতিমতো ব্লাড-স্পোর্ট বা রক্ত খেলায় মেতেছিল। এরা জনগণকে নতজানু রাখতে যথেচ্ছাচার রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করেছে। এরাই ডেলিবারেট কিলিং করেছে, নিয়ন্ত্রণহীন হত্যাকাণ্ডের জন্য নিজ বাহিনীর সদস্যদের কেন সক্রিয় হচ্ছে না সেই জন্য ভর্ৎসনা করেছে। গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে উগ্রতা এবং বন্দুকের ভয় দেখিয়ে নীরব রাখার চেষ্টা করেছে। সেজন্যই মন্ত্রী-এমপিরা তালগোল পাকিয়ে স্ব-বিরোধী বক্তব্য রাখছেন।’

বিএনপির আগামীকালের সমাবেশ সফল করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের প্রতীক, ‘‘গণতন্ত্রের মা’’ স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার এক নিরবচ্ছিন্ন অঙ্গীকারাবদ্ধ নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে শনিবার নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ২টা থেকে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হবে। ইতোমধ্যে আমরা সমাবেশের জন্য পুলিশ কমিশনারের দফতরে চিঠি প্রেরণ করেছি। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলও পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছে। সমাবেশ সফল করার জন্য বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে সমন্বয়ক করে পর্যায়ক্রমে নানা প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইতোমধ্যে সমাবেশ সফল করতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি আজ একটি ঐতিহাসিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।’
বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ঢাকাবাসীসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের যথাসময়ে সমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানান রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্মমহাসচিব শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সহসম্পাদক আবদুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, মাহমুদুর রহমান সুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল ওয়াদুদ ভুইয়া, তারিকুল আলম তেনজিং, মশিউর রহমান বিপ্লব, শামসুজ্জামান মেহেদী, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement