১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ইসরাইলি ধ্বংসলীলা কল্পনার বাইরে

-

- গাজা শহরে ইসরাইল-হামাস লড়াই
- আরো এক ইসরাইলি সেনা নিহত
- স্বাস্থ কর্মীদের টার্গেট করে হত্যা করছে ইসরাইল

ইসরাইলের ধ্বংসলীলার মাত্রা কল্পনারও বাইরে। এমনটাই জানিয়েছেন, গাজা উপত্যকার দেইর আল-বালাহের আলজাজিরার সংবাদদাতা তারেক আবু আজজুম। তিনি জানান, উপত্যকাজুড়ে রাতভর তাণ্ডব চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। আজজুম বলেন, স্থলে আমাদের সূত্রগুলো বলছে যে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী মধ্য গাজায় আক্রমণ বাড়িয়েছে। আমরা এখন দেইর আল-বালাহতে আছি। এখানে দু’টি বাড়ি লক্ষ্য করে জোড়া হামলায় একটি মেয়েসহ অন্তত পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর কোনো পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই ওই দু’টি ভবনে হামলা চালানো হয়।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বুরেজ শরণার্থী শিবিরে সিভিল ডিফেন্স ক্রুদের প্রধান সদর দফতরকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে। এতে অন্তত তিনজন উদ্ধারকর্মী নিহত হয়েছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ গাজার আল-মাওয়াসি এলাকায়, বিশেষ করে রাফাহ জেলার সংলগ্ন অংশে হামলা চালিয়েছে, যেখানে বেশ কিছু হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। সেখানে, ইসরাইলি ট্যাংকের আকস্মিক প্রবেশে আতঙ্কিত কয়েক ডজন পরিবারকে আশ্রয়ের সন্ধানে দেইর আল-বালাহে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স এজেন্সি বলেছে, কেন্দ্রীয় বুরেজ শরণার্থী শিবিরে উদ্ধার অভিযান পরিচালনার সময় ইসরাইলের বিমান হামলায় তাদের তিনজন চিকিৎসক নিহত হয়েছেন এবং ১২ জন আহত হয়েছেন। তা ছাড়া আল-মাওয়াসির উপর ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে মেডিক্যাল সূত্র আলজাজিরাকে জানিয়েছে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের কাছে আল-মাওয়াসি বাস্তুচ্যুত লোকদের আশ্রয় দিয়েছে।

অন্য দিকে ইউএন এজেন্সি ফর ফিলিস্তিনি শরণার্থী (ইউএনআরডব্লিউএ) বলছে, গাজার ৬২৫,০০০ এরও বেশি শিশু অন্তত আট মাস ধরে স্কুলে যাচ্ছে না। সংস্থাটি বলেছে, তাদের মধ্যে তিন লাখ শিশু যুদ্ধের আগে ইউএনআরডব্লিউএ শিক্ষার্থী ছিল। এক্সের একটি পোস্টে (টুইটার) গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছে তারা। শিশুদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে এবং তাদের শিক্ষার অধিকার পুনরুদ্ধার করার জন্য ইউএনআরডব্লিউএ দলের সরবরাহ করা খেলাধুলা ও শিক্ষা কার্যক্রমগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে পোস্টে উল্লেখ করেছে তারা।
গাজা শহরে ইসরাইল-হামাস লড়াই : এ দিকে গাজা শহরের শেজাইয়া এলাকায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধা এবং ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে লড়াই চলছে বলে জানিয়েছে ঘটনাস্থলে কর্মরত আলজাজিরার সংবাদদাতা। তিনি বলেন, ক্রমাগত ইসরাইলি বোমা হামলার কারণে বেসামরিক প্রতিরক্ষা দল আহতদের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। আলজাজিরার খবর অনুসারে, দেইর আল-বালাহ শহরের দু’টি বাড়িতে ইসরাইলি হামলায় এক মেয়েসহ অন্তত পাঁচ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার থেকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার গাজা শহরের কাছে হামলা চালায় ইসরাইল। হামলার আগে ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ গাজায় সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয় ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। ওই অঞ্চলের রাফাহ শহরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে স্থল ও আকাশপথে হামলা চালাচ্ছে সেনারা। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী নিশ্চিত করেছে যে শহরটিতে ফিলিস্থিতি যোদ্ধাদের উপস্থিতির গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই তারা শেজাইয়া এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে। গাজা শহরের শেজাইয়ার আশপাশের বাসিন্দারা বলেছেন, বিকেলের দিকে ট্যাংক চলাচলের আওয়াজ এবং গুলির শব্দে বিস্মিত হয়েছিলেন তারা। শহরটিতে সারারাত বোমাবর্ষণের পর ড্রোন হামলাও চালিয়েছে সেনারা। যুদ্ধের প্রথম দিকে এই অঞ্চলে এ ধরনের হামলা হয়েছিল।

এ দিকে হামাসের মিত্র ইসলামিক জিহাদ জানিয়েছে, তারা গাজার আগে একটি ইসরাইলি ট্যাংকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। সশস্ত্র যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বেসামরিকদের মধ্যে লুকিয়ে থাকার অভিযোগ এনেছে ইসরাইল। এ সময় তাদের বিরুদ্ধে অভিযানের পথ থেকে বাস্তুচ্যুত মানুষদের সরে যেতে সতর্ক করেছে। শেজাইয়ার বাসিন্দা ও বাস্তুচ্যুতদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে করা একটি পোস্ট ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র আভিচায় আদ্রাই বলেছেন, ‘নিরাপত্তার জন্য আপনাদের অবিলম্বে সালাহ আল-দিন স্ট্রিটের দক্ষিণে মানবিক অঞ্চলে সরে যেতে হবে।’
ইসরাইলি সেনার মৃত্যু : অন্য দিকে গত বৃহস্পতিবার দক্ষিণ গাজায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সাথে লড়াইয়ে আরো এক সেনা নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। নিহত সেনা নাহাল ব্রিগেডের ৯৩১তম ব্যাটালিয়নের একজন ১৯ বছর বয়সী সার্জেন্ট ছিলেন। ইসরাইলের সামরিক পরিসংখ্যান মতে গত ৭ অক্টোবর থেকে কমপক্ষে গাজা যুদ্ধে ৬৬৭ সেনা নিহত এবং প্রায় ৪০০০ জন আহত হয়েছে।

প্রাণহানি বেড়ে ৩৭ হাজার ৭৬৫ : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরাইলি বর্বর হামলায় আরো প্রায় অর্ধশত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৭৬৫। এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরো ৮৬ হাজার ৪২৯ হাজার ফিলিস্তিনি। এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু। খবরে বলা হয়েছে, অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অনেক মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement