শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে না
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ জুন ২০২৪, ০১:৫৩
ভারতকে রেলপথ ট্রানজিট দেয়ার সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশকে বিক্রি করে না। যারা বিক্রির কথা বলে তারা একাত্তর সালে পাকিস্তানের দালালি করেছিল। নয়াদিল্লি সফর নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। বাসস, বাংলানিউজ, বাংলা ট্রিবিউন।
ভারতকে রেলপথ ট্রানজিট সুবিধা দেয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রেল যোগাযোগ চালুর সমালোচনা হচ্ছে কেন? জবাবে প্রশ্নকর্তা বলেন, বলা হচ্ছে ভারতের কাছে বাংলাদেশের বিক্রির ষড়যন্ত্র চলছে। শেখ হাসিনা তখন বলেন, আমার একটা প্রশ্ন আছে। বিক্রির ওজনটা কিভাবে করা হয়েছে? কোনো কিছু বিক্রি হলে তো ওজন মেপে হয়, না? এখন তো ইলেকট্রনিক মেশিন আছে। আগে দাঁড়িপাল্লায় মাপা হতো। তো কিসে মেপে বিক্রি হচ্ছে? আর বিক্রিটা হয় কিভাবে? তিনি বলেন, যারা বলে বিক্রি হয়ে যাবে তাদের মাথাই ভারতের কাছে বিক্রি করা। সামরিক শাসক জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া ওপর দিয়ে ভারতবিরোধী কথা বলেছিল আর ভেতর দিয়ে তাদের পা ধরে বসে ছিল। এগুলো আমাদের নিজের দেখা ও জানা।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ। যত ছোট হোক এটা আমাদের সার্বভৌম দেশ। সেই সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও স্বকীয়তা বজায় রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে কাজ করছি। এই যে আমরা সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা খুলে দিলাম, তাতে সবচেয়ে বেশি লাভবান আমাদের দেশের মানুষ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ট্রানজিট দিলে ক্ষতিটা কী? রেল যেগুলো বন্ধ ছিল তা আমরা আস্তে আস্তে খুলে দিয়েছি। যাতে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ হচ্ছে। মানুষ উপকৃত হচ্ছে, তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি হচ্ছে। যে সমস্ত জিনিস আমাদের দেশে নেই তা আনার সুযোগ হচ্ছে। অর্থনীতিতে এটা সুবিধা হচ্ছে। আমরা কি চার দিকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকব? সেটা হয় না। শেখ হাসিনা বলেন, ইউরোপের দিকে তাকান, সেখানে কোনো বর্ডারই নেই, তাই বলে একটা দেশ আরেকটা দেশের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে? একসময় সেখানে নো ম্যানস ল্যান্ড ছিল। এখন কিন্তু সেসব কিচ্ছু নেই। এখন সেসব উঠে গেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় কেন বাধা দিয়ে রাখব? দেশের মানুষের কথা চিন্তা করতে হবে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তন সব থেকে বেশি প্রয়োজন।
মমতা ব্যানার্জির চিঠি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার : তিস্তা নিয়ে মমতা ব্যানার্জির চিঠি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে আমার তো নাক গলানোর কোনো দরকারও নাই, কিছু বলার দরকার নাই। আমার সাথে সবার সম্পর্ক ভালো। তিনি বলেন, ‘গঙ্গা চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হবে। তবে এটা যদি নবায়ন না-ও হয় চুক্তি কিন্তু অব্যাহত থাকবে। যেহেতু চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে, ৩০ বছর মেয়াদি চুক্তি আমরা করেছিলাম, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন এবং আমরাও বলেছি, একটি টেকনিক্যাল গ্রুপ করা হবে। যেটা মমতা ব্যানার্জি বলেছেন ওটা ওনার ক্ষোভ যে ওনার সাথে আলোচনা করেনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মমতা ব্যানার্জির যে চিঠি সেটা তো ওনি লিখেছেন ওনার দেশের প্রধানমন্ত্রীকে। এটা তো তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এখানে আমার তো কিছু বলা নাই। এটা সম্পূর্ণ ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে আমার তো নাক গলানোর কোনো দরকারও নাই, কিছু বলার দরকার নাই।
সরকার জনগণের জন্য সবচেয়ে বেশি লাভজনক তিস্তা প্রস্তাব গ্রহণ করবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনা প্রকল্প বাস্তবায়নে দেশ ও জনগণের জন্য যে প্রস্তাব সবচেয়ে বেশি লাভজনক তা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা তিস্তা প্রকল্প নিয়েছি। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চীন ও ভারত আলাদা আলাদা প্রস্তাব দিয়েছে। আমাদের দেশের জনগণের জন্য কোন প্রস্তাবটি বেশি লাভজনক ও উপযোগী হবে সেটাই আমরা গ্রহণ করব।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, তিস্তা প্রকল্পের বিষয়ে চীন আমাদের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারতও দিয়েছে। আরো প্রস্তাব এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘অবশ্যই আমরা বিবেচনা করব, কোন প্রস্তাবটি গ্রহণ করলে তা আমার দেশের মানুষের কল্যাণে আসবে সেটাই আমি গ্রহণ করব।
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফরউল্লাহ, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো: নাঈমুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন।
আমার সাথে কারো দ্বন্দ্ব নেই : পুরস্কার নিয়ে আমার কোনো আকাক্সক্ষা নেই। এর জন্য লবিস্ট নিয়োগ করার টাকাও নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পর অনেক নোবেল জয়ী আমার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। ভেবে দেখেন, আমি আসার আগে কয়জন পার্বত্য চট্টগ্রাম যেতে পেরেছেন?
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, সরকার ইউনূসের বিরুদ্ধে সব যন্ত্রই ব্যবহার করেছে। এ বিষয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, প্রতিবেদনটি তিনি পড়েছেন। তিনি বলেন, আবার লিখেছে যে নোবেল প্রাইজের জন্য তার সাথে আমার... আমার সাথে কারো দ্বন্দ্ব নেই। নোবেলের জন্য আমার কোনো আকাক্সক্ষাও নেই। আর লবিস্ট রাখার মতো টাকাও নেই। আমি কখনো ওটা চাইনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার কাছে অনেকে এসেছে। আমি বলেছি, আমার ওসব পুরস্কারের দরকার নেই। আমার কোনো আকাক্সক্ষা নেই। কিন্তু বলে দিল ওটা নিয়ে আমি নাকি জেলাস।
ড. ইউনূস বিদেশে বিনিয়োগ করেছেন, সে টাকা কোথা থেকে এসেছে, সে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি এর জবাব দিক। সরকারি চাকরি করা অবস্থায় তিনি বাইরে ব্যবসা করেছেন। আইন কী বলে? এখন সব দোষ আমার। আজকে সবচেয়ে বেশি আমি যাকে দিলাম।’ তিনি আরো বলেন, ‘উনাকে জেলাস করার কী আছে। সে মাঠে আসুক। চলুক আমার সাথে। ডিবেট হয় না? আসুক, কথা বলব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনার (ইউনূস) পয়সা আছে উনি লেখাচ্ছেন। বিজ্ঞাপন দিয়ে ছাপতে হয়। তার (ইউনূস) জন্য কেউ তো আমাকে কখনো কিছু বলল না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক ইউনূসের করা না, তিনি চাকরি করতেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গ্রামীণ ব্যাংক গঠন করলে সেখানে ড. ইউনূসকে চাকরি দেয়া হয়। তখন একজন এমডি খোঁজা হয়। ইউনূসকে এমডি করা হয়। তার নিজের করা ব্যাংক না। তিনি চাকরি করতেন, বেতন তুলতেন। সরকারের সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। কিন্তু এমনভাবে প্রচার করেছেন, যেন উনারই নিজেরই করা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্রামীণফোনের ব্যবসা আমিই তাকে (ইউনূস) দিয়েছিলাম। কারণ, ব্যাংকের ক্ষতি হচ্ছিল। আমার সরকার, আমি নিজে ৪০০ কোটি টাকা গ্রামীণ ব্যাংকে দিয়ে তাকে সহায়তা করি। উনি তখন ফোনের ব্যবসার কথা বলেন। গ্রামীণফোনের টাকা তিনি গ্রামীণ ব্যাংকে দিয়েছিলেন কি না, তাকে প্রশ্ন করা উচিত। অনেক অনুদান এসেছে তার কয়টা টাকা ব্যাংকে গিয়েছে।
টাকা বিদেশে রাখতে গিয়ে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয় : দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কিছু মানুষ তো লোভী হয়ে যায়। টাকা পয়সার লোভ এত বেড়ে যায় যে দেশ রেখে বিদেশে রাখতে গিয়ে শেষে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর কেউ ভালো চালাচ্ছে। কেউ খারাপ চালাচ্ছে। অনেকে ঠিকমতো চালাতে পারেন না। এটা চিরাচরিত নিয়ম যদি কোনো ব্যাংক দুর্বল হয়ে যায় তাহলে তাকে সহযোগিতা করা। একটা ব্যাংকের সাথে আরেকটা ব্যাংককে মার্জ করে দেয়া, এটা যাতে চালু হয় ভালোভাবে। সেখানকার আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ কিন্তু সরকারের দায়িত্ব। সেটাই পালন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, তারপরও কিছু মানুষ তো লোভী হয়ে যায়। টাকা পয়সার লোভ এত বেড়ে যায় যে দেশ রেখে বিদেশে রাখতে গিয়ে শেষে দেশ ছেড়েই ভাগতে হয়। তা সেই অর্থ বানিয়ে লাভটা কী হলো?
সুইডিশ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের সহজ উত্তরণে সুইডেনের সমর্থন চেয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা এলসিডি থেকে সহজভাবে উত্তরণের জন্য সুইডেনের সমর্থন ও সহযোগিতা চাইছি। বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডিশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ভন লিন্ডে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে তার সাথে বিদায়ী সাক্ষাৎ করার সময় প্রধানমন্ত্রী এই সমর্থন কামনা করেন। জবাবে সুইডেনের দূত প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তাদেরও এ ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা