ভারতের সাথে চুক্তি দেশবিরোধী
শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ : মির্জা ফখরুল- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ জুন ২০২৪, ০১:৫৩
ভারতের সাথে সম্পাদিত ‘দেশবিরোধী’ চুক্তির প্রতিবাদে ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিত কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গত সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সম্প্রতি শেখ হাসিনা ভারত সফরে দেশটির সাথে ২টি চুক্তি, ৫টি নতুন সমঝোতা ও ৩টি চুক্তি নবায়নসহ ১০টি চুক্তি সমঝোতা স্বাক্ষর হওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
তিনি বলেন, চুক্তিগুলো বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী হওয়ায় বিএনপি এই চুক্তিগুলো প্রত্যাখ্যান করছে। আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, বিএনপির সৃষ্টি হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে। বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে আমরা ২৮ তারিখে সংবাদ সম্মেলন করব। এরপরে আমরা প্রয়োজন হলে যে কর্মসূচি নেবো সেটা আপনারা জানতে পারবেন।
বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি ও সংবিধান বিরোধী। অবৈধ সরকার তাদের ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে দেশনেত্রীকে হত্যার উদ্দেশ্যে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করছে। দলের স্থায়ী কমিটির সভায় অবিলম্বে দেশনেত্রীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয় একই সাথে তার মুক্তির আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি প্রণয়নের সিদ্ধান্ত হয়।
আন্দোলন ভারতের বিরুদ্ধে নয়, সরকারের বিরুদ্ধে : সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের কথা পরিষ্কার, আমাদের আন্দোলন কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে নয়, এটা সরকারের বিরুদ্ধে। সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে ভারতকে রিচ করতে বা তার কাছ থেকে দাবিগুলো আদায় করে নিয়ে আসতে। সরকার অভিন্ন নদীগুলোর পানির হিস্যা না পেয়ে চুক্তি সই করেছে। তিস্তার পানি আমাদের সবচেয়ে আগে দরকার কিন্তু তিস্তায় প্রকল্পের কাজ করতে চায় সরকার। কারণ প্রকল্প হলে অনেক টাকা। সেই টাকাই তাদের (সরকার) আসলে উদ্দেশ্যে।
তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখলাম, পরিষ্কার করেই মমতা ব্যানার্জি বলে দিয়েছেন যে, পশ্চিমবাংলাকে বাদ দিয়ে এটা করা যাবে না, তারা দেবে না। এ জন্য অবশ্যই চাপ প্রয়োগ করা দরকার। ফারাক্কা তো একদিনে হয়নি, যতটুকু পাওয়া গেছে সেটা আন্দোলন করেই পাওয়া গেছে। ফারাক্কার ইস্যুটি দেশে-বিদেশে-ইউনাইটেড ন্যাশনসে তোলা হয়েছিল। তিনি বলেন, এই সরকার এসব বিষয়ে (অভিন্ন নদী-তিস্তার পানির হিস্যা) জাতিসঙ্ঘে উত্থাপন করে নাই। আমরা অভিন্ন নদীর পানি পাচ্ছি না।এটা থেকে বুঝা যায় আসলে এই সরকার দেশপ্রেমিক সরকার নয়, বাংলাদশ বিরোধী একটা সরকার।
গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধার থেকে আমরা সরে যাইনি : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কোনো আন্দোলন থেকে সরে যাইনি। বিএনপি গত ১৫-১৬ বছরে যে আন্দোলন করেছে, এই আন্দোলনগুলোকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে কয়েক‘শ মানুষ প্রাণ দিয়েছে, এই আন্দোলনে ২২-২৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, ২৭ হাজার লোককে দুই দিনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ভয়াবহ সরকারের যে নিবর্তনমূলক, নির্যাতনমূলক দমননীতি এটার কারণেই হয়তোবা সাফল্য আসেনি এখন পর্যন্ত। কিন্তু কোনো দিনই ন্যায়ের পথে আন্দোলন ব্যর্থ হয় না, আমাদের এটাতেও অবশ্যই সাফল্য আসবে। তিনি বলেন, আমরা কখনো ওই আন্দোলন থেকে সরে যাইনি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন গণতন্ত্রের প্রতীক। তাকে মুক্ত করার অর্থ প্রাথমিকভাবে গণতন্ত্র মুক্ত করার মতোই। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থেকে সরে যাইনি, দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন থেকে আমরা সরে যাইনি। এটা বাস্তবতা।
এসব চুক্তিতে বাংলাদেশের লাভ কি : মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর তৈরি করা এটাতে বাংলাদেশের লাভ কি? কোথায় বলতে পারেন? সম্পূর্ণ লাভ ভারতের। এটা ভারত বিরোধিতা নয়। আমাদের প্রশ্ন আমাদের স্বার্থ নিয়ে। কানেকটিভিটি আমার স্বার্থে হতে হবে, আমার স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে হবে না। নদীর পানির ন্যায্য হিস্যাকে বাদ দিয়ে কোনো চুক্তি হবে না।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, অভিন্ন নদীর পানির ব্যাপারে কোনো কিছুই করছেন না। সীমান্তে মানুষ হত্যা করছে, কিছুই বলছেন না। আপনি কি করেছেন? চুক্তি করছেন। এই চুক্তিতে এসব বিষয়ে একটা কথাও নাই।
মির্জা ফখরুল জানান, গত ২৪ জুনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা, সীমান্ত হত্যা, কানেকটিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেলযোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা, ঔষধসংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ এবং ভারতের ইনস্পেস ও বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্রবিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতাগুলোতে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ভারতকে সর্বপ্রকার সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আদায় করতে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। এটা ম্যান্ডেটবিহীন অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির বহির্প্রকাশ। তিনি বলেন, এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের ওপর নির্ভরশীল করে ফেলেছে।
খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল : হৃৎপিণ্ডে পেসমেকার বসার পরে খালেদা জিয়ার অবস্থা ‘স্থিতিশীল’ বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কাছে বিএনপি চেয়ারপারসনের সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা জানাতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, তাকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। তিনি সিসিইউতে ব্যক্তিগতভাবে কিছুটা অ্যাডজাস্ট করতে পারেন না যেকারণে সিসিইউর ফ্যাসিলিটিজগুলো কেবিনে নিয়ে তাকে শিফট করা হয়েছে। সেখানে তিনি এখন পর্যন্ত স্ট্যাবল আছেন ।
গত রোববার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার জন্য অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সিদ্ধান্তে তার হৃৎপিণ্ডে পেসমেকার বসানো হয়। খালেদা জিয়ার হৃদরোগের সমস্যা আগে থেকেই ছিল। হার্টে তিনটি ব্লক থাকায় আগে একটা রিং পরানো হয়েছিল। পরে বিদেশী চিকিৎসক ও মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে পেসমেকার বসানো হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা