০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২২ পৌষ ১৪৩১, ৫ রজব ১৪৪৬
`
জ্বালানি খাতে গুরুত্বহীনতায় সানেমের উদ্বেগ

জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ কমেছে ১২.৯ শতাংশ

-


দেশের জ্বালানি খাতের প্রতি ধারাবাহিক গুরুত্বহীনতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। সংস্থাটি মনে করে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ কমায় বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর প্রভাব উদ্বেগের জন্ম দিচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাজেট বরাদ্দের সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলো বিশ্লেষণ করে এ তথ্য প্রকাশ করেছে সানেম।
সানেম জানায়, ৫৩তম জাতীয় বাজেটে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে যেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত মোট বাজেটের মাত্র ৩.৮ শতাংশ বরাদ্দ পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে একই খাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ৪.৬ শতাংশ, সে তুলনায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বরাদ্দে উল্লেখযোগ্যভাবে ১২. ৯ শতাংশ হ্রাস হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বাজেট বরাদ্দে উল্লেখযোগ্যহারে ওঠানামা দেখা গেছে, যার মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল সর্বোচ্চ। পরবর্তী দুই অর্থবছরে (২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১) এই খাতে বরাদ্দ যথাক্রমে ১০. ৯১ এবং ৩১.০৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে শুরু করে বরাদ্দের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে কিন্তু উল্লেখযোগ্যভাবে নয়। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বাজেটের মাত্র ৪ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আরো কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩.৬ শতাংশে।

সংস্থাটি বলছে, এই চিত্র দেশের জ্বালানি খাতের প্রতি ধারাবাহিক গুরুত্বহীনতার ইঙ্গিত দেয়।
সানেমের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গত এক বছরে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) চারবার বিদ্যুতের ট্যারিফ হার বৃদ্ধি করেছে যথাক্রমে ৫, ৫, ৫ এবং ৮. ৯ শতাংশ হারে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি এবং গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের সূচনা করা হয়েছিল বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য কিন্তু মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি প্রদানে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। বিপিডিবির একটি হিসাবে দেখা গেছে যে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে এক টাকা অবমূল্যায়ন ভর্তুকি প্রদানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে ৪৭৩.৬ কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের ফলে (১০৭.৭ প্রতি ডলার থেকে ১১৭ প্রতি ডলার) এই বছরের ভর্তুকির বোঝা বেড়ে হতে পারে ৪৪০৪.৪৮ কোটি টাকা। এই খাতে সরাসরি কর-ব্যয়ের (কর মওকুফ) শতাংশ ইতিবাচক হলেও প্রকৃত পরিমাণ গত বছরের ১১,৯৪২.১৪৭ কোটি টাকা থেকে কমে ৭,৬১১ কোটি টাকায় নেমে এসেছে, যা এই খাতের জন্য কর সুবিধার পরিমাণ হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়।

তারা বলছে, বিভিন্ন সরকারি পরিকল্পনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা থাকা সত্ত্বেও, প্রস্তাবিত বাজেটে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন ও ব্যবহার বাড়ানোর জন্য মাত্র ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দ পর্যাপ্ত নয় উল্লেখ করে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) গত বছরের তুলনায় কম বরাদ্দ (১১.১৯ কোটি) পেয়েছে যা গত বছর ছিল ১৪.৬৫ কোটি টাকা। যদিও এই বরাদ্দ গত বছরের সংশোধিত বাজেটে মাত্র ৭ কোটি টাকায় নেমে এসেছিল যা স্রেডার কার্যকারিতা ও গুরুত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন করে।
সানেম আরো জানায়, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আরো উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে সানেম জানায়, বর্তমানে ৯১৪৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার ২৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন। নতুন এলএনজি অবকাঠামো নির্মাণও প্রশ্নবিদ্ধ কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দাম অস্থিতিশীল থাকে, যা এরই মধ্যে আমাদের অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। যেহেতু উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদ্যুৎকেন্দ্র গ্যাসচালিত, জ্বালানির অপর্যাপ্ত মজুদের যে বিদ্যমান অবস্থা তাতে বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষেত্রে একটি স্থিতিশীল এবং বিকল্প জ্বালানি উৎসের বন্দোবস্ত অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে।
সানেমের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়েছে, মোট বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বাজেটে জ্বালানি খাতের বাজেট অংশ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। সানেম এই খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেছে। সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপির) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এবং জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের (ইএমআরডি) বাজেট বরাদ্দের ধারাবাহিক হ্রাস পাচ্ছে, যা পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement