গাজার ৭৫ ভাগ আবাদি জমি ধ্বংস
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৬ জুন ২০২৪, ০১:৫২
- ইসরাইলের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ গুতেরেসের
- বোনসহ পরিবারের ১০ সদস্য হারালেন হামাস প্রধান
- ৫০ দিন ধরে গাজায় কোনো সাহায্য আসেনি
অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার শতকরা ৭৫ ভাগ আবাদি জমি ধ্বংস করেছে ইসরাইল। ইউরো-মেডিটেরেনিয়ান হিউম্যান রাইটস নামের একটি সংগঠন এই তথ্য দিয়েছে। গাজায় ইসরাইলি নির্বিচার হামলা অব্যাহত রয়েছে। উত্তর গাজার শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়াহর বোনসহ পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হয়েছেন। এ দিকে প্রায় ৫০ দিন ধরে গাজায় কোনো সাহায্য প্রবেশ করেনি। আলজাজিরা, রয়টার্স ও এএফপি।
ইউরো-মেড বলেছে, গাজার ধ্বংস হওয়া এসব জমির কিছু অংশ বাফার জোনের নামে অধিগ্রহণ করেছে আর কিছু অংশ বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল। স্থানীয়ভাবে খাদ্য উৎপাদনের সব ব্যবস্থা ধ্বংস করার পর ইসরাইল গাজায় কোনো ধরনের খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা রাখেনি। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে যে সব ত্রাণ সহায়তা পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে তাতে বাধা সৃষ্টি করছে বরবর দখলদার সেনারা। গাজার ফিলিস্তিনি জনগণ যাতে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে মৃত্যুবরণ করে মূলত সেই লক্ষ্যে কাজ করছে ইসরাইল।
ইউরো-মেড আরো জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি কৃষকদেরকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে হত্যা করার ডকুমেন্ট রয়েছে তাদের হাতে। যেসব কৃষককে হত্যা করা হয়েছে তারা তাদের ক্ষেতে কাজ করছিলেন অথবা ফসলের ক্ষেতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ইউরো-মেড বলছে, তাদের কাছে এমন সব ডকুমেন্ট রয়েছে যাতে দেখা যায় ইহুদিবাদী সেনারা কৃষি খামার, গ্রিনহাউজ, পানির কূপ, পুকুর এবং অন্যান্য কৃষি সরঞ্জাম ধ্বংস করছে।
৫০ দিন ধরে কোনো সাহায্য প্রবেশ করেনি : গাজার সরকারি মিডিয়া অফিসের মহাপরিচালক ইসমাইল আল-ছাওয়াবতা বলেছেন, প্রায় ৫০ দিন ধরে গাজায় কোনো সাহায্য প্রবেশ করেনি। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, ‘দখলদার ইসরাইলি বাহিনী রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য অনাহার নীতি গ্রহণ করেছে।’ গাজায় দুর্ভিক্ষের একটি উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, কারণ উপত্যকায় ৪৯৫,০০০ এরও বেশি ফিলিস্তিনি বিপর্যয়কর খাদ্য সঙ্কটের সম্মুখীন হচ্ছে। অন্য দিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টা ইসরাইলের হামলায় আরো ৩২ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১৩৯ জন আহত হয়েছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরাইলি হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ৩৭,৬৫৮ জন নিহত এবং ৮৬,২৩৭ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া ইউএনআরডব্লিউএ’র লাজারিনি জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেছেন, গাজায় হামলার কারণে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন শিশু তাদের একটি বা উভয় পা হারাচ্ছে।
হামাস প্রধানের বোন নিহত : উত্তর গাজার শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় হামাসের রাজনৈতিক প্রধান ইসমাইল হানিয়ার বোনসহ পরিবারের ১০ সদস্য নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং উপত্যকাটির বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে। ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলি বিমান হামলায় তিন ছেলেসহ অনেক আত্মীয়স্বজনকে হারিয়েছেন হানিয়া।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে হানিয়া পরিবারের ওপর হামলা এবং নিহতের সংখ্যাটি নিশ্চিত করে হামাস। এ সময় গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ‘বিধ্বংসী’ যুদ্ধ অব্যাহত রাখার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে দায়ী করে তারা। বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এএফপিকে বলেছেন, মঙ্গলবার সকালে শাতি শরণার্থী শিবিরে হানিয়াহ পরিবারের বাড়িটি লক্ষ্য করে এই হামলা করা হয়।
বাসাল বলেছেন, ‘ইসরাইলের হামলায় হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়াহর বোন জাহর হানিয়াহসহ পরিবারের ১০ জন শহীদ হয়েছেন। সম্ভবত ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো অনেক লাশ রয়েছে। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে সেগুলো বের করার মতো ‘আমাদের প্রয়োজনীয় কোনো সরঞ্জাম নেই।’ বাসাল আরো জানিয়েছেন, লাশগুলোকে নিকটবর্তী আল-আহলি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই হামলায় ‘বেশ কয়েকজন আহত’ হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। অন্য দিকে গাজার দুটি স্কুলে বিমান হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ দিকে, ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসঙ্ঘের সংস্থার (ইউএনআরডব্লিউএ) জন্য কর্মরত অন্তত ২৭৩ জন সাহায্য কর্মী ইসরাইলের হামলায় নিহত হয়েছে।
ভুয়া তথ্য ছড়াচ্ছে ইসরাইল : গাজা যুদ্ধ ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে। গুতেরেস নিজে এই অভিযোগ তুলেছেন। সোমবার নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘের সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরাইলের নাম উল্লেখ না করে মহাসচিব বলেন, ‘একটি মহল সম্প্রতি গুজব ছড়াচ্ছে যে (গাজায় হামাস-ইসরাইলের চলমান যুদ্ধে) আমি কখনো হামাসের প্রতি ক্ষোভ বা নিন্দা জানাইনি। এমনকি এমন কথাও আমার কানে এসেছে যে আমি হামাসের সমর্থক।’ ‘কিন্তু বাস্তব সত্য হলো, গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত আমি কমপক্ষে ১০২ বার প্রকাশ্যে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে হামাসের নিন্দা জানিয়েছি। ৫১ বার জাতিসঙ্ঘের আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে এবং বাকি ৫১ বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে।’
উল্লেখ্য, ইসরাইলের জাতিসঙ্ঘ দূত গিলাদ এরদান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে হামাসের প্রতি জাতিসঙ্ঘের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিলেন। এরদান বলেছিলেন, ‘তার (গুতেরেস) একমাত্র লক্ষ্য হলো হামাসকে টিকে থাকতে সাহায্য করা। আমরা এটি নিন্দনীয় মনে করি যে সেক্রেটারি-জেনারেল জাতিসঙ্ঘের মান মেনে চলতে অস্বীকার করেন এবং সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনার বিকৃত ব্যাখ্যা দেন। অ্যান্তোনিও গুতেরেস সন্ত্রাসীদের একজন পৃষ্ঠপোষক এবং তার আজই পদত্যাগ করা উচিত।’
পানির ভয়াবহ সঙ্কটে গাজা : দুর্ভিক্ষের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে গাজা। সেখানে ৪ লাখ ৯৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ভয়াবহ খাদ্য ঘাটতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ইসরাইলি বাহিনী ভয়াবহ আগ্রাসনে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাকও সেখানে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে একদিকে খাবার নিয়ে ত্রাণবাহী গাড়ি অপেক্ষা করছে অন্যদিকে তীব্র ক্ষুধায় ছটফট করছে গাজার ছোট ছোট শিশু, নারী, পুরুষ এবং বয়স্ক লোকজন। ত্রাণসামগ্রী নিতে যাওয়া লোকজনের ওপরও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এমনকি ত্রাণবাহী গাড়ি, বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থাও হামলার শিকার হচ্ছে। ফিলিস্তিন শরণার্থীদের জন্য জাতিসঙ্ঘের ত্রাণ বিষয়ক সংস্থা এক বিবৃতিতে বলেছে, গাজা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। ট্রাকে করে খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি নিয়ে অপেক্ষায় থাকার পরেও শিশুরা অপুষ্টি এবং পানিশূন্যতায় মারা যাচ্ছে। ইসরাইলের ক্রমাগত হামলায় ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ সহায়তায়ও পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
প্রায় ৮ মাস ধরে সেখানে সঙ্ঘাত চলছে। এই পুরোটা সময়ের মধ্যে কয়েকবার মাত্র ত্রাণবাহী গাড়ি গাজায় প্রবেশের অনুমতি পেয়েছে। বাইরে থেকে কোনো সহায়তা না পাওয়ায় এবং ক্রমাগত হামলা চলতে থাকায় গাজায় ভয়াবহ বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। ছোট ছোট শিশু খাবারের অভাবে এবং তীব্র পুষ্টিহীনতায় মারা যাচ্ছে। একদিকে দফায় দফায় বোমা হামলা অন্য দিকে খাদ্য সঙ্কট, বাসস্থানের সঙ্কট, একটু মাথা গোঁজার নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব- সব কিছু মিলিয়ে ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগের যেন কোনো শেষ নেই। কবে এই পরিস্থিতি ঠিক হবে সেটাও কারো জানা নেই।
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে। গাজার ছোট ছোট শিশুরা লাইনে দাঁড়িয়ে বিশুদ্ধ পানির জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও সামান্য পানির ব্যবস্থা হচ্ছে না। পানির এমন তীব্র সঙ্কটের কারণে হাজার হাজার পরিবার এখন সাগরের নোনা পানিই ব্যবহার করতে শুরু করেছে। উত্তর গাজার উত্তর গাজা ইমার্জেন্সি কমিটি জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় অবরুদ্ধ এই উপত্যকার সব কূপ ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে সেখানে পানির সঙ্কট আরো তীব্র হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা