১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

পুলিশ এসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ

-


সাংবাদিকতা নিয়ে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের বিবৃতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পেশাজীবী সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, সংবাদ প্রকাশের পর কোনো কোনো নেতা এবং কোনো কোনো সংগঠন যে ভাষায় প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি।
বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী এবং ডিইউজে সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, পুলিশের সাবেক কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার লুটপাট নিয়ে দৈনিক মানবজমিন, প্রথম আলোসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে ‘অতিরঞ্জিত রিপোর্ট’ আখ্যা দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন। গত শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই প্রতিবাদ জানায় সংগঠনটি। প্রতিবাদের ভাষা দেখলে মনে হয়, স্বাধীন গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে হুমকি দিয়েছে পুলিশ। পেশাজীবী সাংবাদিকদের অস্তিত্বের স্বার্থে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজেসহ সাংবাদিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেয়া এখন সময়ের দাবি।
তারা বলেন, সাংবাদিকদের দায়িত্ব হচ্ছে ঘটনা তুলে ধরার পাশাপাশি এর পেছনের কারণ অনুসন্ধান করে প্রাপ্ত তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরা। সংবাদপত্র প্রকাশের শুরু থেকেই অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ভয়ভীতিহীনভাবে এ কাজটি করে আসছেন সাংবাদিকরা। আমরা বিশ্বাস করি, সাংবাদিকরা প্রাপ্ত তথ্য ও গ্রহণযোগ্য প্রমাণ যাচাই-বাছাই করে রাষ্ট্রের ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের সম্পদের বিবরণ সংবলিত প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছে। প্রকাশিত এসব প্রতিবেদনের সঙ্গে দ্বিমত থাকলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা সংগঠনের বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশেরও রীতি রয়েছে। তাতেও সন্তুষ্ট না হতে পারলে সংক্ষুব্ধরা প্রেস কাউন্সিলের দ্বারস্থ হওয়ার বিধিবদ্ধ আইন রয়েছে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, কিন্তু সেই পন্থা অনুসরণ না করে পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন সাংগঠনিকভাবে এবং কোনো কোনো নেতা সংবাদ সম্মেলন করে যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তা স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি বলে আমরা মনে করি। আমরা পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের এ বিবৃতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
বিএফইউজে ও ডিইউজে নেতারা মনে করেন, কোনো কর্মকর্তা দুর্নীতি করে থাকলে তা তার ব্যক্তিগত বিষয়। এটা মোটেও কোনো বাহিনীর হতে পারে না। সাংবাদিক নেতারা বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, সাংবাদিকরা বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে সংবাদ তৈরি করে না। যা ঘটেছে তা অনুসন্ধানের মাধ্যমে বের করে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই সংবাদ রচনা করে। বিএফইউজে ও ডিইউজে স্পষ্টভাবে জানাতে চায়, পূর্বসূরিদের মতো শত হুমকি ও ধমকের মুখেও সাংবাদিক সমাজ তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবেন।

নেতারা আশা প্রকাশ করে বলেন, বিএফইউজে ও ডিইউজে স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ বিঘিœত হয় এমন বিবৃতি ও বক্তব্য দেয়া থেকে সংশ্লিষ্ট মহল বিরত থাকবেন সেই প্রত্যাশা করে।
অন্যদিকে, বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ এবং ডিইউজের একাংশের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসেন গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, তাদের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট সব মহল স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিবেশ বিঘিœত হয়, এমন বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকবে। কারণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাধীন সাংবাদিকতার অধিকার সংবিধানেই স্বীকৃত।
বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন গত শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে ভবিষ্যতে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন ও সাংবাদিকতার নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণের অনুরোধ জানিয়েছে। সম্প্রতি গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া) ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক ও বর্তমান সদস্যদের নিয়ে ধারাবাহিকভাবে আংশিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ঢালাও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে বিবৃতি দিলো বিএফইউজে ও ডিইউজে। বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, সম্প্রতি দেশের কিছু ক্ষমতাধর বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তার বিপুল ও অস্বাভাবিক সম্পদের বিবরণ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, দায়িত্বশীল সাংবাদিকরা প্রাপ্ত তথ্য ও দলিল যাচাই-বাছাই করে প্রমাণযোগ্য বিষয়গুলোই প্রকাশ করছেন বলে তারা বিশ্বাস করেন।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতারা বলেন, সরকারি বিবৃতি, ভাষ্য, ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য বা সাংবাদিক সম্মেলনে পাওয়া সব তথ্যই গুরুত্বপূর্ণ। এ তথ্য থেকেই সাংবাদিকরা সংবাদ তৈরি করেন। কিন্তু সাংবাদিকদের বড় কাজ হচ্ছে, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যে তথ্য গোপন রাখতে চান, তা অনুসন্ধান করে বের করা এবং পেশাদারিত্বের সাথে জনগণকে বিস্তারিত জানানো। আশার কথা, ইতোমধ্যে প্রভাবশালী মহল সম্পর্কে কিছু তথ্যভিত্তিক খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বিএফইউজে ও ডিইউজের নেতারা বলেন, ‘আমরা এতে কারো উত্তেজিত হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না। এ ক্ষেত্রে যারা এসব খবর প্রকাশ করেছেন, তাদের দায়িত্ব এসব বিষয় প্রমাণ করা এবং যাদের নামে প্রকাশিত হয়েছে, তাদের কাজ হচ্ছে প্রকাশিত তথ্যগুলো সঠিক নয়, তা প্রমাণ করা। এ ক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহলের দায়িত্ব প্রকাশিত তথ্য নিয়ে তদন্ত করা এবং দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা। এসব বিষয় নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ করা কোনো শোভন কাজ নয়। তার পরও কেউ সংক্ষুব্ধ হলে প্রেস কাউন্সিলে যেতে পারেন। কোনো কর্মকর্তা দুর্নীতি করে থাকলে সেটি তার ব্যক্তিগত বিষয়, কোনো বাহিনীর বিষয় নয়।’ বিবৃতিতে বলা হয়, বিএফইউজে ও ডিইউজে স্পষ্টভাবে জানাতে চায়, শত হুমকির মুখেও প্রমাণিত তথ্যের ভিত্তিতে সাংবাদিক সমাজ তাদের পেশাগত দায়িত্বপালন অব্যাহত রাখবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement