হামাসকে অপরাজেয় ভাবছে ইসরাইল
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২১ জুন ২০২৪, ০২:৪৮
- বাইডেনের সাথে নেতানিয়াহুর বৈঠক বাতিল
- ইসরাইলে সরকার পতনের আভাস
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র বলেছেন, ‘আদর্শ’ হিসেবে হামাসকে পরাজিত করা যাবে না। আলজাজিরার খবর অনুসারে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি ইসরাইলি গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘হামাস একটি মতাদর্শ’ এবং ‘আমরা কোনো মতাদর্শকে নির্মূল করতে পারি না’। তিনি বলেন, ‘আমরা হামাসকে অদৃশ্য করে দেবো এটা বলা মানে মানুষের চোখে বালু দেয়া। আমরা যদি বিকল্প ব্যবস্থা না করি, তা হলে শেষ পর্যন্ত আমরা হামাসকেই পাবো। আলজাজিরা ও টাইমস অব ইসরাইল।
সামরিক মুখপাত্রের মন্তব্য নেতানিয়াহুর সরকারের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ইসরাইলি সরকার বারবার জোর দিয়ে বলেছে, হামাস পরাজিত না হওয়া পর্যন্ত তারা গাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ করবে না। নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা যুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে হামাসের সামরিক ও সরকারি সক্ষমতা ধ্বংস করাকে সংজ্ঞায়িত করেছে। তিনি বলেন, ইসরাইলি সেনাবাহিনী অবশ্যই এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
আট মাসেও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা যোদ্ধাদের নির্মূল করতে পারেনি ইসরাইল। যুদ্ধ জয় এখনো মরীচিকাই হয়ে রয়েছে নেতানিয়াহুর জন্য। ক্রমাগত সমালোচনার জেরে ভেঙে দিতে হয়েছে যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভাও। এবার ইসরাইলের শীর্ষ একজন সামরিক কর্মকর্তার মন্তব্যে দেশটিতে হইচই পড়ে গেছে। পরে তড়িঘড়ি করে ওই বক্তব্যের ব্যাখ্যাও দিয়েছে ইসরাইল সরকার। গাজার পর ইসরাইলের নজর এবার লেবাননে। কিন্তু গাজায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সাথেই পারছে না ইসরাইল। এরই মধ্যে ইসরাইলের শীর্ষ একজন সামরিক কর্মকর্তা ‘সরল’ স্বীকারোক্তি দিয়ে বসেছেন। বুধবার ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা যোদ্ধাদের নির্মূল করা যাবে না।’ তিনি ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি। গাজা যুদ্ধে যার ভূমিকা বেশি। এতেই ইসরাইলি সরকারের হাঁটুতে জোর কমে যায়। পরে তড়িঘড়ি ব্যাখ্যায় জানায়, ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পুরোপুরি নির্মূলে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আট মাস ধরে চলা ‘অনেকটা’ একপেশে হামলায় গাজাকে প্রায় মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছে ইসরাইল। মৌলিক চাহিদা মেটানোর অনেক কিছুই এখন গাজায় মিলছে না। এত কিছুর পরও গাজায় জয়ী হওয়া তো দূরের কথা, এখন যুদ্ধ সমাপ্তির পথ খুঁজছে ইসরাইল। এত দিন ইসরাইলি কর্মকর্তারা সেই কথাই আকারে-ইঙ্গিতে বলেছেন। তবে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বললেন স্পষ্ট কথা। দ্য টাইমস অব ইসরাইলের খবরে বলা হয়, ইসরাইলি একটি সম্প্রচারমাধ্যমকে হাগারি বলেন, ‘আমরা যদি বলি হামাসকে নির্মূল করে দিতে পারব, তা হলে তা মানুষের চোখে ধুলা দেয়ার মতো হবে। যদি আমরা ভিন্ন কোনো পথ খুঁজে বের না করি, শেষ পর্যন্ত আমাদের সামনে হামাস ছাড়া আর কেউ থাকবে না।’
ইসরাইলের শীর্ষ এই সামরিক কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘হামাস একটি মতাদর্শ, আমরা এই মতাদর্শকে নির্মূল করতে পারব না।’ পরে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর অফিস থেকে জানানো হয়, হামাসকে পরাজিত না করা পর্যন্ত গাজায় যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটবে না। আর ইসরাইলি সেনাবাহিনীও অবশ্যই এমনটি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আছে। এর আগে নেতানিয়াহু ও তার মন্ত্রিসভার সদস্যরাও একই ধরনের কথা জোর গলায় বলেছেন। হাগারির ওই মন্তব্য দিয়ে বিবৃতি দিতে হয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনীকেও। এই সেনা কর্মকর্তার বক্তব্য স্পষ্ট ছিল, এটি ভিন্ন প্রেক্ষাপটে নেয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে তারা। টাইমস অব ইসরাইল আরো জানায়, ড্যানিয়েল হ্যাগারির সাক্ষাৎকারের পর হামাসের সিনিয়র নেতা গাজী হামাদ বলেছেন, ইসরাইল মূলত এর মাধ্যমে পরাজয় স্বীকার করেছে। আলজাজিরাকে হামাসের এ নেতা বলেছেন, ‘হ্যাগারির সাক্ষাৎকার একটি সোজাসাপ্টা স্বীকারোক্তি। ৯ মাসের যুদ্ধের পর এটি পরিষ্কার- হামাসকে নির্মূল করা যাবে না। এমনকি যদি তারা এক শ’ গুণ বেশি অস্ত্রও ব্যবহার করে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘এর মাধ্যমে ইতিহাস পরিবর্তিত হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝাতে সক্ষম হবে হামাসের সংগ্রাম রাজনৈতিক অঙ্গনে থাকবে এবং সামাজিক এবং প্রতিরোধ অঙ্গনে স্থায়ীভাবে থেকে যাবে।’ হামাসের এই নেতা আরো বলেছেন প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্রের বক্তব্যের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে ইসরাইলিদের মধ্যে অনৈক্য দেখা দিয়েছে এবং তারা নেতানিয়াহুকে বলছে যুদ্ধ বন্ধ করো।
বাইডেনের সাথে নেতানিয়াহুর বৈঠক বাতিল : মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সমালোচনা করে বিপাকে পড়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। গতকাল বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গোপন বৈঠকের কথা ছিল ইসরাইলের। কিন্তু বাইডেন ও তার প্রশাসনের সমালোচনা করায় ওই বৈঠক বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবারের ওই বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে নেতানিয়াহুর সাথে বাইডেনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
ইসরাইলের গণমাধ্যম হারেৎজ জানায়, আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরাইলে অস্ত্রের চালান পাঠাতে বিলম্ব করায় বাইডেন প্রশাসনের কঠোর সমালোচনা করেছেন নেতানিয়াহু। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ভিডিওবার্তায় নেতানিয়াহু বাইডেনের সমালোচনা করে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্র গোলাবারুদ ও অস্ত্রের চালান পাঠানো বন্ধ রেখেছে, এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ পোস্ট দেখে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয় বাইডেন প্রশাসন। হারেৎজের খবরে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ ও গোপন ওই বৈঠকের এজেন্ডা ছিল ইরানের পরমাণু কমসূচি। উচ্চপর্যায়ের ওই বৈঠকের পরিবর্তে ইসরাইলের কৌশলগতবিষয়ক (স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ার্স) মন্ত্রী রন ডেরমার যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের সাথে বৈঠক করতে।
উল্লেখ্য, গাজায় নিরপরাধ নারী ও শিশুদের ওপর মার্কিন অস্ত্র দিয়ে ইসরাইল গণহত্যা চালাচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক মহলের সমালোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র বেশ কয়েকটি অস্ত্রের চালান বন্ধ রাখে। এ দিকে হিজবুল্লাহ, হাউছি ও হামাসের হামলা প্রতিহত করতে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে ইসরাইলের অস্ত্রভাণ্ডার। এ জন্য বাইডেনকে বারবার অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের তাগিদ দিয়ে আসছেন নেতানিয়াহু। জুনের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩ বিলিয়ন ডলারে ২৫টি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান ক্রয় করার চেষ্টা করে ইসরাইল। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে ২৬.৪ বিলিয়ন ডলার মার্কিন অনুদান পায় ইসরাইল, এর মধ্যে ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র।
এ জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দিন ফুরিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেছে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দল শাস পার্টি। বুধবার কট্টর ডানপন্থী এই দল দেশটির গণমাধ্যমকে দেয়া বিবৃতিতে বলেন, নেতানিয়াহু সরকারের পতন এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ইসরাইলি পার্লামেন্ট নেসেটে শরিক দলটির আনা একটি বিল নেতানিয়াহুর দল লিকুদ পার্টি প্রত্যাখ্যান করে। এর পরই নেতানিয়াহুর ওপর বেজায় চটেছে কট্টর ডানপন্থী শাস পার্টি। ইসরাইলের বর্তমান সরকারের শরিক দল শাস পার্টির নেতা মোসে গাফনিকে দেশটির ধর্মমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়েছে। শাস পার্টি চাচ্ছে উপাসনালয়ে ইহুদি ধর্মযাজক রাব্বিদের নিয়োগের ক্ষমতা স্থানীয় প্রশাসনের পরিবর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যস্ত করতে। এ কারণেই সম্প্রতি ‘রাব্বি বিল’ নামে ওই বিলটি নেসেটে উত্থাপন করে। তবে এই দলটি আনা ‘রাব্বি বিল’ নেসেটের অধিবেশনে এজেন্ডা থেকে গত মঙ্গলবার (১৮ জুন) বাদ দেন নেতানিয়াহু। কিন্তু জোট সরকারের অন্যতম শরিক দল লিকুদ পার্টি ও অপর কট্টরপন্থী গোড়া ইহুদিবাদী দল জিওশ পাওয়ার পার্টি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে। বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও জিওশ পাওয়ার পার্টির নেতা ইতামার বেন গাভির এই প্রস্তাবের ঘোর বিরোধী। নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি দেশটির কট্টরপন্থী দুই জিওশ পাওয়ার, শাস, রিলিজিয়াস জায়োনিজম এবং ইউনাইটেড তোরাহ জুদাইজম পার্টি নিয়ে সরকার গঠন করে। এই দলগুলোর যেকোনো একটি যদি সরকার থেকে বেরিয়ে যায়, তা হলে ইসরাইলের বর্তমান সরকারের পতন হবে। এ কারণেই শরিক দল শাস পার্টি ওই হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা