ব্যাটাররা কি ঘুরে দাঁড়াবেন
- ক্রীড়া প্রতিবেদক
- ২০ জুন ২০২৪, ০০:৪৯
প্রশ্ন উঠেছে এমন হতশ্রী ব্যাটিংয়ের ওপর ভর করে সুপার এইটে কিভাবে ভারত, অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তি ও আফগানিস্তানের মতো দলকে পরাজিত করবে বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নের মুখে আগামীকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজের অ্যান্টিগায় স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে ৬টায় অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে টাইগাররা।
দুই দলের ১০ বারের মুখোমুখিতে বাংলাদেশের জয় ৪টি, অস্ট্রেলিয়ার ৬টি। বাংলাদেশের চার জয়ই হোম ভেনুতে আর অস্ট্রেলিয়ার ৬ জয়ের দু’টি অ্যাওয়ে এবং চারটি নিউট্রাল ভেনুতে। অসিদের বড় জয় ৯ উইকেটে ও ২৭ রানে। আর টাইগারদের বড় জয় ৫ উইকেট ও ৬০ রানে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দলীয় স্কোর অজিদের ১৫৮ ও ৬২ আর বাংলাদেশের ১৫৬ ও ৭৩। সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ম্যাথু হেইডেন ৭৩*, সাকিব ৬৬।
বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বে যে তিন ম্যাচে জয় পেয়েছে, তার প্রতিটিতেই বড় অবদান বোলারদেরই। টুর্নামেন্টে ব্যাটাররা ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। গ্রুপ পর্বে বোলাররা প্রতিটি ম্যাচেই ছোট সংগ্রহ রক্ষা করে জয় এনে দিয়েছে। কিন্তু সুপার এইটে কঠিন লড়াইয়ে ব্যাটাররা জ্বলে উঠতে না পারলে কী হবে?
কোনো ম্যাচেই ভালো শুরু পায়নি বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে তানজিম হাসান তামিম নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে একটা ত্রিশোর্ধ্ব ইনিংস খেললেও ব্যর্থ ছিলেন সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন দাসরা। নেপালের বিপক্ষে তো পুরো ব্যাটিং অর্ডারই ব্যর্থ। প্রথম ছয় ব্যাটারের রান যথাক্রমে ০,১০,৪,১৭,৯৫১৩।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে শান্তর ভাষ্য, 'এটি তো আসলে সম্ভব না যে প্রতিদিনই বোলাররা জেতাবে। ব্যাটসম্যানেরও দায়িত্ব আছে এবং কেন হচ্ছে না, এটি সবাই চেষ্টা করছে বের করার। কিন্তু কোনোভাবেই হচ্ছে না এবং এটি গ্রহণযোগ্য নয়।'
সুপার এইটে এমন ব্যাটিং দুশ্চিন্তার কারণ কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে শান্ত বলেন, 'অবশ্যই চিন্তার কারণ। এভাবে ব্যাটিং করলে মনে হয় না সেটা দলের জন্য ভালো কোনো দিক। শুরুটাও পাচ্ছি না, শেষে ব্যাটসম্যানরাও শেষ করতে পারছে না। তাই অবশ্যই চিন্তার কারণ। কিন্তু এখান থেকে আমাদের বের হতেই হবে এবং কিভাবে বের হতে হবে, সেটি নিয়ে অনেক পরিকল্পনা সব সময়ই হয়। একই ভুল বারবারই হচ্ছে। পরের রাউন্ডে এই ভুলগুলো যত কম করা যায়। ফোকাসটা সে দিকেই।'
ব্যর্থতার মাঝেও ভালো দিক হলো, গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালকে ২১ রানে হারিয়ে ১৭ বছর পর দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রেখেছে শান্ত-হদয়রা। সেই সাথে আগামী ২০২৬ টি-২০তে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বের খেলায় চার ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সুপার এইটে উঠেছে টাইগাররা। যেখানে দুর্দান্ত বোলিংয়ে তানজিম হাসান সাকিব-মোস্তাফিজুর রহমানরা আছেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় সেরা দশে। দলগুলোর ক্যাচ নেয়ার সফলতার হারে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। আইসিসি যে তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতে নেদারল্যান্ডসের সাথে যৌথভাবে সবার উপরে বাংলাদেশ।
এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের বোলাররা মোট ২১ বার ক্যাচের সুযোগ তৈরি করেছেন। যেখানে ২০ বার তালুবন্দী করতে পেরেছেন ফিল্ডাররা। মাত্র একবার ক্যাচের সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। ফলে আসরে বাংলাদেশের ক্যাচ নেয়ার সাফল্যের হার ৯৫.২ শতাংশ। একই পরিসংখ্যান নেদারল্যান্ডসের ক্ষেত্রেও। ২৩টি ক্যাচের মধ্যে ২১টি তালুবন্দী করতে পেরেছে ক্যারিবীয়রা। বিপরীতে দু'বার সুযোগ
হাতছাড়া করেছে। সবচেয়ে বেশি আটটি ক্যাচ মিস করেছে অস্ট্রেলিয়া। সাতবার করে সুযোগ হাতছাড়া করেছে পাকিস্তান ও ওমান। বিশ্বকাপে ক্যাচ ধরার সাফল্যের হার যথাক্রমে বাংলাদেশ ৯৫.২%, নেদারল্যান্ডস ৯৫.২%, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯১.৩%, আয়ারল্যান্ড ৮৮.২%, শ্রীলঙ্কা ৮৫.৭%, নামিবিয়া- ৮৪.৬%, দক্ষিণ আফ্রিকা ৮৪%, যুক্তরাষ্ট্র ৮৩.৩%, নিউজিল্যান্ড ৮১.৮%, আফগানিস্তান ৮০%।
বিশ্বকাপ শুরুর আগেও ছন্দে ছিলেন না মোস্তাফিজুর রহমান। একাদশ থেকে জায়গা হারাতে হয়েছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিপক্ষীয় সিরিজেও। এরপর তিনি উড়াল দেন ভারতে, আইপিএল খেলতে। ফিরে বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা মিলছে ভিন্ন এক মোস্তাফিজের। ৪ ম্যাচে ১০.২৮ গড় এবং ৩.৩৭ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ৭ উইকেট। ডেথ ওভারেও ৬ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন মাত্র ১০ রান। অন্য দিকে প্রথম রাউন্ডে সব কটি ম্যাচ জিতেছে ২০২১ সালের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। স্কটল্যান্ড, ওমান, নামিবিয়া তো বটেই, ইংল্যান্ডও তেমন লড়াই করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেলে বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে টানা আট জয়ের রেকর্ড গড়বে অস্ট্রেলিয়া। অ্যান্টিগার তুলনামূলক ভালো উইকেটে খেলা হবে বলে বাড়তি প্রেরণাও পাচ্ছেন ওয়ার্নার। 'এসব মাঠে খেলার সুবিধা হলো, এখানে দ্রুত উইকেট পাওয়া যায়। তাদের লেংথ হয়তো কিছুটা পিছিয়ে গেছে। তারা যদি এই একই লেংথে বোলিং করে তাহলে এসব বল মোকাবেলা করা দারুণ হবে।'
বাংলাদেশের বোলিং শক্তি সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে ওয়ার্নারের। মোস্তাফিজ ছাড়াও দারুণ ছন্দে থাকা তানজিম হাসান, তাসকিন আহমেদ, রিশাদ হোসেনদের ব্যাপারেও সতর্ক বাঁ হাতি ওপেনার। আর মোস্তাফিজের সাথে আইপিএলে ড্রেসিংরুম শেয়ার করায় কাটারমাস্টার সম্পর্কে ভালো করেই জানেন ওয়ার্নার। 'বাংলাদেশ ভালো দল। তাদের বিপক্ষে আমরা অনেক ম্যাচ খেলেছি। তাদের খেলার পরিকল্পনা আমরা বুঝতে পারি। অবশ্যই তাদের বোলিং আক্রমণ দারুণ। মোস্তাফিজ এই আক্রমণের নেতৃত্ব দেয়।'
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভালো সম্ভাবনা দেখছেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি কার্টলি অ্যামব্রোস। 'যদিও আমি খুব বেশি ম্যাচ দেখিনি। আমি যেটা বলতে পারি সেটি হচ্ছে বাংলাদেশের পেস বোলার কিংবা দল হিসেবে সুপার এইটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবে। কারণ এখানকার উইকেটগুলো বেশির ভাগই পেসারদের জন্য। সেমিফাইনালে যাওয়ার জন্য সব দলেরই সমান সুযোগ রয়েছে।'
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা