ডলার সঙ্কটে বিকল্প পদ্ধতিতে এলসির দায় পরিশোধ
- আশরাফুল ইসলাম
- ১৬ জুন ২০২৪, ০০:০৫, আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪, ১০:৩৪
জ্বালানি তেল, সার, ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন প্রকল্পের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসি (আমদানি ঋণপত্র স্থাপন) খুলেছিল সরকারি ব্যাংকগুলো। কিন্তু ডলার সঙ্কটের কারণে এলসির দায় পরিশোধ করতে ব্যর্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলো। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করে আসছিল। কিন্তু রিজার্ভ কমে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করছে না। কিছু বেসরকারি ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার নিয়ে সরকারি ব্যাংকগুলোর এলসির দায় পরিশোধ করা হচ্ছে। এমনি একটি ব্যাংক গত মাসে ২৪০ মিলিয়ন ডলার এবং চলতি মাসে ১৩ দিনে (১ এপ্রিল-১৩ এপ্রিল) ডলার সরবরাহ করেছে ৯২ বিলিয়ন ডলার। এভাবে আরো কয়েকটি ব্যাংককেও সরকারি ব্যাংকের এলসির দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। বিপরীতে তারা সমপরিমাণ টাকা পাচ্ছেন, কিন্তু এতে নিজেদের বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করছে বলে একজন ব্যাংকার জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক সূত্র জানিয়েছে, প্রতি মাসেই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এখন বিপিএম-৬ অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়নের নিচে নেমে গেছে। যদিও ব্যবহার যোগ্য রিজার্ভ আরো কম। এ দিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ রিজার্ভ রাখতে হবে। এমনি পরিস্থিতিতে সরকারি ব্যাংকগুলোর প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি দায় পরিশোধ করতে রিজার্ভ থেকে যে ডলার সরবরাহ করা হতো তা কমিয়ে দেয়া হয়েছে। এতেই বেকায়দায় পরে গিয়েছিল সরকারি ব্যাংক। এ দিকে ডলার সঙ্কটের কারণে সরকারি ব্যাংকগুলো সরকারের অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির দায় পরিশোধ করতে না পেরে বিদেশী ব্যাংকগুলোর কাছে সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। এতে আন্তর্জাতিক রেটিং খারাপ হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। বাধ্য হয়েই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে ডলার সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর এরই অংশ হিসেবে কিছু বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে সরকারি ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী একটি ব্যাংকের এক সূত্র জানিয়েছে, তারা নিজেরাই সঙ্কটে রয়েছে। সাধারণ গ্রাহকের প্রয়োজনীয় চাহিদা অনুযায়ী এলসি খোলা যাচ্ছে না। এরওপর সরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলার সরবরাহ করতে গিয়ে তাদের চাপ আরো বেড়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহের তুলনায় বহিরপ্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় প্রতি মাসেই কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এ রিজার্ভ একটি নির্ধারিত সীমার মধ্যে ধরে রাখার জন্য নানাভাবে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার ধার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। যেকোনো ব্যাংক নির্ধারিত সময়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে তাদের উদ্বৃত্ত ডলার রাখতে পারবে। বিনিময়ে ব্যাংকগুলো নির্ধারিত দরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে স্থানীয় মুদ্রা নিতে পারবে। এজন্য বাড়তি কোনো চার্জ করা হবে না। তবে যখন নির্ধারিত সময়ের পরে স্থানীয় মুদ্রার বিনিময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার ফেরত নিতে যাবে, তখন ব্যাংকগুলোকে নির্ধারিত হারে চার্জ পরিশোধ করতে হবে। বর্তমান লেনদেন অনুযায়ী এ হার পৌনে তিন শতাংশ হবে। এভাবে প্রায় এক বিলিয়ন ডলার ধার করা হয়েছিল। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত থেকে সম্প্রতি সরে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আপাতত ডলার আর ধার করা হচ্ছে না। তবে, ইতোমধ্যে যেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার ধার দিয়ে টাকা নিয়েছিল তাদের অনেকেই টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। ফলে তারা আর ডলারও ফেরত নিতে পারছে না। এতে নিট রিজার্ভ বেড়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানেিয়ছে।
এর আগে রিজার্ভ বাড়াতে কিছু ব্যাংকের কাছ থেকে ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো তখন ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা দামে প্রবাসী ও রফতানি আয়ের ডলার কিনেছে। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম নিয়েছে ১১০ টাকা। তবে ওই সময় বেশির ভাগ ব্যাংক ডলার বিক্রিতে ১১০ টাকার বেশি দাম নেয়। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয়ে নিজেদের আড়াই শতাংশ প্রণোদনাসহ প্রতি ডলার কিনছে ১১২ টাকায়। আর প্রচলিত ধারার কিছু ব্যাংক তখন ১২৩ টাকা দামেও প্রবাসী আয় কিনে। উচ্চ মূল্যে কেনা ডলার তারা কম মূল্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে। বেশি দামে ডলার কিনে কম দামে বিক্রি করায় লোকসানের মুখে পড়ে কিছু ব্যাংক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা