১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
খাদ্য ও নিত্যপণ্যের সঙ্কট

কক্সবাজার থেকে ২০০ টন মালামাল নিয়ে জাহাজ গেল সেন্টমার্টিন দ্বীপে

-

মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সঙ্ঘাতের জেরে কক্সবাজারের টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে আট দিন জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দা গত তিন-চার দিন ধরে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র সঙ্কটে পড়েছেন। তাদের সঙ্কট থেকে মুক্তি দিতে গতকাল শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে এমভি বারো আউলিয়া নামে একটি জাহাজে করে খাদ্য ও নিত্যপণ্য পাঠানো হয়েছে দ্বীপটিতে। দুপুর আড়াইটার দিকে মালামাল নিয়ে জাহাজটি সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের উদ্দেশে ঘাট ছেড়ে যায়। সকাল ১০টার পর থেকে বিআইডব্লিউটিএ ঘাটে জাহাজটিতে তোলা হয় চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ নানা ধরনের পণ্য।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো: ইয়ামিন হোসেন জানান, দ্বীপের জনপ্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীদের সাথে সমন্বয় করে মালামাল নিয়ে জাহাজটি পাঠানো হয়। এছাড়া কক্সবাজারে কাজে এসে আটকে পড়া সেন্টমার্টিনের দেড় শ’ বাসিন্দা এই জাহাজে করে ফিরে গেছে। এর পাশাপাশি সেন্টমার্টিন্স দ্বীপে কর্মরত বিজিবি এবং কোস্ট গার্ডের সদস্যরাও তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য নিয়ে এই জাহাজে করে কর্মস্থলে গেছে। এডিএম জানান, এই জাহাজে ব্যবসায়ীদের নিজস্ব মালামালের পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের জন্য বরাদ্দ করা ভিজিএফ চাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ঈদের উপহার এবং পাঁচটি কোরবানির পশু পাঠানো হয়েছে।
ঘাটে অপেক্ষমাণ সেন্টমার্টিন্স দ্বীপের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, চিকিৎসা ও পারিবারিক কাজে কক্সবাজার শহরে এসে তারা আটকে পড়েছিলেন। ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে তারা বাড়িতে ফিরতে পারছিলেন না। জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় নিজ এলাকায় ফিরে যেতে পেরে তারা খুশি। তারা জানান সেন্টমার্টিন্স দ্বীপে গত চার-পাঁচ দিন ধরে কাঁচা শাকসবজি একেবারে নেই। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডাল, চিনিসহ ভোগ্যপণ্যের তীব্র সঙ্কট।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে নাফ নদীর নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় মিয়ানমার সীমান্ত থেকে বাংলাদেশী ট্রলার ও স্পিডবোট লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হচ্ছে। এ কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার ফলে দ্বীপটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। অবশেষে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কক্সবাজার থেকে খাদ্যপণ্য নিয়ে জাহাজ এসেছে।
এদিকে সাত দিন পর বিজিবি ও কোস্টগার্ডের নিরাপত্তায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সেন্টমার্টিন থেকে তিনটি ট্রলারে করে দুই শতাধিক হোটেল শ্রমিক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ টেকনাফ পৌঁছান। এছাড়া টেকনাফ থেকে বিকল্প সাগরপথে চারটি ট্রলারে করে তিন শতাধিক লোক সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে রওনা হন। তবে নাফ নদী হয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন্স নৌপথে এখনো ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার পণ্যবাহী কোনো ট্রলার সেন্টমার্টিনের উদ্দেশে ছাড়েনি বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা। বিকল্প পথে তিনটি ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফ ফিরেছেন আটকা পড়া তিন শতাধিক মানুষ। বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের মুন্ডারডেইল এলাকার সাগর উপকূলের পয়েন্ট দিয়ে সেন্টমার্টিন থেকে ট্রলারযোগে এসব মানুষ ফিরেছেন বলে জানিয়েছেন টেকনাফের ইউএনও মো: আদনান চৌধুরী। তিনি বলেন, বেলা ১টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের জেটি ঘাট থেকে তিনটি ট্রলারযোগে বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যদের নিরাপত্তায় অন্তত তিন শতাধিক মানুষ টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেয়। বিকেল ৩টার দিকে ট্রলারগুলো টেকনাফের মুন্ডারডেইল সাগর উপকূলে এসে পৌঁছে। কিন্তু সাগরের প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে এসব ট্রলার থেকে কয়েকটি ডিঙি নৌকা উপকূলের কিছু দূরে সাগরে অবস্থানকারী ট্রলারগুলোর কাছে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে বড় ট্রলার থেকে এসব মানুষকে ডিঙি নৌকায় তুলে কূলে নিয়ে আসা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধ চলছে। যুদ্ধের আঁচ লাগছে এপারের বাংলাদেশের সীমান্তের গ্রামগুলোতে। বাংলাদেশী ট্রলারগুলো লক্ষ্য করে ওপার থেকে কারা গুলি করছে তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement