গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষণ নেই হামলা জোরদার ইসরাইলের
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৫ জুন ২০২৪, ০০:০৫
- গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে ফেলা হয়েছে : জাতিসঙ্ঘ
- রাফাহের সড়কে দখলদার সেনাদের সাথে হামাসের যুদ্ধ
- বন্দীদের সংখ্যা নিয়ে কারো ধারণা নেই : হামাস
- ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেবে ব্রিটেনের বিরোধী দল
গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধ বন্ধের দিকে অগ্রসর না হয়ে বরং হামলা জোরদার করেছে ইসরাইল। যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে হামাসকে ‘বড় বাধা’ বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত দাবির পরই রাফাতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। শহরটির বাসিন্দারা বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওই মন্তব্যের পরপরই দক্ষিণ গাজার রাফাহর রাস্তায় দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করছে হামাস যোদ্ধারা। খবর আলজাজিরা, রয়টার্স, এএফপি ও সিএনএন।
এদিকে, ইসরাইলের উত্তর সীমান্তেও উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। হামাসের মিত্র হিজবুল্লাহর সামরিক অবস্থানগুলো লক্ষ্য করে ইসরাইলি হামলায় একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পাল্টা হামলায় ইসরাইলের অন্তত ৯টি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে হিজবুল্লাহ।
তাছাড়া যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই রাফাহ শহরে ড্রোন ও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। রাফাহর পশ্চিমে ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এ ছাড়া গাজা সিটির উত্তরে একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সেনারা। ওই হামলায় অন্তত ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। অন্যদিকে অধিকৃত পশ্চিমতীর থেকে অন্তত তিন ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরাইলি বাহিনী। ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৯ হাজার ১৮৫ জন ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে তারা। সেই সাথে গাজায় অবৈধ বসতি স্থাপনকারী ও ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায় ৫৪৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে পাঁচ হাজার ২০০ জনেরও বেশি। এমন পরিস্থিতিতে কিছুদিন আগেই গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে তিন ধাপের একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এটি জাতিসঙ্ঘেও পাস হয়েছে। কিন্তু এই প্রস্তাব কার্যকরের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বাইডেনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছে ইসরাইল ও হামাস। বিশেষ করে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজা থেকে হামাস উৎখাতে বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের দাবি করেছে। দুই পক্ষের দাবির কারণে জটিল হয়ে পড়েছে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের বিষয়টি।
রাফাহতে প্রচণ্ড লড়াই : এদিকে গত বৃহস্পতিবার রাফাহ শহরের পশ্চিমাঞ্চলে ব্যাপক আগুন লেগেছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন। বাসিন্দাদের একজন এএফপিকে বলেছেন, ‘ইসরাইলি কামান এবং যুদ্ধজাহাজ ছাড়াও যুদ্ধবিমান, অ্যাপাচি (হেলিকপ্টার) এবং কোয়াডকপ্টার থেকে খুব তীব্র গোলাবর্ষণ হচ্ছিল। যার সবগুলোই রাফাহ শহরের পশ্চিমে আঘাত হেনেছে।’ হামাস বলেছে, তাদের যোদ্ধারা মিসর সীমান্তের কাছে শহরের রাস্তায় ইসরাইলি সেনাদের সাথে লড়াই করছে।
গাজা বসবাসের অযোগ্য : টানা আট মাসেরও বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে হাসপাতালও। গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থাও ইতোমধ্যে ভেঙে পড়েছে। এরসাথে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সঙ্কট। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, গাজাকে বসবাসেরই অযোগ্য করে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ।
উপকূলীয় এই ভূখণ্ডটি একসময় ‘প্রাণবন্ত শহর’ ছিল বলেও মন্তব্য করেছে সংস্থাটি। উপকূলীয় গাজা উপত্যকা একসময় ‘প্রাণবন্ত শহর’ ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেয়া এক পোস্টে এই বার্তা দেয়ার পাশাপাশি গাজার উত্তরাঞ্চলে ধ্বংসযজ্ঞের ভিডিও ফুটেজও পোস্ট করেছেন তিনি। ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, ‘সীমাহীন ধ্বংসযজ্ঞ এবং জনশূন্যতার মাধ্যমে গাজাকে বসবাসের অযোগ্য করে ফেলা হয়েছে।’
বন্দী নিয়ে ধারণা নেই : গাজায় দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তাক্ত সঙ্ঘাতের অবসান ঘটাতে যেকোনো চুক্তির জন্য সেখানে অবশিষ্ট ১২০ বন্দীর জীবিত থাকা এবং তাদের ইসরাইলে ফেরাটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, বন্দীদের মধ্যে কতজন বেঁচে আছেন সে সম্পর্কে ‘কারো কোনো ধারণা নেই।’ সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামাসের মুখপাত্র ও রাজনৈতিক বিভাগের সদস্য ওসামা হামদান স্থগিত হওয়া যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার বিষয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির অবস্থান জানান।
পাশাপাশি গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির কারণ হয়ে ওঠা গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামলার ঘটনার জন্য হামাস অনুতপ্ত কিনা, তারও ব্যাখ্যা দিয়েছেন হামদান। চলতি সপ্তাহে গাজায় হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া শিনওয়ারের ফাঁস হওয়া একটি বার্তা নিয়েও কথা বলেছেন হামদান। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, যুদ্ধবিরতির আলোচনার চাবিকাঠি এখন হামাসের হাতে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বৃহস্পতিবার এনবিসিকে বলেন, এই দরাদরি বন্ধ করতে হবে।
শিনওয়ার প্রসঙ্গে ব্লিনকেন বলেন, ‘তিনি মাটির নিচে তুলনামূলকভাবে নিরাপদ; তিনি যে জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করতে চান, তারা প্রতিদিন কষ্ট পাচ্ছেন।’ সিএনএনকে হামদান বলেছেন, আলোচনার টেবিলে সর্বশেষ প্রস্তাব হচ্ছে একটি ইসরাইলি পরিকল্পনা, যা গত মাসের শেষের দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রথম প্রকাশ্যে আনেন। এটি যুদ্ধ বন্ধে তাদের দাবির সাথে মেলে না।
‘হামাসের যুদ্ধবিরতি মেনে নেয়া, গাজা থেকে সম্পূর্ণ (ইসরাইলি সেনা) প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনিদেরকে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে দেয়ার জন্য ইসরাইলের কাছ থেকে একটি স্পষ্ট অবস্থান দরকার। পুনর্গঠন, অবরোধ (প্রত্যাহার) এবং আমরা বন্দিবিনিময় সম্পর্কে একটি ন্যায্য চুক্তি সম্পর্কে কথা বলতে প্রস্তুত।’ যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত এই প্রস্তাব নিয়ে সম্প্রতি আলোচনা জোরদার হলেও হামাস দলিলটি পাওয়ার ১২ দিন পর বুধবার প্রতিক্রিয়া জানানোর পর আলোচনা থেমে যায়।
তবে হামদান সিএনএনকে বলেছেন, যুদ্ধবিরতির সময়কাল হামাসের জন্য একটি মূল বিষয় ছিল। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, ইসরাইলের চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায় অনুসরণ করার কোনো ইচ্ছা নেই। তিনি আরো বলেন, ‘শত্রুতার অবসান অবশ্যই স্থায়ী হতে হবে এবং ইসরাইলকে অবশ্যই গাজা থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে। ইসরাইলিরা কেবল ছয় সপ্তাহের জন্য যুদ্ধবিরতি চায় এবং তারপর তারা লড়াইয়ে ফিরে যেতে চায়। আমি মনে করি, আমেরিকানরা এখন পর্যন্ত ইসরাইলিদের স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে পারেনি।’
ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি : সম্প্রতি ইউরোপের তিন দেশ- আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও স্পেন ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। এবার খোদ ব্রিটেনের বিরোধী দল লেবার পার্টি ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আগামী ৪ জুলাই দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বচনকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার ইশতেহার ঘোষণা করেছে লেবার পার্টি। নির্বাচনী ওই ইশতেহারে ক্ষমতায় গেলে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ব্রিটেনের প্রধান এই বিরোধী দল।
লেবার পার্টির নির্বাচনী ওই ইশতেহারে বলা হয়, ফিলিস্তিনে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দেশটিকে আমরা স্বীকৃতি দেবো। এর আগে ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টিও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, গাজায় যুদ্ধ শেষ হলে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে দলটি। এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৩৯টি দেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। গত ১০ মে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদের এক ভোটাভুটিতে ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৩টি দেশ ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্য পদপ্রাপ্তির পক্ষে ভোট দিয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা