ঝিনাইদহের আ’লীগ নেতা মিন্টু ৮ দিনের রিমান্ডে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৪ জুন ২০২৪, ০০:০৫
ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন ডিবি পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন তার ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে ধানমন্ডি থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে ডিবি পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনায় তার সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাকে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
এ দিকে আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানতে না পারলেও প্রতিদিন বেরিয়ে আসছে নতুন নতুন তথ্য। তবে এলাকার অনেকেই মনে করছেন এসব তথ্য প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করে কোনো মহলকে বাঁচাতে পারে। একই সাথে হয়রানির শিকার হতে পারে নির্দোষ মানুষগুলো। তারা চান আনার হত্যার প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসুক। একই সাথে জড়িতরা শাস্তি পাক। ইতোমধ্যে আনার হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ, গ্রেফতার নিয়ে ঝিনাইদাহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি দিয়েছেন।
তারা বলছেন, বিচারের দাবির মধ্যে স্বার্থ ঢুকে গেলে আনার হত্যার প্রকৃত কারণ কখনোই আলোর মুখ দেখবে না। আর এই সুযোগে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে স্বার্থান্বেষী মহল তাদের অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করবে। এরই মধ্যে আনারকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখার একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে, যা দুই দেশের গোয়েন্দারা ধারণা করছেন এটি আনার হত্যাকাণ্ডের আগে বা পরের কোনো ছবি। গোয়েন্দারা মনে করছেন, যেহেতু একটি ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাহলে আড়ালে থাকা হত্যাকারীদের কাছে আরো ছবি বা ভিডিও থাকতে পারে। হয়তো সেগুলো ধাপে ধাপে প্রকাশ পেতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশ পাওয়া ছবিতে দেখা যায় যেখানে দেখা যায়, কলকাতার সঞ্জিবা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যার পর একটি চেয়ারে তার দুই হাত রশি দিয়ে বাঁধা হয়। গামছা দিয়ে বাঁধা হয় গলা। সাদা কাপড় দিয়ে বাঁধা হয় মুখ এবং কালো কাপড় দিয়ে চেয়ারের পেছনের অংশের সাথে বাঁধা হয় মাথা। কসাই জিহাদ তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানিয়েছে, আনারকে হত্যা করার পর ওই ফ্ল্যাটে একটি চেয়ারের সঙ্গে এভাবে বেঁধে রাখা হয়। এরপর সিদ্ধান্ত হয় লাশ টুকরো টুকরো করার। এরপর হাড় থেকে মাংস আলাদা করে বাথরুমে ফেলে ফ্ল্যাশ করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, অজ্ঞান করার রাসায়নিক ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে আনারকে বালিশচাপা দিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি খুনিরা। আনারকে চেয়ারে বসিয়ে তার হাত ও পা শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়। জিহাদের দেয়া তথ্যে গোয়েন্দারা জানতে পারে, ফ্ল্যাটের বাথরুমে টুকরো টুকরো করে আনারের দেহাংশ ফ্ল্যাশ করা হয়।
এ দিকে এমপি আনার অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন অভিযোগ ও তথ্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের মধ্যে। এটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচিও দিচ্ছেন তারা। কেউ বলছেন, এমপি আনার নিখোঁজের পর তার নির্বাচনী আসন শূন্য হবে। এই সুযোগে ওই আসনের এমপি হতে একটি মহল নোংরা রাজনীতি শুরু করেছে। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে অনেক নিরপরাধ লোককেও ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। এভাবে চলতে থাকলে আনার হত্যার প্রকৃত ঘটনা আড়ালে চলে যাবে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে ভারতে যান এমপি আনার। ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পর দিন চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন তিনি। ১৮ মে বরাহনগর থানায় এমপি আনারের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে একটি জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। ২২ মে খবর ছড়ায়, কলকাতার নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনস নামের একটি আবাসিক ভবনে আনার খুন হয়েছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা