১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
মন্ত্রিসভা কমিটিতে ১৫ প্রস্তাব অনুমোদন

ভারতীয় গ্রিড ব্যবহারে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানি হবে

-


নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে ৫ বছরের জন্য ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে। এতে ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি টাকা।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো: মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বৈঠকে এটি ছাড়া আরো ১৪টি প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এর মধ্যে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য অনুমোদনও দেয়া হয়।
মাহমুদুল হোসাইন জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮ টাকা ১৭ পয়সা।
কবে নাগাদ চুক্তি হবে? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন প্রশ্ন করা হলে সচিব মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, এটা এখন চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হবে। কারণ বিদ্যুৎ নেপালের, আসবে ভারতের সঞ্চালন লাইন হয়ে। কবে নাগাদ নেপালের বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সম্ভবত প্রধানমন্ত্রীর নেপালে একটি সফর আছে। সেখানে হয়তো এই চুক্তি সম্পন্ন হবে। তিনি আরো বলেন, পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করা হবে। প্রতি বছরে আনুমানিক ১৩০ কোটি টাকা লাগবে। এতে পাঁচ বছরে আনুমানিক ব্যয় হবে ৬৫০ কোটি টাকা। ভারতের গ্রিড ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে এই বিদ্যুৎ যুক্ত হবে।

জানা গেছে, এর আগে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানি করতে নীতিগত অনুমোদন দেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাবিউবো আন্তর্জাতিক ক্রয়প্রস্তাব ইস্যু করলে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি (এনইএ) এবং ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ভাইপার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন) প্রস্তাব দাখিল করে।
পিইসি প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে সুপারিশ করা দর প্রস্তাবে নেপাল ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয়ে পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করা হবে। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার ক্ষেত্রে ভারতের মোজাফফরবাদ সাবস্টেশনে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম ধরা হচ্ছে ৬ দশমিক ৪০ ইউএস সেন্ট। এনভিভিএন ট্রেডেং মার্জিন হবে দশমিক শূন্য ৫৯৫ ভারতীয় রুপি। আর ট্রান্সমিশন চার্জ হবে ভারতের সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশনের (সিইআরসি) নিয়ম অনুযায়ী।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ে গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, নেপালের ত্রিশুলি প্রকল্প থেকে ২৪ মেগাওয়াট এবং অন্য একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৬ মেগাওয়াটসহ মোট ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসবে। ভারত হয়ে ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে এই বিদ্যুৎ আসবে।

টিসিবির জন্য ৫৩৭ কোটি টাকার ডাল-তেল কেনা : ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য ৫৩৬ কোটি ৯৮ লাখ টাকার সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৩৩১ কোটি ৯৮ লাখ টাকার সয়াবিন তেল এবং ২০৫ কোটি টাকার মসুর ডাল রয়েছে। এ বিষয়ে সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো: মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের জানান, টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী এক কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে ২০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ধরা হয়েছে ১০২ টাকা ৫০ পয়সা। এতে ২০ হাজার টন মসুর ডাল কিনতে মোট খরচ হবে ২০৫ কোটি টাকা। নাবিল নাবা ফুড প্রডাক্ট লিমিটেড থেকে এই মসুর ডাল কেনা হবে। এটি সংগ্রহ করা হবে ‘নাবিল নাবা ফুড প্রডাক্ট’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে। অন্য দিকে সয়াবিন তেল সরবরাহ করবে সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড। প্রতি লিটার ১৫০ টাকা ৯০ পয়সা হিসাবে এই সয়াবিন তেল কিনতে মোট খরচ হবে ৩৩১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
১৩৮৭৬ কোটি টাকার জ্বালানি তেল কিনবে সরকার : চলতি বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে ১৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকার পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিরও অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
সাংবাদিকদের জানানো হয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে আন্তর্জাতিক কোটেশন প্রক্রিয়ায় পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির অনুমোন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। এ জন্য বিপিসির ১৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা বাজেট অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ের জন্য পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যে ৫টি প্যাকেজে বিভক্ত করে আন্তর্জাতিক কোটেশন আহ্বান করা হয়। সাতটি প্রতিষ্ঠান থেকে দরপ্রস্তাব জমা পড়ে। তার মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়।
প্রস্তাবের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশ করা রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের ইউনিপেক সিঙ্গাপুর প্রাইভেট লিমিটেড এবং ভিটল এশিয়া প্রাইভে লিমিটেড থেকে ১৫ লাখ ৮০ হাজার টন জ্বালানি তেল আমদানি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১১৭ কোটি ৬৯ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৩ হাজার ৮৭৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।
প্রতি ব্যারেল জেটএ-১ এর দাম পড়বে ১০.৮৮ ডলার। এছাড়া প্রতি ব্যারেল গ্যাস অয়েল ৮.৮৩ মার্কিন ডলার, ফার্নেস অয়েল ৪৬.৭২ ডলার, মোগ্যাস ৯.৮৮ ডলার এবং মেরিন ফুয়েল ৭৬.৮৮ ডলার দিয়ে কেনা হবে। এই দামে গ্যাস অয়েল ১০ লাখ মেট্রিক টন, জেট-এ-১ ২ লাখ মেট্রিক টন, ফার্নেস অয়েল ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, মোগ্যাস ১ লাখ মেট্রিক টন এবং মেরিন ফুয়েল ৩০ হাজার মেট্রিক টন আমদানি করা হবে।
প্রায় ৫৯৩ কোটি টাকার সার কিনবে সরকার : তিউনিশিয়া, কানাডা, মরক্কো এবং বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো) থেকে ৫৯২ কোটি ৯৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৯৯ টাকার সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই সার কিনতে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
রাষ্ট্রীয়পর্যায়ে চুক্তির আওতায় তিউনিশিয়া তেকে ২৫ হাজার টন টিএসপি সার আমদানির অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এই সার আনবে। এতে মোট ব্যয় হবে ১১৬ কোটি ৫৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৩৭ টাকা। প্রতি মেট্রেক টন টিএসপি সারের মূল্য ৩৯৫.২৫ মার্কিন ডলার। এ ছাড়াও ৪-লেনে উন্নীত ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের দাউদকান্দি-চট্টগ্রাম অংশের ৪ বছরের জন্য পারফরম্যান্স বেইজড অপারেশন ও দৃঢ় করার জন্য ১১১ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে দেয়া দুটি প্রস্তাব অনুমোদ দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।

 


আরো সংবাদ



premium cement