১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

তীরে এসে তরী ডুবাল বাংলাদেশ

-

সবাই ধরেই নিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের শটটি গ্যালারিতে আছড়ে পড়বে। স্পিনার কেশব মহারাজের ফুলটস সেই বলে মাহমুদুল্লাহ সজোরে ব্যাট চালালেন। তিনিও ভেবেছিলেন ওই শটেই জয় নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের। তখন দুই বলে ছয়ই দরকার ছিল। কিন্তু তার শট বাউন্ডারি লাইনে এইডেন মার্করামের তালুবন্দী। সাথে সাথে হাফ ছেড়ে বাঁচে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর মাথায় হাত মাহমুদুল্লাহর। এরপর ১ বলে ছয় দরকার এই অবস্থায় তাসকিন ক্রিজে এসে এক রানের বেশি নিতে পারেননি। ফলে মামুলি ১১৩ রানকে তাড়া করতে না পারা বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয় ৭ উইকেটে ১০৯ রানে। ফলে গতকাল লো স্কোরিং এই ম্যাচে ৪ রানের অবিশ্বাস্য জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। আর বাংলাদেশের তীরে এসে তরী ডোবানোর কষ্ট।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে বাংলাদেশের দরকার ছিল ১১ রান। কেশব মহারাজের প্রথম বল ওয়াইড, দ্বিতীয় বলে এক রান, তৃতীয় বলে দুই রান, চতুর্থ বলে জাকির আউট (৮), পঞ্চম বলে এক রান, ষষ্ঠ বলে রিয়াদ আউট (২৭ বলে ২০) , সপ্তম বলে তাসকিনের এক রান নিলে ৭ রানই যোগ হয়। এতেই হার নিশ্চিত টাইগারদের।
বরাবরের মতোই ব্যর্থ টাইগার ব্যাটিং স্কোয়াড। শ্রীলঙ্কার ম্যাচেরই যেন পুনরাবৃত্তি। টপ অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ। আগের মতোই হাল ধরেছিলেন তৌহিদ হৃদয় ও অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু পারলেন না শেষ পর্যন্ত দলকে জেতাতে। ম্যাচ টেম্পারমেন্ট ধরে রাখতে পারলো না। ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সাউথ আফ্রিকা ডি গ্রুপ শীর্ষে। বাংলাদেশের বাকি দুই ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে নেদারল্যান্ড ও নেপালের বিপক্ষে।
দুই পেসার তানজিম হাসান সাকিব ও তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্যে টি-২০ বিশ^কাপে ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে বড় স্কোর করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১১৩ রান করেছে প্রোটিয়ারা। জবাবে খেলতে নেমে ব্যাটারদের ব্যর্থতায় ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৯ রানই করতে পারে শান্ত বাহিনী।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম ওভারের শেষ বলে ওপেনার রেজা হেনড্রিক্সকে খালি হাতে বিদায় দেন তানজিম। নিজের দ্বিতীয় ওভারেও ১১ বলে ১৮ রান করা ডি কককে বোল্ড করেন তানজিম। ইনিংসে চতুর্থ ওভারে দারুণ এক ডেলিভারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক আইডেন মার্করামকে (৪) বোল্ড করেন তাসকিন। নিজের প্রথম দুই ওভারে উইকেট নেয়া তানজিম তৃতীয় ওভারে সাকিব আল হাসানের ক্যাচে মিডল অর্ডার ব্যাটার ট্রিস্টান স্টাবসকে খালি হাতে সাজঘরে ফেরত পাঠান তানজিম। পঞ্চম ওভারে দলীয় ২৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। এই নিয়ে চতুর্থবার বিশ^কাপে পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষের ৪ উইকেট শিকার করলো বাংলাদেশ।
এর পর হেনরিচ ক্লাসেন ও ডেভিড মিলার উইকেট ধরে খেলে ১০ ওভার শেষে দলের রান ৫৭তে নেন তারা। ১১তম ওভারে প্রথমবারের মতো বোলিং আক্রমণে এসে প্রথম ডেলিভারিতে মিলারকে বিদায়ের পথ তৈরি করেছিলেন রিয়াদ। কিন্তু উইকেটের পেছনে মিলারের ক্যাচ নিতে পারেননি লিটন দাস। ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে ক্লাসেনের (৪৬) উইকেট নেন তাসকিন। পরের ওভারে মিলারকে (২৯) বোল্ড করেন রিশাদ। দলীয় ১০৬ রানের মধ্যে ক্লাসেন ও মিলার ফেরার পর ইনিংসের বাকি ১০ বলে ৭ রানের বেশি করতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১১৩ রানের সংগ্রহ পায় প্রোটিয়ারা। তানজিম ১৮ রানে ৩টি ও তাসকিন ১৯ রানে ২ উইকেট নেন। রিশাদ নেন ১ উইকেট। মোস্তাফিজ কোনো উইকেট না পেলেও ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দেন।
বাংলাদেশের একাদশে সৌম্য সরকার বদলে সুযোগ পেয়েছেন জাকের আলী। গত ছয় টি-২০তে সৌম্যর সর্বোচ্চ রান ছিল ৪৩। জবাবে খেলতে নেমে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি প্রথম চার ব্যাটার তানজিদ হাসান তামিম (৯), নাজমুল হোসেন শান্ত (১৪), লিটন দাস (৯), সাকিব আল হাসান (৩)। ৯.৫ ওভারে দলীয় ৫০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা শিবিরের হাল ধরেন আগের ম্যাচের নায়ক তৌহিদ হৃদয় ও মাহমুদুল্লাহ। যখন জয়ের জন্য ২২ বলে ২৬ রান দরকার, তখন বার্টম্যানের বলে মাহমুদুল্লাহকে এলবিডব্লিউর ইশারা আম্পায়ারের। অভিজ্ঞ মাহমুদুল্লাহ রিভিউ নিয়ে টিকে যান। ১৮তম ওভারের রাবাদার প্রথম বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেন তৌহিদ হৃদয় (৩৪ বলে দুটি করে চার ছক্কায় ৩৭ রান)। রিয়াদের সঙ্গী হন জাকের আলী। জাকেরের বিদায়ের পর রিশাদ আসেন। কিন্তু এই বিগ হিটার ছক্কা মারতে গিয়ে লেগবাইতে এক রান নেন। এরপর আর স্ট্রাইকই পাননি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১০৯ রান। তাতে ৪ রানের জয় পায় প্রোটিয়ারা।


আরো সংবাদ



premium cement