১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
ইইউ নির্বাচনে কট্টরপন্থীদের অগ্রগতি

ফ্রান্সে আগাম নির্বাচন পদত্যাগের ঘোষণা বেলজিয়াম প্রধানমন্ত্রীর

-


ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থীদের অগ্রগতিতে হতাশ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম পার্লামেন্ট নির্বাচনের ডাক দিয়েছেন। তেমনি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু। এতে ইউরোপের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। রোববারের নির্বাচনে ৭২০ আসনের ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে মধ্যপন্থী, উদারপন্থী ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলো সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার পথে থাকলেও এই ভোট নিজ দেশে ফ্রান্স ও জার্মানির নেতাদের জন্য ধাক্কা হয়ে এসেছে, এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রধান শক্তিগুলো ব্লকটির নীতি কিভাবে পরিচালিত করবে তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রয়টার্স ও আনাদোলু।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ভেতরে ডানপন্থীদের অবস্থান জোরালো হলে নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব অথবা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শিল্প ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা নিয়ে নতুন আইন পাস করা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষমতা বৃদ্ধির বিরোধী জাতীয়তাবাদী দলগুলো কতটা প্রভাব অর্জন করতে পারবে তা তাদের নিজেদের মধ্যকার পার্থক্য ঘুচিয়ে এক সঙ্গে কাজ করার সামর্থ্যরে ওপর নির্ভর করছে। বর্তমানে তারা পৃথক দু’টি রাজনৈতিক পরিবারের মধ্যে বিভক্ত হয়ে আছে আর কিছু দল ও আইনপ্রণেতা এই দলাদলির বাইরে অবস্থান করছে।
ফ্রান্সে অতি-দক্ষিণপন্থী ল্যপেনের ন্যাশনাল র‌্যালি, অস্ট্রিয়ায় ফ্রিডম পার্টি অব অস্ট্রিয়া এবং জার্মানিতে অলটারনেটিভ অব জার্মানি (এএফডি) ভালো ফল করেছে। কিন্তু তারা গোটা ইউরোপের রাজনৈতিক মানচিত্রকে অবিলম্বে বদলে দেয়ার মতো জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। এটা ঠিক, আগের তুলনায় অতি-দক্ষিণপন্থীদের সদস্যসংখ্যা বাড়বে। তারা আরো জোরালোভাবে তাদের মতামত জানাতে পারবেন।

অতি-দক্ষিণপন্থীরা সবচেয়ে ভালো করেছে ফ্রান্সে। তারা প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর দলের থেকে দ্বিগুণ ভোট পেয়েছে। ম্যাক্রোঁর দল পেয়েছে ১৫ শতাংশ ভোট ও ন্যাশনাল র‌্যালি পেয়েছে ৩০ শতাংশ ভোট। এর পর ম্যাক্রোঁ নিজের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টায় ঝুঁকি নিয়ে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ভেঙে দিয়ে আবার নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন, যার প্রথম দফা ভোট ৩০ জুন গ্রহণ করা হবে। ল্যপেন এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন।
মাক্রোঁর মতো জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসও রোববার মানসিক যন্ত্রণায় এক রাত কাটিয়েছেন, কারণ তার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটসরা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে এ পর্যন্ত সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে। জার্মানির মূল ধারার রক্ষণশীল ও চরম ডানপন্থী দল অলটারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) কাছে ধরাশায়ী হয়েছে তারা। চ্যান্সেলর শলৎসের দল এসপিডি তৃতীয় স্থানে আছে। শলৎসের জোট শরিক গ্রিন পার্টিও ১০টি আসন হারাচ্ছে। অতি-দক্ষিণপন্থী এএফডি আছে দ্বিতীয় স্থানে। তবে জার্মানিতে রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ সবচেয়ে বেশি ভোট পাচ্ছে। মধ্য-ডানপন্থী ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটস (সিডিইউ)-এর জার্মান বিরোধীদলীয় নেতা ফ্রিডরিশ মার্ৎস বলেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে তার দলের জয় প্রত্যাশিত। এটা বোঝা যাচ্ছে জার্মান ভোটাররা অবশ্যই পরিবর্তন চায়।
ইতালিতে মেলোনি ও পোল্যান্ডে মধ্যপন্থী নেতা ডোনাল্ড টাস্কের দল ভালো ফল করতে চলেছে। সুইডেন, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডে বামপন্থী ও গ্রিন পার্টি ভালো ফল করেছে। ডেনমার্কে ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা হয়ে গেছে। পর্তুগালে বিরোধী সোশ্যালিস্ট পার্টি আটটি আসনে ৩২ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সাতটি আসনে ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স ৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। বিদেশে দূতাবাসে যারা ভোট দিয়েছেন, তাদের বাদ দিয়ে অন্য সবার ভোট গণনা হয়ে গেছে। চেক প্রজাতন্ত্রে বিরোধী এএনও ২৬ শতাংশ ভোট পেয়ে এক নম্বরে আছে। তারা সাতটি আসনে জয়ী হয়েছে। ২২ শতাংশ ভোট ও ছয়টি আসন পেয়েছে মধ্য-ডানপন্থী জোট এসপিওএলইউ।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির অবস্থান আরো দৃঢ় হয়েছে, তার চরম রক্ষণশীল দল ব্রাদার্স অব ইতালি অধিকাংশ ভোট পাচ্ছে, ভোটের পরবর্তী জরিপে এমনটি দেখা গেছে। নতুন পার্লামেন্টে মধ্য-ডানপন্থী ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি (ইপিপি) সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক পরিবার হতে যাচ্ছে বলে ভোট পরবর্তী জরিপে দেখা গেছে। ইউরোপিয়ান কমিশনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়ন ইপিপির সদস্য। দ্বিতীয় মেয়াদে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট হতে চাওয়া লিয়নের জন্য এ রকম ফলাফল শুভ সংবাদ হয়ে আসবে। জাতীয়তাবাদী দলগুলোর আরেকটি পরিবার হলো ইউরোপিয়ান কনজারভেটিভ অ্যান্ড রিফরমিস্টস (ইসিআর)। ইতালির মেলোনির ব্রাদার্স অব ইতালি এই পরিবারভুক্ত।
পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে নিজের দল পরাজিত হওয়ার পর এই ঘোষণা দেন তিনি। ওই নির্বাচনে তার দল মাত্র ৬ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ইউরোপীয় নির্বাচনে খারাপ ফলাফলের পর নাটকীয় ঘটনার মধ্যে আলেকজান্ডার ডি ক্রু বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।

ইতালীয় বার্তা সংস্থা এজেনজিয়া নোভার মতে, ফেডারেল নির্বাচনে প্রায় ৯০ শতাংশ ভোট গণনা সম্পন্ন হয়েছে এবং এতে তার দল ওপেন ফ্লেমিশ লিবারেল অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটসের (ওপেন ভিএলডি) উল্লেখযোগ্য পরাজয় হয়েছে। নির্বাচনে দলটি মাত্র ৫.৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে এবং এর পরই পদত্যাগের ঘোষণা দেন আলেকজান্ডার ডি ক্রু। নির্বাচনে নিজের দলের পরাজয় স্বীকার করে ডি ক্রু বলেছেন, ‘আগামীকাল আমি প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করব।’
তবে হতাশাজনক ফলাফল সত্ত্বেও ডি ক্রু উদারপন্থীদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে এখনো বেশ আশাবাদী। তিনি বলেছেন, তারা ‘শক্তিশালী। আমরা ফিরে আসব।’ অবশ্য ডি ক্রু পদত্যাগ করলেও নতুন সরকার দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত তিনি অন্তর্বর্তীকালীন দায়িত্ব পালন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসন এবং এর ফলে বেসামরিক হতাহতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি আওয়াজ তুলেছেন এমন ইউরোপীয় নেতাদের মধ্যে ডি ক্রু অন্যতম।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে ৫৩ নাগরিকের উদ্বেগ ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে দুর্নীতি কে প্রশয় দেয়া হবে না : জাতীয় নাগরিক কমিটি ফতুল্লা থেকে অপহৃত ২ শিশু বরিশাল থেকে উদ্ধার মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করা শিক্ষককে চাকরিচ্যুতের দাবি টাইম ম্যাগাজিনের বর্ষসেরা ব্যক্তি ট্রাম্প আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য দিবসে রিকের র‌্যালি ও মানববন্ধন অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের সভাপতি হাসান শরীফ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল চুয়েটে র‌্যাগিংয়ের দায়ে ১১ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার ঢাকায় উচ্চমাত্রার হর্ন ব্যবহার না করতে ডিএমপির নির্দেশনা তামিমের ঝড়ে জয় পেল চট্টগ্রাম তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে ধোঁয়াশা, কর্মকর্তা প্রত্যাহার

সকল