সরকারের ঋণের জোগান দিতে চাপে ব্যাংক খাত
- আশরাফুল ইসলাম
- ১১ জুন ২০২৪, ০০:২১
ব্যাংকিং খাত থেকে গতকাল এক দিনে সরকার ঋণ হিসেবে তুলে নিয়েছে ৭ হাজার ২০১ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি মেটাতে অর্থবছরের শেষ মাস চলতি জুনে বর্ধিত হারে ঋণ নিতে হবে। আর এতেই চাপে পড়ে গেছে ব্যাংক খাত। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, এমনিতেই তারা নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে চলতে হচ্ছে। গতকালও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৩ হাজার ৪১৩ কোটি টাকার ধার করা হয়েছে। এক দিকে দৈনন্দিন ব্যয় মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ করতে হচ্ছে। অপর দিকে সরকারকে বাড়তি ঋণের জোগান দিতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে তহবিল ব্যবস্থাপনা করতে তাদের এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দেশে ব্যাংকগুলোতে বেশ কয়েক মাস যাবত টাকার সঙ্কট চলছে। প্রতি দিনই এক ধরনের ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার করে চলছে। যখন কোনো উপলক্ষকে কেন্দ্র করে নগদ উত্তোলন বেড়ে যায় তখন এ চাপ বেশি থাকে। যেমন, সামনে ঈদুল আজহা। বছরে অন্য সময়ের চেয়ে এখন গ্রাহকরা কোরবানির পশু ও তাদের প্রয়োজন মেটাতে ব্যাংক থেকে বাড়তি টাকা উত্তোলন করছে। এ কারণে নগদ টাকার সঙ্কটে থাকা ব্যাংকগুলোর জন্য তহবিল ব্যবস্থাপনা করা কঠিন হচ্ছে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাড়তি ধার করতে হচ্ছে। কিন্তু এমনি পরিস্থিতিতে বছরের শেষ মাস হওয়ায় সরকারও ব্যাংক থেকে বাড়তি ঋণ নিচ্ছে। আর সবমিলে ব্যাংকগুলোর চাপ আরো বেড়ে গেছে বলে তারা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত রোববার সরকার বাজেট ঘাটতি মেটাতে ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ৭ হাজার ২০১ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ৯১দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ৬ হাজার ১৬৮ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। অপর দিকে ১৮২ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের মাধ্যমে ৫৫৮ কোটি টাকা এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের মাধ্যমে ৪৭৫ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। আর এ জন্য ৯১দিন মেয়াদি বিলের জন্য সাড়ে ১১ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, ১৮২ দিন মেয়াদি বিলের জন্য ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ৩৬৪ দিন মেয়াদি বিলের জন্য ১১ দশমিক ৯০ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ সুদ গুনতে হয়েছে।
এ দিকে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে যারা ঋণ নিয়েছেন এর মধ্যে বড় গ্রাহকরা ঋণের অর্থ ফেরত দিচ্ছেন না। কোনো কোনো ব্যাংক পরিচালকরা কাগজে পরিশোধ দেখাচ্ছেন। আর এর ফলে ব্যাংকের প্রকৃত আদায় কমে গেছে। অপর দিকে মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ব্যয় বেড়ে গেছে। কিন্তু ওই তুলনায় আয় বাড়েনি। আর এ কারণে ব্যাংক থেকে জমানো টাকা অনেকেই তুলে তাদের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন। এক দিকে ঋণ ফেরত কম আসছে, অপর দিকে উত্তোলন বেড়ে গেছে। সবমিলেই কিছু ব্যাংকের টাকার সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। আর এ সঙ্কট মেটানোর জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার নিচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলো ধার করেছে ১৩ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ দিন মেয়াদি রেপোর মাধ্যমে ১৮১ কোটি টাকা, ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, ১৪ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ৬ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা, ১ দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড লিকুইটি সাপোর্ট ফ্যাসিলিটির আওতায় ৩ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা ও ২৮দিন মেয়াদি আইবিএলএফ এর আওতায় ১৯০ কোটি টাকা ধার করে ব্যাংকগুলো। এ জন্য সর্বোচ্চ সাড়ে ৮ শতাংশ সুদ গুনতে হয়েছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ঋণখেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় এ সঙ্কট দিন দিন আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা