সৌদি রেড সির পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর পিসিটিতে জাহাজ ভিড়ছে সোমবার
বিদেশী অপারেটর দিয়ে প্রথম টার্মিনাল পরিচালনা- নূরুল মোস্তফা কাজী চট্টগ্রাম
- ০৮ জুন ২০২৪, ০২:৩১
চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পতেঙ্গা কনটেনার টার্মিনাল (পিসিটি) সৌদি রেড সি গেটওয়ে টার্মিনালের আরএসজিটি ব্যবস্থাপনায় পুরোদমে চালু হচ্ছে। কোনো বিদেশী অপারেটরের অধীনে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল অপারেশন এটিই প্রথম। তবে এখন পর্যন্ত পিসিটিতে কী গ্যান্ট্রি ক্রেন সংযোজিত না হওয়ায় আপাতত গিয়ারড (ক্রেনযুক্ত) জাহাজই ভেড়ানো হবে টার্মিনালটিতে। আগামী সোমবার এই টার্মিনালে প্রথম নোঙর করবে মার্সক লাইনের কনটেইনার জাহাজ এমভি মার্সক ড্যাবাও।
ইতোমধ্যে সৌদি টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটি বাংলাদেশ লিমিটেডকে পিসিটি পরিচালনার জন্য সাময়িক অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গেল সপ্তাহে দেয়া এই সাময়িক অনুমতিপত্রে ৮টি শর্ত জুড়ে দিয়েছে এনবিআর।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের অপারেশনাল কার্যক্রম চালু করার সাময়িক অনুমতি প্রদান করেছে এনবিআর। এতে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নবনির্মিত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রেড সি গেটওয়ে বাংলাদেশ লিমিটেডের সাথে চবকের একটি কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। উক্ত চুক্তির আওতায় রেড সি গেটওয়ে বাংলাদেশ লিমিটেড উক্ত টার্মিনালে বার্থিং নেয়া জাহাজ থেকে লোডিং, আনলোডিং, ট্রান্সপোর্টিং, হ্যান্ডলিং, ইন্টারন্যাশনাল মুভমেন্ট, কনটেইনার খালাস ও ডেলিভারি, শেড ও ওয়্যারহাউজ থেকে পন্য স্টাফিং এবং আনস্টাফিংসহ সব ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ৬ জুন থেকে পিসিটিতে জাহাজের বার্থিং, আমদানি-রফতানি ও ডেলিভারিসংক্রান্ত অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাস্টমস সংক্রান্ত যাবতীয় আইনি বাধ্যবাধকতা ও আনুষ্ঠানিকতা পালন করে শর্তসাপেক্ষে এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। এনবিআরের দেয়া শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রেড সি গেটওয়ে বাংলাদেশ লিমিটেডের অর্থায়নে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে অ্যাসাইকোডা কানেক্টিভিটি স্থাপনের জন্য যাবতীয় আইটি ইকুইপমেন্ট, এক্সেসরিজ, কম্পিউটার, রাউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানার, ফটোস্ট্যাট মেশিন, ইন্টারনেট কানেকশনসহ কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দাফতরিক কার্যক্রম, এক্সামিনেশন ও আনস্টাফিং কার্যক্রম পরিচালনা এবং কাস্টমস কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ, যানবাহন ও নিরাপত্তা সামগ্রীসহ প্রয়োজনীয় সকল লজিস্টিকস অপারেশনাল কার্যক্রম শুরুর আগেই নিশ্চিত করতে হবে।
বন্দরে অবতরণীয় পণ্য চালানের বিল অব ল্যাডিংয়ের (বিএল) কনটেইনার সেগমেন্টে পিসিটির জন্য বরাদ্দকৃত কনটেইনার লোকেশন কোড ব্যবহার করতে হবে। অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টারের মাধ্যমে বিদ্যমান ব্যবস্থার ন্যায় বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল হতে পণ্য খালাসকালে এক্সিট নোট ইস্যু করতে হবে। শুল্ককর পরিশোধ ও কাস্টমস আনুষ্ঠানিকতা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো পণ্য চালান পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল থেকে সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ডে প্রেরণ করা যাবে না। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে স্ক্যানার স্থাপন না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন অফডক ও ইপিজেডে গমনকারী কনটেইনারগুলো কায়িক পরীক্ষণ সাপেক্ষে নিশ্চিত হয়ে প্রেরণ করতে হবে।
এ ছাড়া পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল থেকে খালাসতব্য এলসিএল কার্গো বোঝাই কনটেইনারগুলো শতভাগ কায়িক পরীক্ষণ করতে হবে এবং এফসিএল কার্গো বোঝাই কনটেইনারগুলো কাস্টমস ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় নির্ধারিত পদ্ধতিতে কায়িক পরীক্ষণ করতে হবে। পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে আগত সকল পণ্য চালানের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার আওতায় কায়িক পরীক্ষণ প্রযোজ্য হবে এবং সে অনুযায়ী রেড সি গেটওয়েকে সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রাইভেট পোর্ট অপারেটরদের বিষয়ে নীতিমালা বা বিধিমালা চূড়ান্ত হলে তার আওতায় আরএসজিটিকে অবিলম্বে লাইসেন্স বা অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, কর্ণফুলী মোহনার নিকটবর্তী হওয়ায় এবং গভীরতা বেশি থাকায় পিসিটিতে অনায়াসেই ১০ থেকে সাড়ে ১০ মিটার গভীরতার বড় কনটেইনার জাহাজ ভেড়ানো যাবে। পাশাপাশি জাহাজ বার্থিংয়ে সময়ও লাগবে কম। ফলে দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন আমদানিকারকরা।
টার্মিনালটি পুরোদমে চালু করতে ৪টি কী গ্যান্ট্রি ক্রেন (কিউজিসি), ৮টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি (আরটিজি), ৪টি স্ট্যাডেল ক্যারিয়ার, ৪টি রিচ স্ট্যাকার, ১টি রেল মাউন্টেড গ্যান্ট্রি (আরএমজি), ৪টি লো-মাস্ট ফর্ক লিফট, ২টি ফায়ার ট্রাক, ১টি ফায়ার কার, ৩টি নিরাপত্তা পেট্রল কার, ১টি অ্যাম্বুলেন্স, ৫০ টনের দু’টি টাগ বোট, ২টি পাইলট বোট, ২টি ফার্স্ট স্পিড বোটসহ অন্তত ৮০০ কোটি টাকার ইকুইপমেন্ট লাগবে। এসব যন্ত্রপাতি পুরোদমে সংযোজন করা গেলে টার্মিনালটি বছরে ৫ লাখ টিইইউএস (২০ ফুট সাইজ) কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে।
গত বছরের ৬ ডিসেম্বর সম্পাদিত কনসেশন চুক্তি অনুযায়ী পিসিটির প্রয়োজনীয় সব ইকুইপমেন্ট বিদেশী অপারেটর ক্রয় করবে। তারা দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ মোট ২২ বছর এই টার্মিনাল পরিচালনা করবে। এরপর ইকুইপমেন্টসহ বন্দরটি যেভাবে থাকে তা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এর মধ্যে কিউজিসি ছাড়া অন্যান্য যন্ত্রপাতি সংগ্রহ বেশি সময় সাপেক্ষ না হলেও কিউজিসি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়ার পর হতে দেড় বছরের বেশি সময় লেগে যায়। ফলে কিউজিসি না আসা পর্যন্ত টার্মিনালটিতে ক্রেনযুক্ত জাহাজই শুধু বার্থিং দেয়া যাবে বলেও সূত্র জানিয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, আগামী ১০ জুন পিসিটি জেটিতে মার্সক লাইনের কনটেইটার জাহাজটি ভিড়বে। এর আগে জাহাজটি বন্দরের সিসিটিতে ভিড়ে কিছু কনটেইনার খালাস করবে বলেও তিনি জানান। রেড সি গেটওয়ে বাংলাদেশ লিমিটেড ইতোমধ্যে জাহাজ ও টার্মিনাল হ্যান্ডলিংয়ের প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করেছে বলেও তিনি জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা