১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
বাজেট নিয়ে বিভিন্ন সংগঠন

প্রস্তাবিত বাজেট ঋণনির্ভর অবাস্তব ও গণবিরোধী

-


প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ কে ঋণনির্ভর, অবাস্তব ও গণবিরোধী উল্লেখ করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে সমমনা ইসলামী দলগুলো। নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সমমনা ইসলামী দলগুলোর এক বৈঠকে বলা হয়, গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী উত্থাপিত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বিশাল ঘাটতি বাজেটে সাধারণ জনগণের কোনো কল্যাণ হবে না। সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল অঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে দেশ-বিদেশ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হবে সরকারকে। বিশেষ করে দেশীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নেবে। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হবে এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাজেট ব্যয়ের বিশাল অংশ খরচ হবে ঋণের সুদ পরিশোধে অর্থাৎ এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা যা বাজেট ব্যয়ের ২২ শতাংশ। এখন বাজেট ব্যয়ের বৃহত্তম খাত হচ্ছে সুদ পরিশোধ। পরিচালন ব্যয় ও সুদ পরিশোধের মতো অনুন্নয়ন খাতেই ব্যয় হবে বাজেটের অধিকাংশ অর্থ। আর প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাস্তব সম্মত নয়। এ বাজেটে জাতীয় ঋণের বোঝা আরো বৃদ্ধি পাবে। প্রদত্ত বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেশে ঘুষ-দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ তলানিতে গিয়ে ঠেকার উপক্রম হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ আজ দিশেহারা। প্রস্তাবিত এ বাজেট দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে কোনো ভূমিকা রাখবে না, বরং নতুন করে বহু জিনিসপত্রের দাম বাড়বে।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির মাওলানা সারোয়ার কামাল আজিজীর সভাপতিত্বে ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহারের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমদ, খেলাফত মজলিসের যুগ্মমহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, অধ্যাপক মো: আবদুল জলিল, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুস্তাফিজুর রহমান মাহমুদী, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জাফল হোসেন মিয়াজী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির দফতর সচিব মুফতি দ্বীনে আলম হারুনী, প্রচার সচিব মাওলানা আবদুল্লাহ আল মাসউদ, সহকারী অর্থ সচিব আলহাজ আনোয়ারুল কবির প্রমুখ।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
২০২৪-২৫ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেট ঋণনির্ভর ও গতানুগতি বলে আখ্যায়িত করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির শায়খুল হাদিস আল্লামা ইসমাঈল নূরপুরী ও মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, রাজস্ব আহরণের ঘাটতির ফলে সরকারকে অতিমাত্রায় বিদেশী ও অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর নির্ভরশীল বাজেট প্রণয়ন করতে হয়েছে। সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত এ বাজেটে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার বিশাল অঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতি মেটাতে দেশ-বিদেশ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে হবে সরকারকে। বিশেষ করে দেশীয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ঋণ নিবে। এতে বেসরকারি ও ব্যক্তিগত খাতে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হবে এক লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বাজেট ব্যয়ের বিশাল অংশ খরচ হবে ঋণের সুদ পরিশোধে যা বাজেট ব্যয়ের ২২ শতাংশ। বাজেট ব্যয়ের বৃহত্তম খাত হচ্ছে সুদ পরিশোধ যা প্রস্তাবিত বাজেটের রাজস্ব আয়ের এক-তৃতীয়াংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে বিশাল ঘাটতি পূরণের কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ঋণ ও ঘাটতিভিত্তিক এত বড় বাজেট বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব। আর্থিক খাতের সংস্কার ও দুর্নীতি, মেগা প্রকল্পের ব্যয় কমানোর কোনো উদ্যোগ এ সরকার গ্রহণ করেনি। মানুষের ভোটের অধিকার হরণকারী সরকার থেকে কখনোই জনবান্ধব ও কল্যাণকর বাজেট প্রত্যাশা করা যায় না। এ বাজেট ঋণনির্ভর, বাস্তবতা বিবর্জিত ও গতানুগতিক।

ওয়ার্কার্স পার্টি
বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির পলিটব্যুরো প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, নতুন অর্থমন্ত্রীর বাজেট প্রস্তাবনা বিদ্যমান অর্থনৈতিক সঙ্কট মোচনে কোনো আশা জাগাতে পারেনি। তিনি সাবেক অর্থমন্ত্রীর পথ ধরেই হেঁটেছেন। বাজেট প্রস্তাবে বর্তমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের বাস্তবতা স্বীকার করা হলেও তা নিরসনে কোনো কার্যকরী কৌশল নির্দেশ করা হয়নি। বৈশ্বিক পরিস্থিতির ওপর অর্থনীতির বর্তমান সঙ্কটের দায় রাখা হয়েছে। অথচ অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতাতেই স্বীকার করেছেন একই বৈশ্বিক বাস্তবতায় ভারত-শ্রীলঙ্কা মূল্যস্ফীতি অনেক নিচে নামিয়ে আনতে পেরেছে। সেখানে বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতি বহুলাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য স্থির করেও পারেনি। এবারো মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার কথা বলা হলেও বাজেটের কর্মকৌশল তা পূরণের নির্দেশ করে না।
মূল্যস্ফীতির কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ নিরসনে যেসব পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল। টিসিবির ডিলারশিপ কিছু বাড়িয়ে নয়, বরং গণবণ্টন ব্যবস্থায় পূর্ণাঙ্গ রেশনিং ব্যবস্থা চালু করেই কেবল নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে নামিয়ে আনা সম্ভব।
ওয়ার্কার্স পার্টির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, দুর্নীতি সম্পর্কে জিরো টলারেন্স নীতির কথা বলা হলেও সর্বগ্রাসী দুর্নীতি কমিয়ে আনার কর্মকৌশলের বদলে বরঞ্চ কালো টাকা সাদা করার যে পদক্ষেপের কথা বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে তাতে উচ্চপর্যায়ে দুর্নীতি আরো উৎসাহিত হবে এবং সমাজের দুর্নীতি আরো বাড়বে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই উচ্চ বৈষম্যের দেশে পরিণত হয়েছে। সেই বাস্তবতা বাজেটে অনুপস্থিত কেবল নয় পরোক্ষ করারোপের মাধ্যমে গরিব-মধ্যবিত্ত-ধনীদের এক কাতারে ফেলা হয়েছে। ফলে ওই বৈষম্যকে জিইয়ে রাখা হয়েছে। বৈষম্য কমিয়ে সম্পদ কর আরোপের জন্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা যে প্রস্তাব করেছেন তাও বিবেচনায় নেয়া হয় নাই। আর্থিক খাত সংস্কারের কথা বলা হলেও ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্য, লুট, ঋণখেলাপি বন্ধের কোনো উদ্যোগ বাজেটে নাই।
ভর্তুকি কমিয়ে আনা ও করারোপের ব্যাপারে আইএমএফের নির্দেশনা মেনে ব্যবস্থা নেয়া হলেও বাজেট কৃষি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হয়েছে, যা ইতিবাচক। তবে কৃষি পণ্যের মূল্য নিশ্চিত করা, ভূমির উচ্চ সিলিং বাস্তবায়নের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে সংস্কারের কোনো বিষয় বাজেটে পরিলক্ষিত হয় না। বিজ্ঞপ্তি।


জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, তথাকথিত ডামি নির্বাচনে গঠিত জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট দেয়া হয়েছে তাতে জনভোগান্তি আরো বৃদ্ধি পাবে এবং লুটেরা শ্রেণী উৎসাহিত হবে। তারা বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে, তাদের আয়-রোজগার অনেক কমে গেছে, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন আশঙ্কাজনক হারে কমছে। এহেন জটিল পরিস্থিতিতে ঋণনির্ভর বিশাল আকারের এই বাজেটে করের আওতা বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং দুর্নীতি ও লুটপাটের দায় সাধারণ জনগণের ওপর চাপানোর অপপ্রয়াস চালানো হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
গতকাল পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের বাজেট পরবর্তী এক পর্যালোচনা বৈঠকে উপস্থিত নেতারা এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। দলের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মুনীর হোসাইন কাসেমী, অর্থ সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক মুফতি জাবের কাসেমী প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement