১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ঋণের সুদব্যয় ১০ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে আড়াই শ’ শতাংশ

-

প্রতি বছরই বাজেটের আকার বাড়ছে। বাড়ছে সরকারের ব্যয়। ফলে বাড়ছে বাজেট ঘাটতি। আর এ ঘাটতি পূরণে দেশের অভ্যন্তর ও বিদেশ থেকে বাড়তি ঋণ নিতে হচ্ছে। আর এ কারণেই বেড়ে যাচ্ছে ঋণের সুদ। গত ১০ অর্থবছরের ব্যবধানে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় বেড়েছে প্রায় আড়াই শ’ শতাংশ বা আড়াই গুণ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য প্রস্তাবিত পরিচালন বাজেটের বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকার অনুন্নয়ন ব্যয়ের একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ। এ হিসেবে ১০ বছরে সুদ ব্যয় বেড়েছে ৮০ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। এ হিসেবে মূল বাজেটের চেয়ে ১৯ হাজার ১২৪ কোটি টাকা বা ২০.২৬ শতাংশ বেশি। তবে সংশোধিত বাজেটে এ ব্যয় আরো বেড়ে হয় এক লাখ পাঁচ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
এ দিকে অনুন্নয়ন বাজেটের মধ্যে বেতনভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮১ হাজার ৪৫৬ কোটি টাকা বা ১৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের পেনশনের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে অনুন্নয়ন ব্যয়ের ৭ দশমিক ২ শতাংশ বা ৩৭ হাজার ১২০ কোটি টাকা। এ হিসেবে বেতনভাতা, পেনশন ও ঋণের সুদ পরিশোধে মোট ব্যয় হবে দুই লাখ ৩২ হাজার ১২০ কোটি টাকা, যা মোট পরিচালন বাজেটের প্রায় অর্ধেক বা ৪৫ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, সরকারের রাজস্ব ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু যে হারে ব্যয় বাড়ছে সেই হারে আয় বাড়ছে না। এতে বাজেট ঘাটতি বাড়ছে। আর বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংক খাতের ওপর নির্ভরশীলতাও বাড়ছে। উচ্চ সুদে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার পাশাপাশি ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে সুদব্যয়। এটা অব্যাহত থাকলে সামনে সরকারি কর্মচারীদের বেতনভাতা ও সুদ পরিশোধেই বাজেটের সমুদয় অর্থ ব্যয় করতে হবে। সঙ্কোচিত হয়ে যাবে উন্নয়ন বাজেট।
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সাত লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার সামগ্রিক বাজেটের মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের জন্য মূল বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল হয়েছিল চার লাখ ৮৪ হাজার ২০৩ কোটি টাকা। এ অনুন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে শুধু ঋণের সুদেই ব্যয় হবে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। যা একক খাত হিসেবে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৯ শতাংশ। কিন্তু ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়েও তা কুলানো যায়নি। ফলে সংশোধিত বাজেটে সুদ ব্যয় বাড়িয়ে এক লাখ পাঁচ হাজার ৩০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।
বিশ্লেষকরা জানান, প্রতি বছরই সরকার বাজেটের আকার বাড়াচ্ছে। কিন্তু সে অনুযায়ী আয় বাড়াতে পারছে না। এ কারণে ঋণনির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে বাজেট বাস্তবায়নে। ঋণনির্ভরতা বেড়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে সুদব্যয়। যেমন, গত ৮ অর্থবছরের ব্যবধানে সুদব্যয় বেড়েছে প্রায় আড়াই শ’ শতাংশ বা প্রায় আড়াই গুণ। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেটে সুদব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এ হিসেবে সাত অর্থবছরের ব্যবধানে তা বেড়েছে ৮০ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা, যা শতকরা হিসেবে ২৪২ ভাগ।
বিশ্লেষকরা জানান, চলতি অর্থবছরে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ে বিশাল অঙ্কের অর্থাৎ পাঁচ লাখ ৪৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতি বাজেট দেয়া হয়েছে দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এ ঘাটতি বাজেটের পুরোটাই ঋণের মাধ্যমে অর্থায়ন করা হবে। এ ঋণের মধ্যে ব্যাংকসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া হবে এক লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেয়া হবে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাক। আর ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে ঋণ নেয়া হবে ২৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর ঘাটতি বাজেট অর্থায়নে বিদেশী উৎস থেকে ঋণ নেয়া হবে ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

এ দিকে দেশে ডলার সঙ্কট চলছে। ডলার সঙ্কটের কারণে পণ্য আমদানি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। এতে আগামী দিনে আমদানির ওপর আরো কঠোরতা আরোপ করা হবে। ফলে কাক্সিক্ষত হারে শুল্ক আদায় নিয়ে সংশয় রয়েছে। অপর দিকে শিল্প উৎপাদন কমে যাওয়ায় সামগ্রিক আয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলে সামগ্রিকভাবে রাজস্ব আদায় কমে যেতে পারে। এর ফলে ফলে চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরের বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও কঠিন হতে পারে। এটা হলে সরকারের ব্যয় ঠিক রাখতে আগামী অর্থবছর শেষে ব্যাংক ঋণ লক্ষ্যমাত্রা ছেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে সুদব্যয় আরো বেড়ে যাবে। এটা কমাতে না পারলে সুদব্যয় পরিশোধেই বাজেটের বেশির ভাগ ব্যয় হয়ে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement
‘আপত্তিকর ভাষা’ ব্যবহারে শাস্তি পেলেন জোসেফ শ্রীমঙ্গলে হত্যা মামলায় প্রেমিক গ্রেফতার জামায়াত নেতা কাজী ফজলুল করিমের মৃত্যুতে ড. রেজাউল করিমের শোক প্রকাশ বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষায় দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে মাঠে থাকব : মুন্না আমতলীতে ব্যবসায়ীকে আত্মহত্যার প্ররোচনায় জড়িতদের বিচার দাবি সিরিয়া নিয়ে আশা ও শঙ্কা ইসরাইলের সিরিয়ায় বাশারের পতনে ইসরাইল কতটুকু লাভবান অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ৫৭৯ কর্মকর্তা লক্ষ্মীপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহত ৫ এ দেশে রাজনীতি করতে হলে জনগণের সেবক হয়েই রাজনীতি করতে হবে : সেলিম উদ্দিন এখন সময় শান্তি ও স্থিতিশীলতার : অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী

সকল