সরকারই বেনজীরকে গোপনে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে
- চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০১
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশ হওয়ার পর সরকারই তাকে বাঁচাতে গোপনে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, সাবেক আইজিপি ও সাবেক র্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে। এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে তিনি জায়গা জমি কেনেননি। হিন্দুদের জায়গা দখল করেছেন। সরকার তাকে বাঁচাতে গোপনে পাচার করে দিয়েছে। তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে সাবেক সেনাপ্রধানের ওপর। এ সরকার হাজার হাজার বেনজীর-আজিজ সৃষ্টি করেছে আর গোটা দেশটাকে গিলে খাচ্ছে তারা।
তিনি মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম মিলনায়তনে চট্টগ্রাম ফোরাম আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
নাগরিক সমাজের সংগঠন চট্টগ্রাম ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে ‘জাতিসত্তার রূপকার : রাষ্ট্রনায়ক জিয়াউর রহমান’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। এতে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব ও পেশাজীবী নেতা কাদের গণি চৌধুরী।
মীর্জা ফখরুল বলেন, চট্টগ্রামের মাটি সবসময় স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দিয়েছে। গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য চট্টগ্রামের মানুষ যে লড়াই করছে তা তুলনাহীন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানের এত বিরোধিতা করে কিন্তু পাসপোর্ট থেকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ বাদ দিতে পারেনি। তারা দাবি করে জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের চর ছিলেন, যুদ্ধ করেননি। কিন্তু পাক হানাদার বাহিনী যখন আক্রমণ করল, সবাই পালিয়ে ছিলেন। সেই মুহূর্তে বেতারে চট্টগ্রাম থেকে মেজর জিয়া বলেছিলেন, স্বাধীনতা ঘোষণা করছি, যা স্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠেছিল বাংলাদেশে। এটি অস্বীকার করার উপায় নেই।
মির্জা ফখরুল আরো বলেন, আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর ছিল দুঃশাসনের। তারা জিয়াউর রহমানকে ছোট করে দেখাতে চায় এবং তার নাম মুছে ফেলতে চায়। কিন্তু ইতিহাস জিয়াকে ধারণ করেছে। চাইলেই তাকে কি মুছে ফেলা যায়।
ফখরুল বলেন, জিয়া মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু করেছিলেন। বাংলাদেশে যা কিছু সুন্দর এবং সম্ভাবনাময় সবকিছুই চালু করেছিলেন জিয়া। কিন্তু আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রবিরোধী। তারা বিনা ভোটে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে লুটের-চুরির রাজত্ব সৃষ্টি করেছে।
তিনি বলেন, মাল্টিপার্টি ডেমোক্র্যাসি আওয়ামী লীগ চায়নি। তারা সব সময় চেয়েছে তারা নিজেরাই একাই সবসময়ই দেশ শাসন করবে, আর কেউ করবে না। তারা লুটপাট করবে, সবকিছু তারাই নিয়ে যাবে এবং করেছেও তাই। ওই পাঁচ বছর ছিল আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বছর। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বপ্নকে সেদিন ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং প্রথম সংবিধান তারা কাটাছেঁড়া করে নষ্ট করেছিল। প্রথমে তারা বিশেষ ক্ষমতা আইন করেছে, এরপর তারা জরুরি অবস্থা আইন করেছে। সবশেষে যখন সামাল দিতে পারছিল না তখন তারা সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে দিয়ে একদলীয় শাসন অর্থাৎ বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।
আওয়ামী লীগ আবার নতুন করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই শেখ মুজিবুর রহমান তিনি গণতন্ত্রের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন। তার নেতৃত্বে মাত্র ১১ দিনের পার্লামেন্টের একটি সভায় সেদিন গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল তৈরি করা হয়েছিল। এই বাকশাল ছিল বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার বিরুদ্ধে। বাকশাল সৃষ্টি করে তারা সমস্ত জাতিকে শৃঙ্খলিত করে ফেললেন। কারো কোনো ভিন্ন মত থাকতে পারবে না। এক নেতার এক দেশ। আজকে সেই আওয়ামী লীগ আবার নতুন করে সেই বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্য গত ১৫ বছর ধরে কাজ করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শেখ মুজিবুর রহমানকে কখনো ছোট করি না। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হওয়ার পরে সেই ব্যবস্থাকে বাতিল করে দিয়ে গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। এগুলো বাস্তবতা, এসব বললে আওয়ামী লীগের গা জ্বলে যায়। তারা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে গালিগালাজ করে এবং তাকে ছোট করতে চায়। আমরা শেখ মুজিবুর রহমানকে কখনো ছোট করি না। আমরা অন্যান্য যে জাতীয় নেতারা আছেন তাদের স্মরণ করতে চাই, তাদের কথা বলি। কিন্তু আওয়ামী তা চায় না। একজন ভদ্র মানুষ তাদের কাছে সব।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বপ্ন ছিল একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। আর এরা আমাদেরকে দিচ্ছে দুর্নীতি আইনের শাসনকে শেষ করে দিয়ে, নির্বাচনব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়ে তারা আমাদের ডামি নির্বাচন আর মধ্যরাতের নির্বাচন- এসব দিচ্ছে। মানুষ এসব বেশিদিন সহ্য করবে না। মানুষ প্রতিবাদ, লড়াই ও সংগ্রাম করছে, আরো করবে।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা: শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব আবুল হাশেম বক্কর, স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম ফোরামের আহবায়ক একরামুল করিম। ড্যাবের কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ডা: এস এম সারোয়ার আলম সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীনসহ কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, সহ ধর্ম সম্পাদক দিপেন দেওয়ান, সহ উপজাতি সম্পাদক কর্নেল মনিষ দেওয়ান, কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক হুইপ শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাচিং প্রু জেরী, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সি. যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ মামুন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চট্টগ্রামের আহ্বায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, সদস্যসচিব ডা: খুরশীদ জামিল চৌধুরী, সিএমইউজে সভাপতি মোহাম্মদ শাহনওয়াজ প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা