আসামিদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চায় ডিবি : রহস্য বের করা কর্মকর্তাকে বদলি
এমপি আজিম হত্যা- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৪ জুন ২০২৪, ০০:০০
ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের মামলার আসামিদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতে আদালতে আবেদন করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ দিকে আজীম অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় রহস্য উদ্ঘাটনকারী পুলিশ কর্মকর্তাকে হঠাৎ বদলি করা হয়েছে। তার নাম শাহিদুর রহমান রিপন। তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে কর্মরত। তাকে বদলি করে বরিশাল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, আজীম অপহরণ মামলার ১০ আসামির ব্যাংক হিসাবের তথ্য অনুসন্ধানে গতকাল সোমবার আদালতে আবেদন করেন মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সহকারী কমিশনার মাহফুজুর রহমান। আবেদনের ওপর শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানকে আসামিদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দেন।
মামলার ১০ আসামি হলেন, শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া ওরফে আমানুল্যাহ সাঈদ, তানভীর ভুঁইয়া, সেলেস্তি রহমান ওরফে শিলিস্তা রহমান, সিয়াম হোসেন, আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহিন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী সাজি, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজী, চেলসি চেরি ওরফে আরিয়া ও জামাল হোসেন।
তদন্ত কর্মকর্তা আবেদনে উল্লেখ করেন, মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে মামলার ভিকটিম ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে পরিকল্পিতভাবে অপহরণ করে ভারতের কলকাতায় নিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে ও গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, আসামিরা ভিকটিমকে কলকাতার নিউ টাউন এলাকার ভাড়া করা বাসায় নিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে এবং প্রমাণ নষ্ট করার উদ্দেশ্যে ভিকটিমের লাশের হাড় ও মাংস আলাদা করে মাংসপিণ্ড টয়লেটের কমোডে ফেলে দেয় এবং হাড়গুলো গারবেজ-পলিতে ভরে ট্রলি ব্যাগে করে আশেপাশের খালে ফেলে দেয়। আসামিরা দীর্ঘদিন যাবৎ ভিকটিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিল। তারা পরিকল্পনা করে, মামলার ভিকটিমকে কিভাবে অপহরণ করবে ও টাকা-পয়সা আদায় করবে এবং টাকা-পয়সা নেয়ার পর কিভাবে হত্যা তথা লাশ গুম করবে তার রোমহর্ষক বর্ণনা গ্রেফতার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে। মামলার ঘটনার সাথে জড়িত তিনজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনায় জড়িত অন্য পলাতক আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ তথা মামলাটি সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এখন পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলমান আছে। মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ১০ আসামির এনআইডি ও পাসপোর্ট নম্বরের বিপরীতে কোন ব্যাংকে কয়টা হিসাব (অ্যাকাউন্ট) আছে তার তথ্য সরবরাহ করার জন্য বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বরাবর আদেশ প্রদান করা প্রয়োজন।
রহস্য উদ্ঘাটনকারী পুলিশ কর্মকর্তার বদলি : আনোয়ারুল আজীম আনারকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় রহস্য উদ্ঘাটনকারী পুলিশ কর্মকর্তা শাহিদুর রহমান রিপনকে বদলি করা হয়েছে। তিনি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ওয়ারী বিভাগে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার হিসেবে কর্মরত। গত রোববার পুলিশ সদর দফতরের আদেশে তাকে বদলি করে বরিশাল জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
কলকাতায় গিয়ে এমপি আনার নিখোঁজের পর থেকেই ডিবি কর্মকর্তা শাহিদুর ঘটনাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন। এমপি আনার ও শাহিদুরের বাড়ি একই জেলায়। তিনি নিজস্ব সোর্স ব্যবহার করে ও কলকাতার পুলিশের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে এমপি আনার হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেন। হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে তিনি কলকাতায় গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পর ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামানের সহযোগী সিয়াম নেপালে ধরা পড়ার খবর মিললে তদন্তের কাজে নেপাল যান। এখনো তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন বলে গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এ দিকে ঠিক কী কারণে তাকে বদলি করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে পুলিশ সদর দফতর সূত্র গণমাধ্যমকে বলছে, এটা নিয়মিত বদলি। বদলির তালিকা অনেক আগেই হয়েছিল। হয়তো সেই তালিকাটিই রোববার পুলিশ প্রধান সই করেছেন। শাহিদুর যে এমপি হত্যার ঘটনার মতো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তদন্তে রয়েছেন তা হয়তো চোখ এড়িয়ে গেছে।
রোববার পুলিশ সদর দফতর থেকে প্রকাশিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, শাহিদুরসহ ১১ জন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে বদলি করা হয়েছে। এ ছাড়া ১২ জন সহকারী পুলিশ সুপারকে একই আদেশে বদলি করেছে সদর দফতর।
ব্যাংক হিসাবের তথ্য সরবরাহে আদালতের নির্দেশ : সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম হত্যা মামলার প্রধান আসামি মো: আক্তারুজ্জামানসহ ১০ জনের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনের তথ্য সরবরাহ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এ আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপ) তাপস কুমার পাল এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, আজীম হত্যা মামলায় জড়িত ১০ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সরবরাহ করার আদেশ চেয়ে আদালতে আবেদন করে পুলিশ। আদালত সে আবেদন মঞ্জুর করেছেন। এর ফলে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এসব ব্যাংক হিসাবে লেনদেনের তথ্য মামলার তদন্তকারী সংস্থা গোয়েন্দা পুলিশকে সরবরাহ করবে।
এদিকে আলোচিত এ হত্যা মামলায় গ্রেফতার শিলাস্তি রহমান গতকাল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তিনি এ জবানবন্দি দেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক (এসআই) জালাল উদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা