জামায়াতের রাজনীতি সমর্থন করি না, তবে... : ফখরুল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৩ জুন ২০২৪, ০০:০০
এখনকার তরুণ প্রজন্ম পড়াশোনা করে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আমি জামায়াতের রাজনীতি সমর্থন করি না। কিন্তু জামায়াতের যে কৌশল এবং তাদের যে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া- সেটা অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত, বৈজ্ঞানিক।
গতকাল রোববার দুপুরে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের (জেডআরএফ) উদ্যোগে ‘বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৩তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, জামায়াতের রাজনীতি ঠিক কমিউনিস্ট পার্টির মতো অনেকটা। তাদের স্টাডি সেল আছে। তাদের যে ছাত্রশিবির, তাদের প্রত্যেকটা সেল আছে। তাদেরকে লেখাপড়া করতে হয়, বই পড়তে হয়। বই পড়ে তাদেরকে উত্তর দিতে হয়। তারা নিজেরা বই এবং পত্রিকা প্রকাশ করে। জ্ঞানের চর্চা ও জ্ঞান ছাড়া কখনো সফলতা অর্জন করা যায় না। সে জন্যই আমি বলি, রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি থাকুক। আপনারা জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নেতাদের গবেষণা করুন। থিংক ট্যাংক হিসেবে কাজ করুন।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকে পত্রিকা খুললে শুধু লুট আর লুটের খবর। কারা লুট করছে? যারা বড় বড় কর্তা। সেই আর্মির প্রধান, পুলিশের সাবেক আইজি তারা কী করেছে? সংসদে ভদ্রলোক কয়জন খুঁজে পাবেন? বাংলাদেশ ব্যাংক লুট করছে।
রিজার্ভের ডলার লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। শেয়ারবাজারে রথি মহারথিরা লুট করছে। সংসদ সদস্য চোরাচালানে জড়িত। কেউ দরবেশ, কেউ সন্ন্যাসী বেশে এসব কাজের সাথে জড়িত। আজকে চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংক থেকে ১৫০ ভরি স্বর্ণ গায়েব হয়ে গেছে। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই।
তিনি বলেন, আজকে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ব্যবহার ও বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখলে মনে হয় তারা কী যেন হয়ে গেছে। আজকে তাদের বাহিনীর প্রধান (বেনজীর) কোথায়? রাষ্ট্র আর রাষ্ট্র নেই। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ঋণের বোঝা বইতে হবে। মাথাপিছু ঋণ এখন ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, বিদেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানিসহ বড় বড় প্রকল্পের নামে যেসব চুক্তি করা হয়েছে তা কোনো দেশপ্রেমিক লোক করতে পারে না। আসলে এই সরকারের লোকজন তারা তো বর্গী। সেজন্যই সমস্ত টাকা লুট করে পাচার করছে। আজকে আমাদেরকে দেশ রক্ষা করতে হলে জিয়াউর রহমানের মতো নেতৃত্ব খুবই প্রয়োজন। সব প্রতিকূলতা থেকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হলে জিয়াউর রহমানকে জানতে হবে বলে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, শুধু সে্লাগান দিয়ে রাজনীতি করলে হবে না। জেনেশুনে রাজনীতি করতে হবে। জিয়াউর রহমানকে বুঝতে হলে তার কাজে গভীরে যেতে হবে। এখন জিয়াউর রহমানকে নিয়ে কথা বলা যায় না। সত্য বললে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা দিয়ে দেয়া হয়। যেভাবে তারেক রহমান মাথা উঁচু করে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেটা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে শরিক হই। জেলে যেতে হচ্ছে, মার খেতে হচ্ছে। তবুও বসে থাকলে চলবে না। রুখে দাঁড়াতে হবে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, জিয়াউর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি জানলে আশ্চর্য হতে হবে। তিনি দেশকে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে পরিণত করেছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার দেশপ্রেমিক নয় ওরা বর্গী। সেজন্যই দেশের টাকা লুটে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা আজ দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত। জাতি এখন দ্বিধা বিভক্ত। জিয়াউর রহমান তো নিজে রাজনীতিতে আসেননি। তাকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ’৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার নেতৃত্ব দেখে ৭৫ সালে সৈনিকেরা তাকে ফের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে যায় না। তিনি বলেন, আমি জামায়াতের রাজনীতি সমর্থন করি না। কিন্তু তাদের যে সাংগঠনিককাঠামো তা অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত। নিজেরা নিজেরা পড়ালেখা করে ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। সেজন্যই বলি রাজনীতির জায়গায় রাজনীতি থাকুক। আপনারা (জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের নেতাদের) গবেষণা করুন। থিংক ট্যাংক হিসেবে কাজ করুন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুসংহত করতে উদ্যোগ নেন। সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা করেছিলেন। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক। সেজন্যই সব রাজনৈতিক দল তার ওপর আস্থা রেখেছিল। কমিউনিস্ট পার্টি ও মোজাফফর সাহেবের ন্যাপ জিয়াউর রহমানের ১৯ দফাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন অত্যন্ত পরিপাটি ও দক্ষ সামরিক অফিসার। তিনি পেশাগত কাজে পাকিস্তানে বেশির ভাগ সময় থাকলেও তিনি বাংলাদেশের জন্য অতি কাতর ছিলেন। পড়ালেখা করতেন প্রচুর। তিনি নেতৃত্ব গুণ জন্মগতভাবে পেয়েছিলেন। তাকে কিন্তু আমরা কেউ চিনতাম না। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই রাজনীতির পাদপীঠে আবির্ভূত হন। এটাকে আওয়ামী লীগের লোকেরা মানতে পারে না। তবে বাংলাদেশ ও জাতি যতদিন থাকবে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা থাকবে এটাই সত্যি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকের ছেলেমেয়েরা পড়তে চায় না। জিয়াউর রহমান সম্পর্কে জানতে হলে পড়তে হবে। না হলে তো জানা যাবে না। সেজন্য বই পড়তে হবে।
সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা: ফরহাদ হালিম ডোনারের সভাপতিত্বে ও শাহাদতবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী মাহবুব আলমের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. নূরুল আমিন বেপারী, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সদস্যসচিব কাদের গণি চৌধুরী, সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক সামসুল আলম সেলিম, ডা: আবু নাসের প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পেশাজীবী নেতা অধ্যাপক ডা: গাজী মাজহারুল হক, অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রাজ্জাক, অধ্যাপক ড. আক্তার হোসেন, অধ্যাপক ড. নূরুল ইসলাম, প্রকৌশলী এ কে এম আসাদুজ্জামান চুন্নু, ডা: মো: মেহেদী হাসান, প্রকৌশলী শাহীন হাওলাদার, প্রকৌশলী আইয়ুব হোসেন মুকুল, অধ্যাপক ড. নাহারিন ইসলাম খান, অ্যাডভোকেট নাদিম ভূঁইয়া, শামিমা রহিম, দবির উদ্দিন তুষার, ছাত্রদল নেতা তরিকুল ইসলাম তারিক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা