বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রোল মডেল : প্রধানমন্ত্রী
- বাসস
- ৩০ মে ২০২৪, ০০:০০
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা সংলাপের মাধ্যমে সকল দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত নিরসন, চলমান যুদ্ধ বন্ধ এবং অস্ত্র প্রতিযোগিতার অর্থ মানবজাতির কল্যাণে ব্যয় করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি বৈশি^ক শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। আমরা সর্বজন স্বীকৃত এবং বিশে^র বুকে একটি রোল মডেল।’ প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘আন্তর্জাতিক জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষী দিবস-২০২৪’ উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’, বিশ^শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার অঙ্গীকার ও আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের ‘ব্লু হেলমেট’ পরিবারের সদস্য হয়। সরকারপ্রধান বলেন, বর্তমানে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনের ১৩টি স্থানে ৪৯৩ জন নারীসহ ৬০৯২ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী সুনামের সাথে কাজ করছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীরা যেখানে কাজ করছে সেসব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা তাদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘প্রশংসা শুনে গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়।’
শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার বৈশি^ক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ আজ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। আমরা সর্বজন স্বীকৃত এবং বিশে^র বুকে রোল মডেল। এই অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের সশস্ত্রবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর টেকসই, পরিশ্রমী নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও অমূল্য অবদান। তিনি ১৬৮ বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের অবদানের কথা স্মরণ করেন যারা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগ করেছেন এবং ২৬৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
শান্তিরক্ষায় অবদান রাখতে গিয়ে আত্মোৎসর্গকারীদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তাদের পরিবারের সদস্যদেরও সমবেদনা জানান তিনি। স্বজন হারানোর বেদনা যে কী তিনি তা জানেন বলেও এ সময় উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাতিসঙ্ঘ শাস্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩৬ বছর উদযাপন করছি। বাংলাদেশ আজ বিশে^র বৃহৎ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ এবং সকলে অত্যন্ত সুনাম ও গৌরবের সাথে কাজ করে চলেছেন। তিনি এ সময় বিশে^র নানা প্রান্তে কর্মরত সব বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদের শুভেচ্ছা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে আমরা বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি। শান্তিরক্ষা মিশন ছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতেও আমরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও অবদান রাখছি।
১৯৯৭ সালে বাংলাদেশের জাতিসঙ্ঘে ‘কালচার অব পিস’ (শাস্তির সংস্কৃতি) প্রস্তাব উত্থাপন করে, যা ১৯৯৯ সালে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, সেই থেকে প্রতি বছর জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের ‘ফ্লাগশিপ রেজল্যুশন’ এই ‘কালচার অব পিস’ সর্বস্মতিক্রমে গৃহীত হয়ে আসছে। পরে জাতিসঙ্ঘ ২০০০ সালকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অব কালচার অব পিস’ হিসেবে ঘোষণা করে। যার মাধ্যমে শান্তির সংস্কৃতি প্রস্তাবের ২৫তম বর্ষ উদযাপিত হতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নে কালচার অব পিস প্রতিষ্ঠা অপরিহার্য বলে আমার বিশ^াস।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনে আহতদের হাতে সম্মাননা তুলে দেন।
তিনি ইউএন পিস কিপার্স জার্নালের (১০ম ভলিউম) মোড়কও উন্মোচন করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় আত্মত্যাগকারী বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে জাতিসঙ্ঘ মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের কৃতিত্বের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র ও প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী পরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে কর্মরত বাংলাদেশী শান্তিরক্ষীদেও সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশে্বর বিভিন্ন প্রান্তে দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাত, যুদ্ধ আজ বিশ^ শান্তি বিঘিœত করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, গাজার ইসরাইলি হামলায় হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু। সেখানে গণহত্যা চলছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা ইত্যাদি মানবজাতির জন্য এক ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি ঠিক জানি না এই সঙ্ঘাত বা যুদ্ধ মানব জাতির জন্য কী কল্যাণ বয়ে আনছে। অস্ত্র প্রতিযোগিতা প্রতিনিয়ত যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, ততই মানুষের জীবন আরো বেশি দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বিশেষকরে নারী-শিশুরা সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে। যুবকরা অকাতরে জীবন দিচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যুদ্ধ চাইনা, শান্তি চাই। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সব কিছু সমাধান করতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করা এখন অতীতের চেয়ে অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির সাম্প্রতিক প্রসার ও অগ্রযাত্রার সাথে সাথে বাড়ছে নতুন নতুন হুমকি। ফলে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তাই শান্তিরক্ষা মিশনগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এখন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীগণ যাতে বিশে^র সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং বিপজ্জনক অঞ্চলগুলোতে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে সেজন্য তাদের সময়োপযোগী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এ সময় তিনি শান্তিরক্ষীদের প্রশিক্ষণে ’৯৬ সালে প্রথমবার সরকারে এসেই ‘বিপসট’ (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং) প্রতিষ্ঠার উল্লেখ করেন। যা এখন আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা