উজানের ঢল : ৬ জেলায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩০ মে ২০২৪, ০০:০০
দেশের বিভিন্ন জেলায় নদ নদীর পানি বাড়ছে। সিলেটসহ কিছু কিছু জেলায় নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে পানির উচ্চতা বাড়ছে। এ কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ ছয় জেলায় আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার এবং দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের ফেনী, বান্দরবান, চট্টগ্রাম জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চল স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা দেখা দিতে পারে। বর্তমানে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে খোয়াই নদীর পানি। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গাসহ দেশের নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু পদ্মা নদীর পানি কমছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। অপর দিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি কমতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীর পানি বাড়ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই অঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার এবং দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের ফেনী, বান্দরবান, চট্টগ্রাম জেলার কিছু নিম্নাঞ্চল স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যার ঝুঁকিতে থাকতে পারে। কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা জানান, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কিছু স্থানে এবং এর সংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। ফলে এ সময়ে উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল ধীরগতিতে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে। এই সময়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, সারিগোয়াইন নদীগুলোর পানি সমতল কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করে আশেপাশের নিম্নাঞ্চলে ‘স্বল্পমেয়াদি বন্যা’ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। অন্য দিকে সিলেটে প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারাসহ তিন নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে। আরো কয়েকটি পয়েন্টে নদনদীর পানি বিপদসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট পাউবো জানায়, গতকাল দুপুর ১২টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্ট ১৩ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার। কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশীদ পয়েন্টে ১৫ দশমিক ৭৭ সেন্টিমিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কুশিয়ারার অমলশীদ এলাকায় বিপদসীমা ১৫ দশমিক ৪০। এ ছাড়া সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টে পানির বিপদসীমা ১২ দমশিক ৩৫ সেন্টিমিটার। এ পয়েন্টে বুধবার দুপুর ১২টায় ১২ দশমিক ৮৮ সেন্টিমিটার দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। এ তিন নদী ছাড়াও লোভাছড়া, পিয়াইন ও ধলাই নদীর পানিও বেড়েছে অন্তত ৬-৭ সেন্টিমিটার করে। এ দিকে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সিলেটে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ভারতের আসামেও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে সে দেশের আবহাওয়া অফিস। সেই হিসাবে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সিলেটে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সত্যেন্দ্র বৈদ্য সাংবাদিকদের বলেন, উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সিলেটের নদনদীর পান বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বুধবার দুপুরে তিনটি নদীর পানি বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, মৌলভীবাজারের মনু নদীর পানি সকালে বিপদসীমার ওপরে ছিল। দুপুরে বিপদসীমার কিছুটা নিচে নেমে এসেছে। পাউবো জানিয়েছে, তাদের পর্যবেক্ষণাধীন ১১০টি স্টেশনের মধ্যে পানির সমতল বেড়েছে ৮৯টিতে, কমেছে ১৮টিতে। দুইটি স্টেশনের পানির সমতল অপরিবর্তিত আছে। তথ্য পাওয়া যায়নি একটি স্টেশনের আর বিপদসীমার ওপর দিয়েছে প্রবাহিত হচ্ছে একটি নদীর পানি। অন্য দিকে আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় দেশের অভ্যন্তরে এবং উজানের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কোথাও কোথাও বিপদসীমা অতিক্রম করে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কেন্দ্রের ১১০টি স্টেশনের মধ্যে ৮৯টির পানি বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছে চাঁদপুরে ২৫৭ মিলিমিটার, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে চট্টগ্রাম ও সিলেটে ২৪৯, তৃতীয় ঢাকা ২২৪, চতুর্থ শ্রীমঙ্গলে ২১৮, পঞ্চম মাদারীপুরে ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া ১০০ মিলিমিটারের ওপর বৃষ্টি হয়েছে বান্দরবানে ১৭৮, সন্দ্বীপে ১৭৬, গোপালগঞ্জে ১৬৭, কুতুবদিয়া ও ফেনীতে ১৬২, বরিশালে ১৪৭, পটুয়াখালীতে ১৪৫, মংলা ১৩৭, খুলনায় ১২৫, কুমিল্লা ১২২, হাতিয়া ও সীতাকুণ্ডে ১১২, টাঙ্গাইলে ১০৭, মাইজদি কোর্টে ১০৪ মিলিমিটার। এ ছাড়া দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে কমবেশি বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা