বাংলাদেশে থাকা বৈধ-অবৈধ বিদেশী শ্রমিকের তালিকা চেয়েছেন হাইকোর্ট
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৯ মে ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশে অবৈধভাবে কাজ করা বিদেশী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সাথে বাংলাদেশে কতসংখ্যক বিদেশী বৈধ ও অবৈধ শ্রমিক কাজ করছে তার তালিকা আগামী তিন মাসের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ-সংক্রান্ত বিষয়ে দায়ের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
পাশাপাশি বিদেশী কর্মীরা কিভাবে এবং কোন চ্যানেলে তাদের অর্থ বাংলাদেশ থেকে বাইরে নিয়ে যায় সে বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) সংশ্লিষ্টদের এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সরোয়ার হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
এ বিষয়ে ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি বিদেশী আমাদের জব মার্কেট দখল করে আছে। তারা প্রতি বছর ১০ বিলিয়নের বেশি ডলার অবৈধভাবে বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। এক দিকে বাংলাদেশের কর্মক্ষম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া যুবকরা চাকরি পাচ্ছেন না, অন্য দিকে বিদেশীরা আমাদের জব মার্কেট অবৈধভাবে দখল করে আছে। এই ইস্যু নিয়ে আমরা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করি। ওই রিটের ওপর গত তিন দিন শুনানি শেষে আজ আদালত এ আদেশ দিয়েছেন। রুল ইস্যু করেছেন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সাথে রুল ইস্যু করেছেন কেন অবৈধ বিদেশীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়া অবৈধ ঘোষণা করা হবে না। একই সাথে আদালত পুলিশকে একটি সুষ্ঠু তদন্ত করে দেশে কত বৈধ ও অবৈধ বিদেশী কাজ করছে তার তালিকা আদালতে দাখিল করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আগে গত বছরের ১৯ নভেম্বর এ বিষয়ে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের বিষয়ে কোনো সাড়া না পেয়ে গত ২০ মে বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্রে কতজন বৈধ ও অবৈধ কর্মী কাজ করছেন সে বিষয়ে তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন চারজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তারা হলেন- বুয়েটের শিক্ষার্থী মীর মোস্তাসিম ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুমতাহিনা আলম ও মায়শা মনোয়ারা এবং বিইউবির শিক্ষার্থী নওশিন নাওয়ার নুরজাহান। রিটে অর্থ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, পররাষ্ট্র সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, দুদক চেয়ারম্যান, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের প্রধানকে বিবাদি করা হয়।
রিটে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি দৈনিকের প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়। এরপর গত ২৭ মে এ বিষয়ে একটি সম্পূরক আবেদন করা হয়। ওই সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারির পাশাপাশি দেশ থেকে বিদেশী কর্মীরা কিভাবে এবং কোন চ্যানেলে তাদের অর্থ বাংলাদেশের বাইরে নিয়ে যায় সে বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন।
রিট আবেদনে একাধিক গণমাধ্যমের প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়। সেসব প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে ১০ লাখের বেশি অবৈধ বিদেশী শ্রমিক বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে কাজ করছে। এর ফলে এ দেশের নাগরিকরা যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ‘অবৈধ বিদেশী খেদাও আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠন এ তথ্য দেয়।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম সরোয়ার হোসেন বলেন, যোগ্যতা অনুযায়ী নিয়োগ পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার; কিন্তু গত দেড় দশকে বাংলাদেশে বেকার সমস্যা চরম আকার ধারণ করেছে। দেশে বর্তমানে বেকারত্বের হার ১২ শতাংশ, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তিনি বলেন, এ দেশের নাগরিক কর্মসংস্থান খুঁজতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুবরণ করছে। অন্য দিকে বাংলাদেশে কর্মরত অবৈধ বিদেশীরা ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর ১০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। অবৈধ হওয়ায় তারা ট্যাক্স ও ভ্যাট না দিয়ে বাংলাদেশের টাকা পাচার করছে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হচ্ছে আর মানবাধিকার ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। তারপরও আমাদের রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা