১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তাণ্ডব

জলোচ্ছ্বাসে উপকূলে ব্যাপক ক্ষতি, শহরে জলাবদ্ধতা : নিহত ১১, বিদ্যুৎবিহীন অনেক এলাকা
সেন্টমার্টিনে ভাঙনের কবলে একটি পয়েন্ট : নয়া দিগন্ত -


ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবের সময় উঁচু জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের জেলাগুলোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়েছে। ঝড়ে কাঁচা ঘরবাড়ি, ঘরের দেয়াল ও গাছপালা ভেঙে পড়েছে। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট এখনো পানির নিচে। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় রয়েছে বহু এলাকা। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিপাতে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরেও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা। এগুলো হলো- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। ঘূর্ণিঝড়ের সময় গাছচাপা, ঘরের চালা ভেঙে ও পানিতে ডুবে রোববার ও সোমবার পটুয়াখালীতে ৩ জন, ভোলায় ৩ জন, বরিশালে ২ জন, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় একজন করে মোট ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

আবহাওয়া বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, রোববার গভীর রাতে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় সমুদ্রবন্দর মংলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী সাগর দ্বীপের আশপাশের এলাকা অতিক্রম করে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। এই ঝড়ের অগ্রভাগের আঘাত শুরু হয় পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় রাত ৯টার দিকে। ঘূর্ণিঝড়টি কিছুটা দুর্বল হওয়ার পর গতকাল সোমবার সকালের দিকে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অতিক্রম করে কিছুটা ধীরগতিতে।
এ দিকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য আসা শুরু করেছে। এর সাথে সাথে বাংলাদেশ ও ভারতে রেমালের তাণ্ডবে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। রাত দেড়টা থেকে ২টার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১১ কিলোমিটার গতিতে বাতাস বয়ে গেছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়। এই ঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে উপকূলের অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে বহু মাছের ঘের। তীব্র গতির বাতাস আর প্রবল বর্ষণের কারণে দুই দেশের উপকূলীয় এলাকার দুই কোটিরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট; ডুবে গেছে মাছের ঘের ও আবাদি জমি।

ঘূর্ণিঝড় নিয়ে গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে ১৯ জেলার ১০৭টি উপজেলার বাসিন্দারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৩৭ লাখ ৫৮ হাজারের বেশি। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪৮৩টি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া আংশিকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৯৯২টি ঘরবাড়ি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি জেলায় নগদ সহায়তার ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, গোখাদ্য কেনার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী জানান, ঘূর্ণিঝড় সতর্কতার পরিপ্রেক্ষিতে উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ৯ হাজার ৪২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র ও স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮ লাখের বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া দুর্গত মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিতে ১ হাজার ৪৭১টি মেডিক্যাল দল গঠন করা হয়েছে।

ঢাকায় বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, দুর্ঘটনা এড়াতে আগে থেকেই উপকূলীয় কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হয়। অনেক উপকূলীয় শহরে গাছ পড়ে এবং বিদ্যুতের লাইন ভেঙে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। উপকূলের বিভিন্ন এলাকায় ২ কোটি ২২ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। সংস্থাটি বলেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবের সময় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এসব গ্রাহকের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে অনেক এলাকা ১৬ থেকে ১৭ ঘণ্টা যাবৎ বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে। ঝড় পুরোপুরি থেমে গেলে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি রেখেছেন পল্লী বিদ্যুতের কর্মীরা।

রেমাল দুর্বল হয়ে গেলেও দেশব্যাপী ভারী বর্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমাল দুর্বল হয়ে গেলেও এর প্রভাব রয়ে গেছে। দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে গতকাল সোমবার সকাল থেকেই বাংলাদেশের ৪ সমুদ্র বন্দরের মহাবিপদ সঙ্কেত নামিয়ে ৩ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সঙ্কেত জারি করে আবহাওয়া অধিদফতর। ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার বেগের রেমালের প্রভাবে গতকাল সারা দিনই দেশব্যাপী ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। অন্য দিকে রেমাল একটি মাঝারি মানের ঘূর্ণিঝড় হলেও উপকূলীয় এলাকায় বিস্তৃত অঞ্চলে জোয়ারের পানি ঢুকেছে। এবার জোয়ারের পানি যেসব অঞ্চলে প্রবেশ করেছে এর আগে কখনো সেইসব অঞ্চলে জোয়ারের পানি ঢুকেনি বলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ মন্তব্য করেছেন।
রেমালের প্রভাবে গতকাল সারা দিন পুরোদেশেই প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে গেছে। গত রোববার রাত থেকেই বৃষ্টি শুরু হলেও গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিরামহীনভাবে ঝরে পড়েছে বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে শহরের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোতে পানি জমে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে ২৩৫ মিলিমিটার। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুসারে, চট্টগ্রাম বিভাগের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়েছে। খুলনা বিভাগেও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হয়ে গেছে। গতকাল সবচেয়ে কম বৃষ্টি হয়েছে রংপুর বিভাগে। ঢাকায় ২৪ রাজধানীতে ১৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল সকাল থেকেই দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে যায় এবং এই অবস্থায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এটা বৃষ্টি ঝরিয়ে ধীরে ধীরে আরো দুর্বল হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে কানাডা প্রবাসী আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল বলেন, জাপানের কত্রিম ভূউপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত দৃশ্যমান চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রেমালের কেন্দ্র গতকাল বিকেল ৫টায় ফরিদপুর-মাদারীপুর এলাকার ওপরে অবস্থান করছিল। রেমাল যেখানে গভীর নিম্নচাপ অবস্থায় রয়েছে সেখানকার বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বয়ে যাচ্ছিল যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে ১০০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হচ্ছিল।
পিরোজপুরের পাভেল আকন সবুজ জানিয়েছেন, আমাদের জীবনে কখনো আমরা আমাদের বাড়িতে জোয়ারের পানি দেখিনি, কিন্তু গতকালকের ঘূর্ণিঝড়ে আমাদের বাড়ির উঠানে হাঁটু সমান পানি এসে গেছে। রেমাল যেখানে প্রথম আঘাত করে সেই সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশ ১০ থেকে ১২ উচ্চতার পানি গতকাল বিকেলেও অবস্থান করছিল। ফলে সেখানকার বণ্যপ্রাণী নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই।

এবারো বুক চিতিয়ে লড়েছে সুন্দরবন
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সাতক্ষীরার উপকূল এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে রেমাল। এদিকে, এবারো ঢাল হয়ে খুলনা অঞ্চলকে ভয়ানক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করেছে সুন্দরবন। বাতাসের গতিবেগ অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে এই বন। রোববার রাতে রেমালের তাণ্ডবে অনেক গাছপালা উপড়ে গেছে। জোয়ারে মাছের ঘের ভেসে গেছে। জেলাব্যাপী এখনো ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সাথে দমকা হাওয়া বইছে। জেলার ২২ লাখ মানুষ প্রায় ১৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে কপোতাক্ষ নদের জোয়ারের পানি আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাহুলিয়া এলাকায় ভেড়িবাঁধ উপচে লোকালয়ে প্রবেশ শুরু করলে গ্রামবাসী বালির বস্তা ফেলে পানি ঢোকা বন্ধ করার চেষ্টা চালায়। শ্যামনগর উপকূলের ৫৪১টি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে আংশিক নষ্ট হয়েছে ৪৪৮টি এবং সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে ৯৩টি ঘরবাড়ি। এ ছাড়া প্রায় ২০০ হেক্টর মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শ্যামনগরের সুলতান শাহজাহান বলেন, ঘূর্ণিঝড় সাতক্ষীরা উপকূলে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। অনেক গাছগাছালি উপড়ে চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। নদ-নদীগুলো এখনো উত্তাল। জোয়ারের পানি কমেনি। তিনি আরো বলেন, বৃষ্টিতে বাঁধের মাটি নরম হয়ে গেছে। ভাটিতে পানি কমার কথা থাকলেও পানি কমছে না। এতে অনেক এলাকায় বাঁধে ফাটল দেখা দিতে পারে।

তলিয়ে গেছে চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ সড়ক, অলিগলি
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, রেমালের প্রভাবে ভারী বর্ষণের সাথে জোয়ারের পানি একাকার হয়ে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গতকাল সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২৪১.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এর মধ্যে সকালে মাত্র তিন ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
রোববার রাত থেকেই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি ভারী বৃষ্টি হয় গতকাল সকালে। সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত অতি ভারী বর্ষণের পাশাপাশি একই সময়ে জোয়ার থাকায় নগরীর বিস্তীর্ণ সড়ক অলি-গলি, বাজার, বিভিন্ন বাসাবাড়ির নীচতলা এবং বিভিন্ন মার্কেট ও দোকান পানিতে ডুবে যায়। এ সময় কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি মাড়িয়েই অফিসগামী মানুষকে পথ চলতে হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আলী আকবর খান নয়া দিগন্তকে বলেন, গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ২৪১.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ১৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। তিনি জানান, সকালে যখন ভারী বৃষ্টি হচ্ছিল সেই সময় সাগরে জোয়ারও শুরু হয়। সকাল ৯টা ২২ মিনিট থেকে জোয়ার শুরু হয় বলেও তিনি জানান। এই আবহাওয়াবিদ জানান, আজও সকাল পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী দুই দিন তাপমাত্রাও কম থাকবে বলে তিনি জানান।

সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর কাপাসগোলা, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, ইপিজেড, সল্টগোলা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, জিইসি, পাহাড়তলী, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, বাকলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডিসি রোড, সিরাজউদ্দৌলা সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সড়ক-অলি-গলি পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। সময় নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন বাজার এবং দোকানপাট পানিনিমজ্জিত হয়ে পড়ে। নগরীর প্রবর্তক মোড় এলাকায় দেখা যায় সড়কে দীর্ঘ যানজট লেগে আছে, একটু সামনে বদনা শাহ মাজারের সম্মুখে দুটি সিএনজি টেক্সি পানিতে আটকা পড়েছে। এই সড়কে কোমর সমান পানি ঠেলে রিকশা চলছে, পানির মধ্যেই হেঁটে চলাচল করছেন পথচারীরা। আবার কেউ কেউ সড়ক বিভাজকের উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন। এমনি পরিস্থিতিতে এই সড়কে আসা গাড়িগুলো ওই সড়ক অতিক্রম করতে না পারায় কিছু চকবাজারমুখী হচ্ছে, আবার কিছু ২ নম্বর গেটমুখী হচ্ছে। নগরীর চকবাজার এলাকায় পুরো কাঁচাবাজার এবং চকসুপার মার্কেটসহ আশপাশের দোকানপাট নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে।

খুলনায় একজন নিহত, ২০ গ্রাম প্লাবিত
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় রেমালের আঘাতে গাছচাপায় একজনের মৃত্যু এবং কয়রা, বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলায় জলোচ্ছ্বাসে নদীর বাঁধ ভেঙে অন্তত ২০ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কাঁচা বাড়িঘর বিধ্বস্ত এবং মাছের ঘের ভেসে গেছে বলে জানা গেছে। অসংখ্য গাছপালা উপড়ে পড়েছে।
গত রোববার সকাল ৬টা থেকে গতকাল দুপুর ৩টা পর্যন্ত ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ও অতি বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃৃষকরা। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে রোববার রাত থেকে খুলনা জেলা সদরসহ উপকূলীয় এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে।
রোববার রাতে বটিয়াঘাটা উপজেলার সুরখালী ইউনিয়নের গাওঘরা গরিয়ারডাঙ্গা গ্রামে তীব্র বাতাস ও বৃষ্টিতে গাছ উপড়ে ঘরের ওপর পড়ে লালচাঁদ মোড়ল (৩৬) মারা গেছেন। সুরখালী ইউপির চেয়ারম্যান এস কে জাকির হোসেন বলেন, ঝড়ের রাতে নিজের ঘরে শুয়ে ছিলেন লালচাঁদ। সোমবার সকালে লোকজন গাছ কেটে মৃত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করেন। বেড়িবাঁধ উপচে বটিয়াঘাটা বাজার এবং বাঁধ ভেঙে উপজেলার বারোয়ারিরা বাজার ও পুলিশ ক্যাম্প প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বরইতলা নামক স্থানে এবং জলমা ইউনিয়নের কচুবুনিয়ায় বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। কয়রা উপজেলায় জলোচ্ছ্বাসে কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধের ৩টি জায়গা ভেঙে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
কয়রার ইউএনও বিএম তারিক উজ জামান বলেন, কয়েকটি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। দাকোপ উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুুকছে। গত রোববার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার শিবসা ও ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তলিয়ে যায়।

বোরহানউদ্দিনে ১ জন নিহত
বোরহানউদ্দিন (ভোলা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলার সাচড়া ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাতে একজন মারা গেছেন। পানিবন্দী হয়ে পড়ে নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক শ’ পরিবার। বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। জলোচ্ছ্বাসে মাছের ঘের থেকে মাছ ভেসে যায়।
বোরহানউদ্দিন হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় সাচড়া ইউনিয়নে জাহাঙ্গীর পঞ্চায়েত (৬০) নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়। তিনি ৬ নং ওয়ার্ডের মো: ওয়ালিউল্লাহর ছেলে। গতকাল সোমবার সকাল ১১টার সময় নিজ বাড়িতে ঝড়ো হাওয়ায় গাছের ডাল ভেঙ্গে তার পেটের ভিতর ঢুকে যায় এবং তার ফুসফুসে আঘাত করে। এদিকে রেমাল প্রভাবে মেঘনা ও তেতুলিয়ার পানি স্বাভাবিক এর চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বেড়ে যায়। ফলে নদী তীরবর্তী বাসা বাড়িতে কোমর পর্যন্ত পানি দেখা যায়।

আমতলীতে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় তিন শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত ও সহস্রাধিক আংশিক বিধ্বস্ত, অন্তত দুই লক্ষাধিক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। সহস্রাধিক পুকুর ও মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চারটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
রোববার সন্ধ্যা থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব ছিল উপজেলায়। দমকা বাতাসের সাথে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এতে মাটি আগলা হয়ে তিন শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত এবং সহস্রাধিক ঘর আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে অন্তত দুই লক্ষাধিক গাছপালা। পশুরবুনিয়া, ঘোপখালী, পশ্চিম সোনাখালী, সোনাউড়া বাঁধ এবং আঙ্গুলকাটা স্লুইস গেট ভেঙে ও ইসলামপুর গ্রামের বাঁধ গড়িয়ে ভিতরে পানি প্রবেশ করেছে।

পটুয়াখালীতে চার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমেলের আঘাতে পটুয়াখালীতে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হচ্ছেন দুমকী উপজেলার নলদোয়ানি এলাকায় মো: জয়নাল আবেদীন হাওলাদার (৭০), বাউফল পৌর শহরের ৫নং ওয়ার্ডের করিম আলী খান (৬৫) এবং কলাপাড়া উপজেলার অনন্তপাড়া মো: শরীফুল ইসলাম শরীফ (২৪)। এ ছাড়া সরকারি হিসাবে ৩ হাজার ৫০০ কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার দুপুরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ থেকে ১০ ফুট বৃদ্ধি পায়। এতে বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত এলাকা জেলার কলাপাড়া লালুয়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম, রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম এবং একই উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে যায় পানির ¯্রােতে। পটুয়াখালী শহর রক্ষা বাঁধ উপচে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে শহরের মধ্যে। তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট।

বাউফলে ঘর চাপায় ভিক্ষুক নিহত
বাউফল (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে একটি পরিত্যক্ত টিনশেড দোতালা ঘর চাপা পড়ে করিম নামের এক ভিক্ষুক (৬৫) মারা গেছেন। তার বাড়ি পটুয়াখালী বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদি গ্রামে। বাউফল উপজেলা পরিষদ এলাকার কাছে এ ঘটনা ঘটেছে। ধারণা করা হচ্ছে রোববার রাতে ঝড়ের সময় ওই ভিক্ষুক রাস্তার পাশে পরিত্যক্ত ঘরে আশ্রয় নেন এবং রাতে যেকোনো সময় ঘরচাপা পড়ে তিনি মারা যান।

বাগেরহাটে নিম্নাঞ্চলের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে
বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাটের রামপাল, চিতলমারী, সদর ও মোড়েলগঞ্জের ব্যাপক এলাকার চিংড়ি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। রোববার রাত ১১টা থেকে গোটা এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। গতকাল সোমবার বেলা ১ টা পর্যন্ত থেমে থেমে দমকা হাওয়া বয়ে যায়। গোটা উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে প্লাবিত। বাগেরহাট দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা বিভাগ থেকে ৫ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। জেলার ৭৫ ইউনিয়নে নিম্নাঞ্চলের কাঁচা ও আধাপাকা ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ও ১০ হাজার ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে সড়ক, বিদ্যুতের পোল ও বসত ঘরের ক্ষতি হয়েছে। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান আল বেরুনী জানান বাগেরহাটের বিষ্ণপুর ও মোড়েলগঞ্জে বেড়িবাঁধসহ ৬টি স্থানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম রাসেলুর রহমান জানান, জেলায় প্রাথমিকভাবে ২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপের কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন
কক্সবাজার অফিস জানান, গতকাল সোমবার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বৃদ্ধি পেয়ে জেলার উপকূল ও নি¤œাঞ্চলের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। রোববার রাতে ঝড়ো হাওয়া ও বাতাসের তীব্রতায় জেলার কিছু কিছু এলাকায় গাছপালা ও কাঁচাঘর বাড়ি ভেঙে পড়েছে। সাগর এখনো উত্তাল থাকায় মাছ ধরার ট্রলারগুলোকে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে। ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার ও আশপাশের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

মহেশখালী উপজেলার সিকদার পাড়া এলাকায় জোয়ারের তোড়ে একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এতে সাগরের লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। কক্সবাজারের মহেশখালী কুতুবদিয়া সদর উপজেলার সমিতি পাড়া সেন্টমার্টিন্স দ্বীপসহ জেলার উপকূল ও নি¤œাঞ্চলের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। কিছু এলাকায় গাছপালা উপরে পড়েছে। কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি দ্বীপের কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন ধরেছে।

এদিকে ভূমিধসের আশঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয় নিতে প্রচার চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা।
ঈদগাঁও (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, কক্সবাজারের ঈদগাঁওতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাব স্টেশন ঘূর্ণিঝড়ের দোহাই দিয়ে ১৮ ঘণ্টা যাবৎ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে ৩ উপজেলার ৫৮ হাজার গ্রাহক দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। পাশাপাশি ঈদগাঁও উপজেলায় অবস্থিত দেশের বৃহত্তম লবণ শিল্প এলাকা ও পার্বত্য বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী রাবার জোনে উৎপাদন থমকে গেছে। অথচ ঈদগাঁও উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের কোনো প্রভাব পড়েনি অথবা তেমন কোনো ঝড়ো ও দমকা হাওয়াও বয়ে যায়নি।

নোয়াখালীতে হাজারো মানুষ পানিবন্দী
নোয়াখালী অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড়ে নোয়াখালীর ৯টি উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এ সময় গাছপালার ও কাঁচা ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। হাতিয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে ১৪টি গ্রামের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ বন্দী হয়ে পড়েছে। গত রোববার মধ্য রাত থেকে দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সবধরনের মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে পড়েছে। তার পাশাপাশি গ্রাহকদের ফ্রিজে থাকা দ্রব্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়। প্রবল ঝড়ে শত শত ফলজ বনজ গাছ উপড়ে এবং অনেক কাঁচাঘর পড়ে যায়।

ফেনীর উপকূল প্লাবিত
ফেনী অফিস জানায়, জোয়ারের পানিতে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। একই সঙ্গে ঝড়ো বাতাস ও ভারী বৃষ্টিতে গ্রামীণ সড়ক ও বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের লবণাক্ত পানি লোকালয়ে ঢুকে গেছে। ভেসে গেছে শত শত খামার ও পুকুরের মাছ। গতকাল সোমবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হঠাৎ করে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জোয়ার এসে উপজেলার বড় ফেনী নদীর উপকূলীয় দক্ষিণ-পূর্ব চর চান্দিয়া, দক্ষিণ চর চান্দিয়া, জেলেপাড়া ও চর খোন্দকারসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে যায়। এর আগে গত রোববার মধ্য রাত থেকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়ো বাতাস আর ভারী বৃষ্টিতে গাছপালা পড়ে তার ছিঁড়ে ও খুঁটি ভেঙে প্রায় ২০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

জামালপুরে ৭ লক্ষাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক অন্ধকারে
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব পড়েছে জামালপুর পল্লী বিদ্যুতের ওপর। জেলার বিদ্যুতের সবগুলো মূল লাইন বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে এই সমিতির আওতায় সাত লক্ষাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক গতকাল সোমবার ভোর থেকে অন্ধকারে রয়েছেন। জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একটি সূত্র থেকে জানা যায়, জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় সাত লক্ষাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় অফিস-আদালত, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সবধরনের উন্নয়নকাজ থমকে পড়েছে। বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা ও পরিস্থিতি জানতে জামালপুর পল্লী সমিতির জেনারেল ম্যানেজার খ: শামীম আলমকে বারবার ফোন করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

বিদ্যুৎবিহীন নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি ও ফতুল্লা সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জে ঝড়ো বাতাসে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের তারে গাছ পড়ে জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। জেলার প্রায় এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। গতকাল সোমবার দুপুরের পর থেকে প্রায় জেলাজুড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে, আর যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ আছে সেখানেও আছে লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট। এর আগে রোববার রাত থেকে আড়াইহাজারের প্রায় পুরো উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ আছে।
এ দিকে সোমবার দুপুর থেকে সোনারগাঁও, ফতুল্লা ও রূপগঞ্জে প্রায় ৯০ ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ২টার পর থেকে শহর ও শহরের আশপাশে বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। সকাল থেকে বন্দরে পুরো উপজেলাজুড়ে পল্লী বিদ্যুতের বিভ্রাট আছে বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা।

কুষ্টিয়ায় জনদুর্ভোগ
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার গতকাল সারা দিন মাঝারি বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। শহর এবং শহরতলীর নিচু এলাকায় পানি জমে মানুষের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে বড় বড় গাছ উপড়ে পড়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে সবজি বাগানগুলোতে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছে ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। এ দিকে সারা দিনই জেলার সর্বত্র বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগের মাত্রা আরো বেড়ে যায়।

রংপুরে বৃষ্টিতে নগরবাসির স্বস্তি
রংপুর অফিস জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ঝিরঝির বৃষ্টি অব্যাহত আছে রংপুরে। এতে স্বস্তি ফিরেছে নগরে। গত রোববার রাত থেকেই এই ঝিরঝির বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে দমকা বাতাস। দীর্ঘ তাপদাহের পর এই বৃষ্টি জনজীবনে এনে দিয়েছে স্বস্তি। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে স্বস্তিটা একটু বেশি।

শেরপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ
শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় সোমবার ভোর থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া। যার ফলে গাছপালা ভেঙে ও বিদ্যুতে খুঁটি ভেঙে পড়েছে। এতে করে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। টানা বৃষ্টিতে বাসা থেকে বের হওয়া কর্মজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছেন। এরইমধ্যে কিছু কিছু রাস্তায় পানি জমতে শুরু করেছে।

মিরসরাইয়ে অন্ধকারে দেড় লাখ বিদ্যুৎ গ্রাহক
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, রেমালের তাণ্ডবে মিরসরাইয়ে বিদ্যুৎ খুুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে লক্ষাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক অন্ধকারে রয়েছে। এতে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন এখানকার মানুষ। উপজেলার অনেক জায়গা গাছ পড়ে বসতঘরের ক্ষতি হয়েছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে মৎস্য প্রকল্পের প্রায় ৫০ লাখ টাকার মাছ। গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সোমবার ভোর থেকে মুসলধারে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাস শুরু হয়ে তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এতে দুর্বিষহ জীবন পার করছেন এখানকার প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষ।

মানিকগঞ্জে বন্ধ ফেরিসহ নৌযান
ঘিওর (মানিকগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, রিমালের প্রভাবে আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও ধাওয়াপাড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুটে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরিসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েন যাত্রী ও শ্রমিকরা। যানবাহন আটকে পড়ে দুই পাশেই।
এ দিকে ভোর রাত ৩টা থেকে বিদ্যুৎবিহীন ছিল জেলার ঘিওর, দৌলতপুর, শিবালয় উপজেলাসহ বেশ কিছু এলাকার গ্রাহকরা।

দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় নৌযান বন্ধ
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে লঞ্চসহ সব ধরনের ছোট নৌযান বন্ধ রয়েছে। রোববার সারা দিন ফেরি চলাচল করলেও রাতে বাতাসের তীব্রতা বেড়ে নদী উত্তাল হয়ে উঠায় রাত সাড়ে ৯টায় বন্ধ করে দেয়া হয়। দৌলতদিয়া ঘাট লঞ্চ ট্রাফিক কর্মকর্তা মো: শিমুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে গতকাল থেকে লঞ্চ বন্ধ আছে।

রাঙ্গাবালীতে ৬ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত
পায়রা বন্দর (পটুয়াখালী) সংবাদদাতা জানান, রিমালের তাণ্ডবে দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ছয় হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি-প্রতিষ্ঠানের। ভেসে গেছে দেড় হাজার পুকুর ও ঘেরের মাছ। মারা গেছে পাঁচ শতাধিক গবাদিপশু। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে তিন দিন।
প্রাথমিক এমন তথ্য জানিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্ষয়ক্ষতি আরো বের হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী কর্র্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, জোয়ারের পানি বেড়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে চরমোন্তাজ ও চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মানুষ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। পুরো উপজেলায় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দী।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সিরিয়া যাচ্ছেন কাতারের প্রতিনিধিদল ভারত কখনো চায়নি বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক : মিয়া গোলাম পরওয়ার ‘উৎপাদনের জন্য কৃষি পণ্য ও উপকরণ সহজলভ্য এবং সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে’ পলিথিনে মোড়ানো নবজাতকের লাশ! আপনাকে ধরে এনে বিচার করা হবে : মোবারক হোসেন কালীগঞ্জে ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে উলামা পরিষদের বিক্ষোভ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করে সরে যাবো : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ভারতকে দেয়া ‘বিশেষ সুবিধা’ বাতিল করল সুইজারল্যান্ড বুদ্ধিজীবী দিবসে ঢাবি ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের শ্রদ্ধা কবি হেলাল হাফিজের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত মাইকেল জ্যাকসনের অপ্রকাশিত গানগুলো শুধু একজনই শুনতে পারবেন!

সকল