সুন্দরবনে ১০ ফুট পানি, প্রাণীদের নিয়ে শঙ্কা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৮ মে ২০২৪, ০০:০০
ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা ৭ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে করে সুন্দরবনে থাকা প্রাণীদের প্রাণরক্ষা নিয়ে আশঙ্কা করছে বন বিভাগ। এ ছাড়া বনের ভিতরে মিঠা পানির উৎস লবণাক্ত পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় বন্যপ্রাণী, বনজীবী ও বনকর্মীদের খাবার পানি নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। সুন্দরবন বন বিভাগের বনসংরক্ষক মিহির কুমার দে গতকাল সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
বন বিভাগের ভাষ্য, ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় ৭ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত পানির নিচে তলিয়ে যায়। বিশেষ করে কটকা, কচিখালি, নীলকমল, মান্দারবাড়ি, হলদিবুনিয়া এলাকায় সব থেকে বেশি পানির নিচে নিমজ্জিত হয়েছে। এসব এলাকা হরিণ, বানর, শূকরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। পানিতে নিমজ্জিত থাকায় এসব প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বন বিভাগ।
বন কর্মকর্তা মিহির কুমার দে সাংবাদিকদের জানান, পানির উচ্চতা ৭ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত হয়েছে। বনে বাঘশাবক, হরিণ শাবক কিংবা শকুন শাবক এবং অন্যান্য বন্যপ্রাণী আছে। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে বন্যপ্রাণীরা এখানে হয়তো ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে গাছপালার খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। এসব স্থানে পানির যে উচ্চতা এবং যে তীব্রগতিতে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বন্যপ্রাণীর যথেষ্ট ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
তার ভাষ্য, দুপুরের পর থেকেই সুন্দরবনে পানির চাপ বাড়তে থাকে। বিকেল নাগাদ সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে যায়। এ ছাড়া সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা, চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন এলাকাও পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র, বনবিভাগের স্টেশন ও ক্যাম্পের রাস্তাঘাট এবং নিচু অবকাঠামোও পানির নিচে।
এদিকে পশুর নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তলিয়ে গেছে মোংলা উপজেলার কানাইনগর, কাইনমারী, চিলা, সিন্দুরতলা, জয়মনি, বুড়িরডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকা। একইভাবে মোরেলগঞ্জ উপজেলা সদর দেড় থেকে দুই ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানগুছি নদীর তীরবর্তী জনপথগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরবনসহ বন সন্নিহিত উপকূলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এখানে একরকম বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যা আগে কখনো হয়নি।
একজন কর্মকর্তা জানান, সুন্দরবনসংলগ্ন কয়রা উপজেলায় হড্ডা গ্রামের কয়রা নদীতে রোববার ভেসে এসেছে একটি হরিণ শাবক। পরে বনরক্ষীরা হরিণ শাবকটিকে নিয়ে বনের মধ্যে টহল ফাঁড়ির পুকুরের উঁচু পাড়ে ছেড়ে আসেন।
তবে সুন্দরবন খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত সুন্দরবনের জীবজন্তুর তেমন কোনো ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। এখানকার বন্য প্রাণীগুলোর এই প্রকৃতির সাথে অভ্যস্ত। বন্য প্রাণীরা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। বনের মধ্যে পানি বাড়ায় বন্য প্রাণীদের কিছু সমস্যা হলেও বড় ধরনের ক্ষতি হবে না বলেই ধারণা তার।
অপরদিকে সুন্দরবনের বানিয়াখালী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা মো: মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, তার স্টেশনের আওতাধীন বন অভ্যন্তরের কয়রা টহল ফাঁড়ির মিঠাপানির পুকুরটি ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে উঁচু জোয়ারে লোনাপানিতে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনে অবস্থান করা বনকর্মী, জেলে-বাওয়ালি, মৌয়াল ছাড়াও এই পুকুরের পানি পান করে বন্যপ্রাণীরা।
আর সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল বলেন, স্বাভাবিকের তুলনায় জোয়ারের পানি বেড়েছে মূলত ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে। এ ছাড়া বাতাসের পাশাপাশি নদীতে ঢেউও বেড়েছে। উঁচু জোয়ারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েকটি টহল ফাঁড়ির জেটিসহ বনকর্মীদের আবাসস্থল (ব্যারাক) ও কার্যালয়। বনের ভেতরে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল তলিয়ে যাওয়ায় বনের মধ্যে টহল ফাঁড়িগুলোর উঁচু পুকুরপাড়ে হরিণের পাল আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা