হত্যা আতঙ্কে রাখাইন ছেড়েছে আরো ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৭ মে ২০২৪, ০০:০৪
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সঙ্ঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর ৪৫ হাজার মানুষ অন্যত্র চলে গেছেন। হত্যা-শির-েদের আতঙ্কেই রাখাইন ছেড়েছেন তারা। মিয়ানমারের সঙ্ঘাত-বিধ্বস্ত রাখাইন প্রদেশে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার কারণে আরও ৪৫ হাজার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে বলে জাতিসঙ্ঘ সতর্ক করেছে। সঙ্ঘাত-বিধ্বস্ত এই অঞ্চলে শির-েদ, হত্যা এবং সম্পত্তি পোড়ানোর অভিযোগের মধ্যেই এই তথ্য সামনে এলো। আলজাজিরা।
এর আগে গত বছরে নভেম্বরে আরাকান আর্মি (এএ) নামে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী দেশটির ক্ষমতাসীন জান্তা সরকারের বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে। এরপর থেকেই রাখাইন প্রদেশটিতে ব্যাপক সংঘর্ষ চলছে। এ ছাড়া এই লড়াই ২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর যুদ্ধবিরতিরও অবসান ঘটিয়েছে। প্রাণঘাতী এই লড়াইয়ে রাখাইনের মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সদস্যরা আটকে পড়েছেন। মূলত মুসলিমদের সেখানে দীর্ঘ সময় ধরেই বহিরাগত বলে মনে করা হয়ে থাকে।
আরাকান আর্মি বলেছে, তারা রাখাইনের জাতিগত রাখাইন জনগোষ্ঠীর অধিক স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে। রাখাইনে বর্তমানে নির্যাতিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় ছয় লাখ সদস্য রয়েছেন। ২০১৭ সালে দেশটির সেনাবাহিনীর রক্তাক্ত অভিযানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এই ঘটনায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জাতিসঙ্ঘের গণহত্যা আদালতে মামলা চলছে। জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিসের মুখপাত্র এলিজাবেথ থ্রোসেল গত শুক্রবার জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে বুথিডাং এবং মংডু শহরে লড়াইয়ে কয়েক হাজার বেসামরিক লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
তিনি বলেন, আনুমানিক ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে নাফ নদীর এলাকায় পালিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। এ সময় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার আহ্বানও জানান তিনি। তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশকে ‘আন্তর্জাতিক আইনের সাথে সঙ্গতি রেখে কার্যকর সুরক্ষা প্রদান এবং মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি নিশ্চিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
কিন্তু আলজাজিরার তানভীর চৌধুরী বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে বলেছেন, দেশটিতে ইতোমধ্যে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে, আর তাই সরকার সীমান্তের মিয়ানমার অংশে আটকে থাকা আরো শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে নারাজ।
জাতিসঙ্ঘ রাইটস অফিসের মিয়ানমার টিমের প্রধান জেমস রোডেহেভার বর্ণনা করেছেন, ভয়ানক পরিস্থিতি থেকে অনেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, তার দল সাক্ষ্য পেয়েছে এবং এ সংক্রান্ত স্যাটেলাইট ছবি, অনলাইন ভিডিও ও ছবিও দেখেছে। আর এতে বুথিডাং শহরটি ‘ব্যাপকভাবে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে’ বলে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তিনি আরো বলেছেন, ‘সামরিক বাহিনী শহর থেকে পিছু হটার দু’দিন পরে গত ১৭ মে থেকে আগুন জ্বালানো শুরু হয়েছিল বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে এবং আরাকান আর্মি গ্রামটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বলে দাবি করেছে।’
বেঁচে থাকা একজন ব্যক্তি বুথিডাং থেকে চলে যাওয়ার সময় কয়েক ডজন লাশ দেখেছেন বলে জানিয়েছেন। অন্য একজন বলেন, মংডু শহরের পশ্চিম দিকের রাস্তায় আরাকান আর্মির হাতে অবরুদ্ধ হয়ে শহর ছেড়ে যাওয়া হাজার হাজার লোকের মধ্যে তিনিও ছিলেন। সঙ্ঘাতে বেঁচে যাওয়া অন্য ব্যক্তিরা আরো বলেছেন, আরাকান আর্মির সদস্যরা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছে এবং তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করেছে।
রোডেহেভার বলেছেন, বুথিডাং জ্বালিয়ে দেয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বিমান হামলাসহ উত্তর রাখাইনে আরাকান আর্মি এবং সামরিক বাহিনী উভয়েরই রোহিঙ্গা বেসামরিকদের ওপর নতুন করে হামলার ঘটনা নথিভুক্ত করেছে মানবাধিকার কার্যালয়। দলটি ‘কমপক্ষে চারটি শিরো-েদের ঘটনা’ নথিভুক্ত করেছে উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, এসব ঘটনা আরাকান আর্মিই করেছে তাদের বিশ্বাস। এর আগেও অবশ্য রোহিঙ্গাদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। আলজাজিরার তানভীর চৌধুরী বলেছেন, রোহিঙ্গারা সঙ্ঘাতের ‘মাঝখানে আটকা পড়েছে’। তিনি বলেন, ‘তারা অনিশ্চিত পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা তাকে বলেছে- আরাকান আর্মি এবং সামরিক বাহিনী উভয়ই তাদেরকে যুদ্ধে নামানোর চেষ্টা করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘তারা যুদ্ধে যোগ না দিলে তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হবে বলেও তাদের হুমকি দেয়া হয়েছে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা