ভোটাধিকার আদায়ে খালেদা জিয়ার ত্যাগ স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ মে ২০২৪, ০০:০০
বেগম খালেদা জিয়াকে একজন ‘খাঁটি দেশপ্রেমিক’ আখ্যা দিয়ে গতকাল একটি প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেছেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনে বেগম জিয়ার যে ত্যাগ, তা ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি আজ নিজ মাতৃভূমিতেই বন্দী, এর অর্থ হলো বাংলাদেশও বন্দী।
বেগম জিয়াকে ভালোবেসে থাকলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান সংগ্রামে স্বার্থহীনভাবে কাজ করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান বক্তারা।
রাজধানীর হোটেল লেকশোরে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর লেখা ইংরেজি গ্রন্থ ‘বেগম খালেদা জিয়া : হার লাইভ, হার স্টোরি’ এর বাংলা সংস্করণ ‘খালেদা জিয়া : জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানে আসতে নাগরিকদের অনেকেই ভয় পায়। বেগম জিয়াকে শ্রদ্ধা করি বলেই আজ আমি এখানে এসেছি। বেগম জিয়ার দেশপ্রেম আমাকে সত্যিই অভিভূত করে। তাকে অনেকে বলেন আপসহীন, আপসহীন তো বটেই। তার চেয়ে বড় হচ্ছে তার দেশপ্রেম। নিজের স্বার্থ চিন্তা করে তিনি কখনো রাজনীতি করেননি। গণতন্ত্রের জন্য এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছেন। ওয়ান-ইলিভেনের সময় তার কাছেই প্রথমে আপসের প্রস্তাব গিয়েছিল, কিন্তু আপস করেননি। তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনে বেগম জিয়া কঠিন সেক্রিফাইস করেছেন। যদি কোনো দিন বেগম জিয়ার অবদানের সঠিক মূল্যায়ন হয়, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার আদায়ের আন্দোলনে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক দিলারা জামান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া একজন প্রাগমেটিক পপুলার লিডার। আজকে তার ওপর জেল-জুলুম-নির্যাতন চলছে। রাজনীতি করতে গিয়ে তিনি বিভিন্ন সরকারের আমলে ভিকটিম হয়েছেন। হাসিনা আমলে জেলে গিয়েছেন, এরশাদের আমলে জেলে গিয়েছেন, এখনো বন্দী আছেন। চিকিৎসা করার সুযোগ পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, চোখ দেখাতে আমাদের প্রেসিডেন্ট চলে যান সিঙ্গাপুরে ফ্যামিলিসহ, আরো অনেক নেতা চলে যাচ্ছেন সিঙ্গাপুর, লন্ডন, জার্মানিতে। অথচ বেগম জিয়াকে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এটা একটা প্রতিশোধ। এভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আজ নিজের প্রিয় জন্মভূমিতে বন্দী, আমি মনে করি বাংলাদেশও বন্দী। সুতরাং খালেদা জিয়া বাংলাদেশকে সিম্বোলাইজড করেন বলে আমি মনে করি।
অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনকে এভারকেয়ার হাসপাতালে দেখতে যাওয়ার কথা তুলে ধরে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এত নির্দয়-নিষ্ঠুর আচরণ কোনো মানুষ মানুষের সাথে করতে পারে এটা ভাবা যায় না। আমি তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলাম। তাকে দেখে আমার নিজের এত খারাপ লেগেছিল যে, এই দৃশ্য দেখার পরে কেউ তাকে আটকিয়ে রাখতে পারে এটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য। শেখ হাসিনা হয়তো ওরকম অবস্থা দেখেননি, কিন্তু তিনি জানেন না তা হতে পারে না। কারণ উনি প্রতিনিয়ত খবর রাখেন। রাখবার পরেও বেগম জিয়ার ওপর নিষ্ঠুর আচরণ চলছে।
নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নিজের কর্মদক্ষতায় খালেদা জিয়া দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হয়েছেন উল্লেখ করে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর গ্রন্থটি নেতাকর্মীদের পড়ার অনুরোধ জানান মান্না।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে না দিয়ে সরকার ‘খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে’ অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, যার সম্পর্কে আজ আমরা কথা বলছি, তিনি (খালেদা জিয়া) আমাদের মাঝে এখানে নাই। উনাকে আমাদের সামনে আসতে দেয়া হয় না, উনাকে কথা বলতে দেয়া হয় না। বারবার বলার পরও জেনেশুনে বেগম জিয়াকে দেশের বাইরে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে তাকে কিভাবে হত্যা করা হচ্ছে, এটা ইতিহাস সাক্ষী হয়ে থাকবে। যারা উনাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না তারা ইতিহাসে অপরাধীর মতো থাকবে। যখন সুযোগ আসবে ইনশাআল্লাহ তাদের বিচার হবে।
মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার বারবার যদি ক্ষমতায় থাকে তাহলে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং বিএনপির অস্তিত্ব টিকে থাকতে দেবে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো এই সরকার থাকলে এদেশের স্বাধীনতা থাকবে না, যদি এদেশের সাধারণ মানুষ সচেতন না হয়। আমাদের দেশের মানুষকে যদি সচেতন করতে না পারি, যদি নিজেরা সচেতন না হই তাহলে এই সরকারের হাত থেকে বাঁচতে পারব না। আজকে বক্তাদের বক্তব্যেও এই কথাটি উচ্চারিত হয়েছে।
অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহর সভাপতিত্বে ও কবি আবদুল হাই শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, গ্রন্থের অনুবাদক শাহরিয়ার সুলতান, ‘ইতি প্রকাশনা’র প্রকাশক জহির দীপ্তি এবং গ্রন্থের লেখক মরহুম সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহর সহধর্মিণী দিনারজাদি বেগম।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নায়েবে আমির মজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, সাম্যবাদী দলের (মার্কবাদী-লেলিনবাদী) হারুন চৌধুরী, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, জাগপা খন্দকার লুৎফুর রহমান, ইকবাল হোসেন প্রধান, এনডিপির আবু তাহের, পিপলস পার্টির বাবুল সর্দার চাখারি, সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলাম, গণদলের এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করীম, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম,বাংলাদেশ ন্যাপের শাওন সাদেকী, বিএনপির সিনিয়র নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আজম খান, মনিরুল হক চৌধুরী, আবদুস সালাম, আফরোজা খানম রীতা, এস এম আবদুল হালিম, হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাপক শাহিদা রফিক, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, ইসমাইল জবিহউল্লাহ, বিজন কান্তি সরকার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন, শামা ওবায়েদ, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আফরোজা আব্বাস, শিরিন সুলতানা, নিলোফার চৌধুরী মনি, এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজাম, অধ্যাপক আ ন ম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
‘খালেদা জিয়া : জীবন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক ৬৭০ পৃষ্ঠার এই বইটি প্রকাশ করেছে ‘ইতি প্রকাশন’। শাহরিয়ার সুলতান ইংরেজি এই গ্রন্থটি বাংলায় অনুবাদ করেন। গ্রন্থটির মূল্য দুই হাজার টাকা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা