১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ব্যক্তিপর্যায়ের কর হার বাড়বে

-


আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায় বাড়াতে ব্যক্তিপর্যায়ের কর হার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হতে পারে। তবে যারা বছরে ১৬ লাখ টাকার বেশি আয় করেন, তাদের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে। যাদের বছরে আয় ১৬ লাখ টাকার কম, তাদের ক্ষেত্রে সরকার এই সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করতে চায় না। এ ছাড়া এবারের বাজেটে বিভিন্ন খাতে কর অব্যাহতি কমানো এবং শেয়ারবাজারের বিনিয়োগ থেকে মূলধনী আয়ের ওপর যে কর ছাড় সুবিধা রয়েছে, তা প্রত্যাহারের পরিকল্পনাও করছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। বাংলা ট্রিবিউন।
সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা রয়েছে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। তবে পরে এটি সংশোধন করে চার লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। রাজস্ব আয় বাড়াতেই সরকার নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আসন্ন বাজেট নিয়ে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে পরামর্শ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়শা খান, অর্থ বিভাগের সচিব, এনবিআরের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ বাজেট-সংশ্লিষ্টরা। অসুস্থ থাকার কারণে অর্থমন্ত্রী জুমে যুক্ত হয়ে এ বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে তৈরি হচ্ছে নতুন অর্থবছরের বাজেট। কেননা এবারের বাজেটটি সরকারের বর্তমান মেয়াদের প্রথম বাজেট। একই সাথে অর্থমন্ত্রীও নতুন, যিনি প্রথমবারের মতো বাজেট তৈরি করছেন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম একজন নারী অর্থ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দেশের জাতীয় বাজেট তৈরিতে যুক্ত রয়েছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের বাজেটে বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা পর্যায়ক্রমে তুলে নেয়ার প্রস্তাব করা হতে পারে। শুধু তাই নয়, অভিন্ন ভ্যাট হারের দিকে এগোনোর পরিকল্পনাও রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার ওপর ২, ৩, ৫, ৭. ৫, ১০ ও ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের যে প্রক্রিয়া রয়েছে সেটি তুলে দিয়ে একটি নির্দিষ্ট কিন্তু অভিন্ন ভ্যাট হারের দিকে এগোনোর কথা ভাবছে সরকার।

নতুন বাজেট প্রস্তাবনায় প্রতিবার বিদেশ থেকে স্বর্ণ আনার সময় কর আদায়ের বিধান যুক্ত করা হতে পারে। বছরে একবারের সীমা পার করলেও এই বিধান থাকবে। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, একজন যাত্রী চার হাজার টাকা শুল্ক পরিশোধ করে ১১৭ গ্রাম স্বর্ণ আনতে পারেন। এনবিআর এটি বছরে একবারের জন্য সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করেছিল, তবে প্রধানমন্ত্রী এতে ভেটো দেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখের ঘরেই থাকছে। করমুক্ত আয়ের এই সীমা না বাড়ানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি মিলেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির পরেও আসন্ন বাজেটে ব্যক্তিপর্যায়ে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হচ্ছে না বলে জানা গেছে। গত বছর এই সীমা তিন লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হয়েছিল।
সূত্র জানিয়েছে, কৃষি উপকরণ ও সার আমদানিতে খরচ বাড়বে না। কারণ কৃষি উপকরণ ও সার আমদানিতে শুল্ক না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে গ্রাহকরা ১০০ টাকা দিয়ে মোবাইল রিচার্জ করলে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাবদ কেটে নেয়ার পর ৭৩ টাকার কথা বলতে পারেন। আবার সম্পূরক শুল্ক বাবদ ৫ শতাংশ বাড়ানো হলে গ্রাহকরা ১০০ টাকার মধ্যে ৬৯ টাকা ৩৫ পয়সার কথা বলতে পারবেন। রাজস্ব আদায় বাড়াতেই মোবাইল ফোন কলের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর এই প্রস্তাবে ইতিবাচক সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়শা খান জানিয়েছেন, সবকিছু এখনই চূড়ান্ত তা বলা ঠিক হবে না। ট্যাক্স, ভ্যাটের বিষয়ে শেষ অবদি অপেক্ষা করতে হয়। তবে এটুকু বলা যায় যে, বাজেট হবে জনকল্যাণমুখী। উন্নয়নের জন্য অর্থের প্রয়োজন হবে। এর জন্য কর বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। তবে তা কোনোভাবেই সাধারণ মানুষকে স্পর্শ করবে না। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের ওপর করের বোঝা বাড়বে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement