সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ সুবিধা বাড়ল
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২১ মে ২০২৪, ০১:০৫
এখন থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনার ও তাদের পরিবারের সদস্যরা নিজ বাসগৃহে চিকিৎসাসুবিধা পাবেন, এমনকি এ সুবিধা তারা আজীবন ভোগ করবেন। এমন বিধান রেখে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৪’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়।
আইনে বলা হয়েছে, সিইসি, নির্বাচন কমিশনার ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ‘স্পেশাল মেডিক্যাল অ্যাটেনডেন্স রুলস ১৯৫০’-এর অধীনে চিকিৎসার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসা সুবিধাপ্রাপ্তির বিধান সত্ত্বেও নিজ বাসগৃহে চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। তারা অবসরে গেলে বা অন্য কোনো কারণে তাদের কর্মের অবসান হলেও এ সুবিধা অব্যাহত থাকবে।
আইনে বলা হয়েছে, সিইসি প্রতি মাসে এক লাখ পাঁচ হাজার এবং কমিশনাররা ৯৫ হাজার টাকা হারে বেতন পাবেন। এর সাথে প্রতি মাসে ৫০ শতাংশ হারে বিশেষ ভাতা পাবেন। উৎসব ভাতা হিসেবে তারা বছরে দুই মাসের বেতনের সমপরিমাণ টাকা এবং প্রতি বছর একবার এক মাসের বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাংলা নববর্ষ ভাতা পাবেন। নিজের খুশিমতো নিরাপত্তাপ্রহরী ও বাবুর্চি নিয়োগ দিতে পারবেন। এর আগে ১৭ এপ্রিল আইনটির খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ওই সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সিইসির ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান এবং নির্বাচন কমিশনাররা উচ্চ আদালতের বিচারপতির সমপরিমাণ বেতনভাতার সুবিধা পাবেন।
বঙ্গবন্ধু শান্তি পদক দেবে সরকার : শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অবদান রাখাসহ বিভিন্ন অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি পদক দেবে সরকার। প্রতি দুই বছর পর একজন ব্যক্তিকে এ পুরস্কার দেয়া হবে। পদক পাওয়া ব্যক্তি এক লাখ ডলার (বাংলাদেশী টাকায় এক কোটি ১৭ লাখ টাকা) পাবেন। এ ছাড়া তিনি ৫০ গ্রাম ওজনের (চার ভরির বেশি) ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণপদক পাবেন। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি পদক নীতিমালা-২০২৪-এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ১৯৭৩ সালের ২৩ মে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করা হয়েছিল। এটির ৫০ বছর পূর্তি আমরা গত বছর উদযাপন করেছি। সেখানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর নামে একটি শান্তি পুরস্কার প্রবর্তন করতে চান। সে প্রেক্ষিতে আজকে একটি নীতিমালা আমরা উপস্থাপন করেছি। মন্ত্রিসভা সেটি আজকে অনুমোদন করেছে। এই নীতিমালার আওতায় বাংলাদেশ ও বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত বা বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে কয়েকটি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তি পুরস্কার দেয়া যাবে। তিনি বলেন, বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখা, যুদ্ধ নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ ও অবদান রাখা, দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতময় পরিস্থিতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্ব গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখা, টেকসই সামাজিক পরিবেশগত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন- পুরস্কার দেয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হবে।
পুরস্কারটি প্রতি দুই বছরে একবার দেয়া হবে জানিয়ে মো: মাহবুব হোসেন বলেন, এ ক্ষেত্রে পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে প্রস্তাব নেয়া যাবে। কারা কারা প্রস্তাব করতে পারবে নীতিমালায় সেটিরও একটা বর্ণনা দেয়া আছে। একটি দেশের সরকার, রাষ্ট্রপ্রধান বা সেই দেশের সংসদ সদস্যরা প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন। নোবেল বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি কারো নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশী যত দূতাবাস রয়েছে সেই দূতাবাসের প্রধানরা বা আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানরা পুরস্কারের জন্য নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। বিদেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশন বা দূতাবাসের প্রধানরাও প্রস্তাব পাঠাতে পারবেন। জাতিসঙ্ঘের কোনো সংস্থা প্রধানও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন। তবে কোনো ব্যক্তি নিজে পুরস্কারের জন্য দাবি জানাতে পারবেন না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী একটি জুরি বোর্ড গঠন করা হবে। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নিরপেক্ষ ও খ্যাতিসম্পন্ন লোকদের দ্বারাই জুরি বোর্ড গঠিত হবে। ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবসে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করা হবে। ২৩ মে বা কাছাকাছি সময়ে এই পুরস্কার দেয়া হবে।
অর্থ বিভাগ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী বছর (২০২৫) প্রথমবারের মতো এই পুরস্কার দেয়া হবে। মন্ত্রিসভা থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, নীতিমালা দিয়ে কাজটি যাতে শুরু করা হয়, এটিকে যাতে পরবর্তী সময়ে আইনে রূপান্তর করা হয়। আইনের মধ্যে একটি তহবিল তৈরি করতে বলা হয়েছে। যে তহবিলে সরকার বা বাইরের লোক যে কেউ সেখানে অনুদান দিতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে আমরা তহবিল থেকেই সেই ব্যয়ভার নির্বাহ করতে পারব। সে পর্যন্ত সরকারই এই ব্যয়ভার বহন করবে।
বিধিমালা করে অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণের নির্দেশ : একটি বিধিমালা করে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার মন্ত্রিসভা বৈঠকে তিনি এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়, শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করেন। সভা শেষে বিকেলে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, অটোরিকশা নিয়ে একটি ঘটনা ঘটেছে। সেটি বিভিন্নভাবে পত্রিকায় এসেছে। অটোরিকশা চালকরা নিজেদের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। সেটি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। তিনি সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন- অটোরিকশা চালকদের জীবন-জীবিকার বিষয়টি উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে না। তাদের জীবিকার বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিতে হবে।
মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন যে, একটি বিধিমালার মাধ্যমে এটিকে রেগুলেট (নিয়ন্ত্রণ) করতে হবে। সেই রেগুলেশনে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দিতে হবে, নির্ধারিত এলাকার বাইরে তারা গাড়ি চালাতে পারবে না, এর মধ্যেই তাদের চালাতে হবে।
‘মহাসড়কে কিংবা বিজি হাব কিংবা সড়কে তারা অটোরিকশা চালাতে পারবেন না, যেতে পারবেন না। কোন কোন সড়কে চালাতে পারবেন, কী গতিতে চালাতে পারবেন, সেটিও প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই মহাসড়ক কিংবা বড় সড়কে তারা (অটোরিকশা) যেতে পারবেন না, সে বিষয়গুলো নিশ্চিত করে সংশ্লিষ্ট আইন-বিধিমালা যথাযথভাবে সংশোধন কিংবা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারপ্রধান সড়ক বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন।
অটোরিকশা বন্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী জানতেন না জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, তোমরা আমাকে জানাওনি। তাদের জীবিকার কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে তাদের সম্পর্কে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া যৌক্তিক মনে করেননি প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, আমার সাথে আলোচনা করা হয়নি। আমি জানিনি। আমার সাথে তোমাদের কথা বলা উচিত ছিল। তিনি এভাবেই বলেছেন। তাদের জীবিকার ব্যবস্থা না করে এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়া যৌক্তিক হয়নি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা