মিরপুরে ব্যাটারি চালিত রিক্সাচালক ও পুলিশ সংঘর্ষ : আহত অর্ধশত
দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২০ মে ২০২৪, ০০:০০, আপডেট: ২০ মে ২০২৪, ০১:০১
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ও মালিকদের সাথে পুলিশের ব্যপক সংঘর্ষ হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশের শর্টগানের গুলি, লাঠিচার্জ ও টিয়ারসেলে কমপক্ষে অর্ধশত ব্যক্তি আহত হয়েছেন। তাদের গুলিতে আহত সাগর মিয়াকে (২২) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিক্ষোভকারী রিকশা চালকরা কালশী মোড়ের পুলিশ বক্সসহ কয়েকটি স্থানে রাস্ত্য়া আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা মেট্রোরেলের কয়েকটি ষ্টেশনের গেটে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ করেন। সকাল থেকে চলা দফায় দফায় সংঘর্ষে বন্ধ হয়ে যায় মিরপুর, পল্লবী, কালশীসহ আশপাশের এলাকার যানবাহন চলাচল। এতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ এক স্থান অবরোধকারিদের সরিয়ে দিলেও পরবর্তীতে তারা অন্য স্থানে গিয়ে সড়ক অবরোধ করছে। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে শুরু হয় বিক্ষোভ। এরপর সেটি মিরপুর-১.২., ১১, ১২ নম্বর ও সব শেষ কালসী মোড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে মহানগরীতে ব্যাটারী চালিত থ্রি হুইলার ও লক্কড়-ঝক্কড় যানবাহন চলাচল বন্ধের আদেশ দিয়ে বিআরটিএ। গত শনিবার এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই আদেশ দেয়া হয়।
জানা গেছে, রাজধানীতে ব্যটারীচালিত রিকশা চলাচল বন্ধের প্রতিবাদে গতকাল রোববার সকালে মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরে জড়ো হয় কয়েকশত রিকশা চালক ও মালিক। তারা গোলচত্বরের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় ওই এলাকায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
জানা গেছে, সকালে বিক্ষোভকারীরা সড়ক অবেরাধ করে রাজধানীতে অটোরিকশা চলাচলের জন্য শ্লোগান দিতে শুরু করে। এসময় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে তারা মেট্রো রেল ষ্টেশনের কয়েকটি গেটে তালা ঝুলিয়ে দেয়। কয়েক ঘ›ণ্টা এভাবে চলতে থাকার পর দুপুরের দিকে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে শুরু হয় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জে মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় বিক্ষোভকারী। সেখান থেকে তারা কালশী মোড়ে জড়ো হতে শুরু করে। এসময় ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তারা মোড়ে থাকা একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে সহিংস আন্দোলন শুরু করে। সড়কের মাঝখানে রশি টানিয়ে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়। এক পর্যায়ে সড়কে তারা গাড়ি আড়াআড়িভাবে রাখতে বাসচালকদের বাধ্য করেন। এতে ওই সড়ক ব্যবহারকারী হাজার হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন। গন্তব্যে যেতে লোকজনকে হেঁটেই রওনা দিতে দেখা যায়। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট ছোঁড়ে। পাল্টা জবাব দিতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে শুরু করে। শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ। তখন শর্টগানের গুলিতে আহত হন সাগর।
তাকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা রাকিবুল ইসলাম জানান, তাদের বাসা মিরপুর ১১ নম্বর বাউনিয়াবাদ এলাকায়। সেখানে একটি টেইলার্সে কাজ করেন সাগর। তারা দু’জন সকালে একটি কাজে উত্তরায় যান। সেখান থেকে মিরপুরের বাসায় ফিরছিলেন। কালশী মোড়ে পৌঁছানোর পরপরই হঠাৎ শটগানের গুলিতে সাগর আহত হন। প্রথমে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢামেকে নিয়ে আসা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, সকাল থেকে কালশীসহ মিরপুর এলাকায় অটোরিকশা চালকরা রাস্তা অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষ থেকেই সাগর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো: বাচ্চু মিয়া জানান,সাগরের গলায় ও বুকের বাম পাশে গুলির চিহ্ন রয়েছে।
এ দিকে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১৫ মে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে না দেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর গত শনিবার বিআরটিএ একটি নির্দেশনা জারি করেছে। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঢাকা মহানগরীতে আর চলতে পারবে না ব্যাটারি বা মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান এবং রঙচটা, জরাজীর্ণ, লক্কড়ঝক্কড় মোটরযান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যাটারি/মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান বা অনুরূপ শ্রেণীর থ্রি-হুইলার ঢাকা মহানগরীতে চলাচলের কারণে সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী ব্যাটারি/মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান বা অনুরূপ শ্রেণীর থ্রি-হুইলার এবং ফিটনেসের অনুপযোগী, রঙচটা, জরাজীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় মোটরযান চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমতাবস্থায় ঢাকা মহানগরীতে ব্যাটারি/মোটরচালিত রিকশা বা ভ্যান বা অনুরূপ শ্রেণীর থ্রি-হুইলার এবং ফিটনেসের অনুপযোগী, রঙচটা, জরাজীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় মোটরযান চলাচল বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।
কালশীর সড়কে যান চলাচল শুরু : এদিকে প্রায় ৫ ঘণ্টা পর রাজধানীর কালশীর সড়কে যান চলাচল আবারো শুরু হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর ওই সড়কে যান চলাচল শুরু হয় বলে জানিয়েছেন ডিএমপির ট্রাফিক মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. জসিম উদ্দীন। তিনি বলেন, কালশীর পরিস্থিতি সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা পর স্বাভাবিক হয়েছে। ফলে ওই এলাকায় আবারও যান চলাচল শুরু হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যেন পুনরায় না ঘটে সেজন্য পুলিশ সদস্যরা তৎপর আছেন।
কালশীতে পুলিশ বক্স পোড়ানোর ঘটনায় মামলা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে অবশ্যই মামলা হবে। মিরপুর ট্রাফিক বিভাগ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা