১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১ পৌষ ১৪৩০, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকা খুশি নয় : ফখরুল

বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির সাথে গণফোরামের নেতাদের বৈঠক : নয়া দিগন্ত -


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা এতটুকুও খুশি না। সবাইকেই যেকোনো দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে হয়। এমনকি সামরিক শাসকদের সাথেও সম্পর্ক রাখতে হয়। আমেরিকা এখন সেটিই করছে। তবে তারা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করছে না।
গতকাল বুধবার রাতে গুলশান কার্যালয়ে গণফোরাম ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সাথে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এর পরে গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে বৈঠক করেন বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা। মির্জা ফখরুলের সাথে এসব বৈঠকে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমেরিকা ৭ জানুয়ারির আগে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলেছে। এটি এখনো তারা অব্যাহত রেখেছে। কিছু দিন আগে হিউম্যান রাইটসের যে রিপোর্ট বেরিয়েছে, সেখানেও তারা বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। এতে প্রমাণিত হয় বাংলাদেশের বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে তারা এতটুকুও খুশি না। তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের যে অবস্থা, সেই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তারা তাদের দেশের জন্য যেটা উপকারী মনে করছেন, সেটি করছেন। কিন্তু তারা কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে করছেন না।
সাংবাদিকদের অন্য প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সরকার একদলীয় রাষ্ট্র পরিণত করেছে। একদলীয় রাষ্ট্রের এটাই বৈশিষ্ট্য, যারা রাষ্ট্রদূত থাকবেন, যারা সরকারি কর্মকর্তা থাকবেন এবং যারা বিভিন্ন সরকারি দায়িত্বে থাকবেন- তারা শুধু যে দল (ক্ষমতায়) আছে, সেই দলের পক্ষেই কথা বলবেন। আরো বেশি কিভাবে উন্নয়ন করা যায় এবং কিভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায়, সেই কাজগুলোই করবেন। তারা বাংলাদেশকে প্রমোট করে না, তারা আওয়ামী লীগকে প্রমোট করে। আওয়ামী লীগকে প্রমোট করার কারণেই তারা বাইরের কিছু লোককে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্রের অধিকার এবং বেঁচে থাকার অধিকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য এই ফ্যাসিস্ট অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছি, সেসব রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আমরা আবার আলোচনা শুরু করেছি। আমরা সবাই একমত হয়েছি যে, এই ফ্যাসিবাদী সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সব রকম অপকৌশল গ্রহণ করছে। স্বাধীনতার চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করে ক্ষমতার থাকার জন্য দেশের সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। গোটা রাষ্ট্রকে একটা একদলীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সরকার নিয়ে যেতে চাচ্ছে। আর এটি তারা করছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। তিনি আরো বলেন, সরকার একটা নির্বাচন করেছে। যে নির্বাচন মানুষ বর্জন করেছে। নির্বাচনে কেউ ভোট দিতে যায়নি। মানুষ চায়, এ দেশে একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হোক। আর সেটা একটা নির্দলীয় সরকারের অধীনে। সেই নির্বাচনে জনগণের যে মতামত, সেই মতামত তারা দিতে চায়। মানুষের সেই আশা-আকাক্সক্ষা পূরণ করবার জন্য আমরা রাজনৈতিক দলগুলো সংগ্রাম ও লড়াই করছি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার সব রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যবহার করে বেআইনিভাবে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। কিন্তু ইতিহাস বলে এভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করে বেশিদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। আর ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নতুন নতুন নির্বাচনের কৌশল তারা বের করে।

বৈঠকে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, নির্বাহী সভাপতি জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, সভাপতি পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ পিপলস পার্টির পক্ষে দলটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বাবুল সরদার চাখারি, কো-চেয়ারম্যান পারভীন নাসের খান ভাসানী, এ আর জাফর উল্লাহ চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হারুনুর রশিদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য আলমগীর হোসেন খাদিজা আক্তার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এরপরে গণতন্ত্র মঞ্চের সাথে বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। এতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement