চূড়ান্ত মৃত্যুদণ্ডাদেশের আগে কনডেম সেলে না রাখার হাইকোর্টের রায় স্থগিত
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৬ মে ২০২৪, ০০:০০
মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে নির্জন সেল বা কনডেম সেলে বন্দী রাখা যাবে না বলে হাইকোর্টের দেয়া রায় আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। গতকাল বুধবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন। একই সাথে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে ২৫ আগস্ট আবেদনটি শুনানির জন্য নির্ধারণ করেছেন আদালত। এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলা হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
চেম্বার আদালতের আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, হাইকোর্টের রায়ে কিছু নির্দেশনা ও কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। হাইকোর্ট যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন তা দিতে পারেন কি পারেন না তা আপিল বিভাগ কনফার্ম করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা মানতে পারব না। কারণ আমরা সিপি ফাইল করব। সিপি ফাইল করার পর সুপ্রিম কোর্ট যদি বলে না এটা ঠিক আছে তা হলে আমরা মানতে বাধ্য। আর যদি ইনফ্যাকচুয়াচ হয়, যদি আমরা মেনে নেই। এটা আমাদের প্রথম কথা। আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, এখানে রায়ে নতুন শব্দ বলা হয়েছে। আদালত আমাদের আবেদন গ্রহণ করে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত রায় স্থগিত করেছেন।
আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, এ মামলায় হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন সেই রায়ে কিছু নির্দেশনা ও কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। এগুলো স্থগিত করে রাষ্ট্রপক্ষে সিপি ফাইল করা হয়। শুনানি করে চেম্বার আদালত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্টে ওই সব নির্দেশনা ও পর্যবেক্ষণ ২৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত থাকবে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ সিভিল পিটিশন দায়ের করবেন। তারপর পূর্ণাঙ্গ শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে বলেছেন কারাগারে বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। কয়েদিরা কনডেম সেলে থাকতে চাচ্ছে না। সবাই অভিযোগ দিচ্ছে। এ জন্য উনারা বাধ্য হয়েছেন চেম্বার জজ আদালতে আসতে। আমি বলেছি, সেটি হচ্ছে স্থিতিতাবস্থা জারি করা যেতে পারে। তবে হাইকোর্টের রায় ও পর্যবেক্ষণ না দেখে তা স্থগিত করাটা আইনসম্মত হবে না। এর আগে গত ১৪ মে হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করা হয়। এর আগে সোমবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো: বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দী রাখা যাবে না বলে রায় দেন।
রায়ে আদালত বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হবে তখন, যখন বিচার বিভাগীয় পদক্ষেপ আছে হাইকোর্ট বিভাগ, আপিল বিভাগ ও রিভিউ এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ আছে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা। এসব কিছু নিষ্পত্তি করেই একজন ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হবে। কেবল তখন একজন ব্যক্তিকে মৃত্যু সেলে বন্দী রাখা যাবে।
রায়ে আদালত আরো বলেছেন, কোনো বন্দীর যদি কোনো বিশেষ অসুবিধা থাকে, এটি হতে পারে শারীরিক কোনো অসুবিধা, সংক্রামক রোগ কিংবা কোনো যৌন সমস্যা থেকে থাকে তাহলে তাকে আলাদা করে রাখা যাবে। এই ক্ষেত্রে জেলে থাকা ওই ব্যক্তির মতামত নিতে হবে।
আদালত বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে নতুন জেলকোড তৈরি করা হচ্ছে। নতুন আইন হচ্ছে প্রিজন অ্যাক্ট। হাইকোর্ট বলছেন, রায়ের পর্যবেক্ষণ যেন নতুন আইনে প্রতিফলিত হয়, সেটি বিবেচনা করতে।
রায়ে আদালত বলেছেন, এখন হাইকোর্টে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন আবেদন শুনানি হয় না। মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্যান্য আসামির বা অন্য দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জামিন আবেদনের শুনানি হয় এবং তারা জামিন পেয়ে বেরিয়ে যান। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হলে তার আপিল শুনানির কোনো ব্যবস্থাপনা আমাদের হাইকোর্টে নেই। আদালত বলেছেন, অন্যান্য আসামির মতো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদেরও জামিন আবেদন যেন হাইকোর্ট বিভাগে শুনানি করা হয় এবং জামিন ও যেন মঞ্জুর করা হয়। রায়ে দুই বছরের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীদের ক্রমান্বয়ে কনডেম সেল থেকে সরিয়ে সাধারণ কয়েদিদের সাথে রাখার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজন কারাবন্দীর রিটের শুনানি নিয়ে ২০২২ সালের ৫ এপ্রিল মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একই সাথে জেল কোডের ৯৮০ বিধি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চান উচ্চ আদালত।
রুলের পর আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেছিলেন, জেল কোডের ৯৮০ বিধি চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। সেখানে বলা আছে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের পৃথকভাবে কনডেম সেলে রাখা হবে। ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন তিন কয়েদি।
তারা হলেন- চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এসব আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা