রফতানি নীতি চূড়ান্ত : ২০২৭ সালে ১১০ বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য
অনুমোদন হতে পারে আজ- সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
- ১৫ মে ২০২৪, ০২:১১, আপডেট: ১৫ মে ২০২৪, ১১:৩৭
চার বছর পর ২০২৭ সালে ১১০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয় করতে চায় বাংলাদেশ। নতুন রফতানি নীতিমালা এই আয় চূড়ান্ত করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এই নীতিমালা অনুসারে ২০২৪-২০২৭ মেয়াদের শেষ বছরে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১১০ বিলিয়ন বা ১১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, আজ বুধবার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় প্রস্তাবিত রফতানি নীতি ২০২৪-২০২৭ অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের সরকারের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, রফতানি খাতের চাহিদা এবং বিশ^ বাণিজ্য পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে প্রতি তিন বছর অন্তর রফতানি নীতি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় রফতানি নীতি ২০১৪-২০২৭ এর খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, রফতানি নীতি ২০২১-২০২৪ এর মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে।
প্রস্তাবিত রফতানি নীতি ২০২৪-২০২৭ এ প্রস্তাবনার উল্লেখযোগ্য দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রথম অধ্যায়ে ‘রফতানি নীতি (২০২৪-২০২৭) প্রণয়নের প্রেক্ষাপটগুলো’ সন্নিবেশ করে রফতানি নীতি ২০২৪-২০২৭ প্রণয়নের ভিত্তি রচনা করা হয়েছে। রফতানি নীতি প্রণয়নের প্রেক্ষাপটগুলো : (ক) স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ, (খ) কোভিড-১৯ এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, (গ) দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত রূপকল্প, (ঘ) চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, দক্ষতা উন্নয়ন ও মেধাসত্ব অধিকার সংরক্ষণ, (ঙ) অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) উদ্যেক্তাদের সহায়তা, (চ) রফতানি খাতে নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি, (ছ) পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও বৃত্তাকার অর্থনীতি কৌশল গ্রহণ বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে।
নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের রফতানি সম্পৃক্তকরণের সুনির্দিষ্ট নীতি সুপারিশ করা হয়েছে, ডব্লিউটিওর বিধি বিধান অনুসরণ করে রফতানিকারকেদের উৎসাহিত করার জন্য আর্থিক প্রণোদনার বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ২০২৪-২০২৭ মেয়াদের শেষ বছরে ১১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত খাতে সম্ভাবনাময় নতুন কিছু পণ্য ও সেবা যেমন- সবজি, হস্ত ও কারু পণ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ম্যানুফ্যাকচারিং ও ডাইং-প্রিন্টিং ফিনিশিং অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সেবা খাত ও বিশেষ উন্নয়নমূলক সেবা খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রফতানি সম্প্রসারণে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। খাতভিত্তিক কিছু সুপারিশ করা হয়েছে এবং ওষুধ শিল্প ও মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট ও ২০২৪ সালের বর্ষপণ্য হস্তশিল্পজাত পণ্যকে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সেবা খাতের রফতানি সম্প্রসারণে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য নতুন করে সংযোজন করা হয়েছে।
এ ছাড়াও নিষিদ্ধ পণ্য তালিকা এবং শর্ত সাপেক্ষে রফতানি পণ্যতালিকা হালনাগাদ ও এইচএস কোডের হেডিংসহ উল্লেখ করা হয়েছে। রফতানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন কমিটি, রফতানি সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি গঠন ও কার্যপরিধি সংযোজন করা হয়েছে।
রফতানি নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের বাজারে শুল্কমুক্ত-কোটামুক্ত সুবিধা হারাবে বিশেষ করে ২০২৯ সালের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে ‘এভরিথিং বাট আর্মস(ইবিএ)’ স্কিম সুবিধা হারাবে, যার ফলে গড়ে ১০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে এই বাজারে পণ্য রফতানি করতে হবে যা অন্যান্য রফতানিকারক দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলবে। এ ছাড়া কঠোর রুলস অব অরিজিন প্রতিপালন, ডব্লিউটিওর বিভিন্ন চুক্তির আওতায় দেয়া স্পেশাল অ্যান্ড ডিফারেনশিয়াল (এসঅ্যান্ডডি) ট্রিটমেন্ট সীমিত হবে, নোটিফিকেশন সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতা, কঠোর কমপ্লায়েন্স ও স্ট্যান্ডার্ড প্রতিপালন, সরকার কর্তৃক রফতানি খাতে নগদ সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ, শ্রম অধিকার সুরক্ষা বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা আরোপিত হবে।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জগুলো গুরুত্বসহকারে রফতানি নীতিতে প্রাধান্য পেয়েছে। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১-এ বাংলাদেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গৃহীত লক্ষ্যগুলোর সাথে রফতানি নীতি ২০২৪-২০২৭কে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য রফতানি পণ্য ও সেবা বহুমুখীকরণ, বাজার সম্প্রসারণ, সব রফতানি খাতে সুষম নীতি সুবিধা দেয়া, সক্ষমতা বৃদ্ধি, রফতানির পরিমাণ বৃদ্ধি এবং শিল্প উৎপদনমুখী রফতানিতে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংকস, বিগ ডাটা, থ্রিডি প্রিন্টিং, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করে রফতানি বৃদ্ধিতে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
রফতানি নীতিতে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের (এমএসএমই) ভূমিকা প্রণিধানযোগ্য। এমএসএমই একটি শ্রম নিবিড়, স্বল্প পুঁজিনির্ভর ও উৎপাদন সময়কাল স্বল্প হওয়ায় জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত সুরক্ষার মাধ্যমে সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২-এ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতকে শিল্প উন্নয়নের প্রধান মাধ্যম হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে সেবা খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা