প্রতারকচক্রের ফাঁদে সর্বস্বান্ত শত পরিবার
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৫ মে ২০২৪, ০২:১০
অনলাইনে ডলার বিনিয়োগ করলে প্রতিদিনই ডলার আয় করা যাবে; এমন প্রলোভনে মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। প্রতারকচক্রটি গ্রামের সহজ-সরল মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা।
প্রতারকচক্রের শিকারদের একজন তৃণা মনি। তার বাড়ি দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার জিনগাঁওয়ে। তিনি জানান, একই এলাকার জাকির নামে একজন অনলাইনে বিনিয়োগ করে ডলার আয় করা যায় বলে তাকেসহ এলাকার বেকার যুবকদের নানা প্রলোভন দেয়। জাকির তাদের জানায়, আমেরিকান একটি কোম্পানির ওয়েবসাইটে রিচার্জ করতে হবে কমপক্ষে ৫০০ ডলার। এক হাজার ডলার রিচার্জ করলে দৈনিক আয় হবে ১০ থেকে ১৫ ডলার। এমন সব লোভনীয় অফার ও আশপাশের অনেক মানুষের এভাবে ডলার আয় করা দেখে তিনিও খোলেন একটি অ্যাকাউন্ট। তবে টাকা হাতে হাতেই গ্রহণ করতেন জাকির হোসেন নামে প্রতারকচক্রের মূল হোতা।
এভাবে পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে স্থানীয় অনেক মানুষকে তার শিকার বানিয়ে জাকির হাতিয়ে নেয় দুই কোটির টাকা উপরে। তৃণা মনির মতো আরো অনেকেই প্রতারণার শিকার হয় জাকিরের ফাঁদে পা দিয়ে। এ ব্যাপারে তৃণা মনি একটি মামলা দায়ের করেছেন । যার মামলা নং-৩৬/২৪ সি (বোচাগঞ্জ)।
জানা গেছে, জাকির হোসেন পেশায় চাকরিজীবী। তিনি দেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির সাথে সাথে প্রতিষ্ঠা করেছেন নিজের একটি কোম্পানি (পিওর অ্যাগ্রো কেয়ার), যা বর্তমানে সরকার কর্তৃক নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। জাকির পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের ছেলে। বর্তমানে তিনি বসবাস করছেন দিনাজপুর শহরের উত্তর মুন্সিপাড়া স্টেশন রোড এলাকায়। তার বিরুদ্ধে ভেজাল ও অবৈধ সার বিক্রির অভিযোগে একটি মামলাও রয়েছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, জাকির জৈবসার উৎপাদক কোম্পানিতে চাকরি করার সুবাদে হাটরামপুর বাজার এলাকায় তার আসা যাওয়া। এই সুযোগে গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে প্রলুব্ধ করে অনলাইনে ডলার আয় করার বিষয়ে। প্রথমে কিছু সহজ-সরল মানুষকে অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে ডলার জমা ও ডলার উত্তোলনও করে দিয়েছেন। এভাবে ধীরে ধীরে ডলার জমা ও উঠানোর মধ্যে দিয়ে অনেকেই বেশি লাভের আশায় জমা করেছেন অনেক পরিমাণ অর্থ। যাদের বোকা বানিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল পরিমাণ অর্থ তাদেরই আবার দিয়েছে বিভিন্ন পুরস্কারও।
ভুক্তভোগীরা জানান, জাকির ও তার অনুসারীরা দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন হোটেলে মানুষকে প্রলুব্ধ ও উৎসাহিত করতে আয়োজন করেন পুরস্কার বিতরণের অনুষ্ঠান। সেখানে যারা বেশি পরিমাণে সদস্য বাড়িয়েছেন তাদের মাঝে দেয়া হয়েছে দামি পুরস্কারও। অনুষ্ঠানের সময় তোলা ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ অন্য কোনো মাধ্যমে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে নিষেধ করা হতো। দেখানো হয়েছে বিদেশী ভিডিও। যার ছবি, স্ক্রিনশর্ট ও ভিডিও অনুসন্ধান চলাকালে সামনে আসে। সেখানে দেখা যায় ঈঙঝ (ঠওচ-২) ওহঃবৎহধঃরড়হধষ নামে (মামলার নথি অনুসারে) হোয়াটসাঅ্যাপে এষড়নধষ-ঐবৎড়-ঋঢ গ্রুপ ওপেন করে বিভিন্ন সময়ে অনলাইনে গ্রুপ মিটিং করে থাকে।
ভুক্তভোগী তৃণা মনির দায়ের করা মামলায় আসামি করা হয়েছে জাকির হোসেনকে। এ মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে চারজনকে। সাক্ষীরাও শিকার হয়েছেন এই ডলার প্রতারণার। তিনি জানান, উল্লেখিত মাধ্যম ছাড়াও আরো কয়েকটা মাধ্যম দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারকরা বিভিন্ন ভার্চুয়াল কারেন্সির নামে মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারক জাকির হোসেনের সাথে জড়িত রয়েছে আরেফিন শাওন, এম কে এম অলি উল্লাহ, আরিফুর রহমান, জাবেদ, আব্দুল হালিম, আতাউর রহমান, জিয়াউল হক, কাশেম চৌধুরীসহ নাম না জানা অনেকে। বিভিন্ন ওয়েবসাইট তৈরি, কম্পিউটার সাপোর্ট, অ্যাপ তৈরিতে সহযোগিতা করে বিপ্লব নামের এক ব্যক্তি। রংপুর বিভাগসহ বিভিন্ন এলাকায় সদস্য সংগ্রহের কাজে সহযোহিতা করছেন এ কে আজাদ। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা করে চলেছেন জাকির হোসেনের স্ত্রী মাফরুজা বেগম।
মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়েছে, গত বছর ১ অক্টোবর তৃণা মনির কাছ থেকে জাকির হোসেন ডলার জমা করার জন্য ৫০০ ডলার, রাসেল রানার কাছ থেকে এক হাজার ডলার, তৌহিদুল ইসলামের কাছ থেকে এক হাজার ৫০০ ডলার, জিহাদ হাসানের কাছ থেকে ৭০০ ডলার ও সামসুদ্দিনের কাছ থেকে ৫০০ ডলার সম মূল্যের টাকা গ্রহণ করেন। অভিযোগে বলা হয়, একটা পর্যায়ে ওয়েবসাইট বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে আর কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। টাকা লেনদেনের ব্যাপারটি সুরাহা করার জন্য চলতি বছর ১৫ জানুয়ারি জাকির হোসেন, বাদি ও সাক্ষীরা একত্রিত হন রামপুর বাজার মসজিদের সামনে। সেখানে মীমাংসার লক্ষ্যে গ্রহণকৃত টাকা ফেরত চাইলে সেখান থেকে পালিয়ে যায় জাকির হোসেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্নভাবে বাদি ও সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছেন অভিযুক্ত জাকির হোসেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা