আরএসওর সোর্স ভেবে বাংলাদেশী যুবককে হত্যা আরাকান আর্মির
- উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা
- ১৪ মে ২০২৪, ০১:৩৬
উখিয়ার পার্শ্ববর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ৪৮ নম্বর পিলারের ওপারের মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বেনডুলা বাজারে দেশী পণ্য বিক্রি করে ফিরে আসার সময় প্রতিপক্ষ আরএসওর সোর্স ভেবে বাংলাদেশী যুবককে হত্যা করেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। রোববার সকাল ৮টার দিকে শূন্য লাইন থেকে অন্তত এক কিলোমিটার মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আরাকান ঘাট নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবুল কালাম (২৮) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বামহাতির ছড়া গ্রামের বদিউজ্জামানের ছেলে। তার দু’টি সন্তান রয়েছে। এদিকে বাংলাদেশী যুবককে হত্যার সময় থেকে সারা দিন পার হলেও লাশ ফেরত দেয়নি বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউয়িন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন।
গত রোববার দুপুর থেকে লাশ ফেরত দেয়ার কথা বলে তিন দফায় নিহত আবুল কালামের পরিবারকে সীমান্তের ৪৮ নম্বর পিলারের কাছাকাছি আরাকান ঘাট নামক স্থানে বসিয়ে রাখেন আরাকান আর্মির সদস্যরা। বিষয়টি স্বীকার করে লাশের জন্য অপেক্ষমাণ মৃত আবুল কালামের ভাই আবু তাহের ও স্ত্রী আরিফা মনি বলেন, লাশ ফেরত পেতে রোববার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সীমান্তে অপেক্ষা করি। তবে লাশ ফেরত দেবে বলে আরাকান আর্মি কয়েক দফা ঘুরায়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় লাশ না দিয়েই তাদের ফেরত দেয় আরাকান আর্মি। পরে রাত ৮টায় খালি হাতে বাড়িতে ফিরে আসি। নিহতের স্ত্রী জানান, তার স্বামী রোববার ভোর সাড়ে ৩টায় অন্যদের সাথে নিয়ে সীমান্তে যায়। সকালে খবর পায় আরাকান আর্মির গুলিতে স্বামী নিহত হয়েছে। স্বামী হারিয়ে আরিফা মনি এখন বাকরুদ্ধ। তিনি জানান, তার স্বামী কোনো বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে পরিচিত ছিল না। গরিব মানুষ কাজ করে সংসার চালাই। শ্রমিক হিসেবে ব্যবসায়ীদের সাথে কাজ করত তার স্বামী।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রগুলো জানায়, আরাকান আর্মির গুলিতে নিহত আবুল কালাম বাংলাদেশ থেকে মুরগির ডিমের একটি খাঁচিসহ কিছু পণ্য নিয়ে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে বেনডুলা বাজারে যায়। ফেরার পথে আরাকান ঘাট নামক স্থানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা তাকে আটক করে। সেই সময় তার দলে ছিল পাঁচজন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের মধ্যে একজন জানান, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সদস্যরা আবুল কালামকে মিয়ানমারের অপর বিদ্রোহী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সোর্স মনে করে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকে। সে কারণে কোনো কথাবার্তা না বলেই তাকে কাছে ডেকে নিয়ে কপাল বরাবর গুলি করে। ফলে ঘটনাস্থলেই সে লুটিয়ে পড়ে। এতে সে মারা যায়। পরে তাকে সারা দিন পলিথিনে ঢেকে রাখা হয়। সন্ধ্যার সময় কাঠের বাক্সে রেখে দেয়। আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশীকে হত্যার পর সীমান্তে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এরপরও নিহতের পরিবার সারা দিন লাশ ফেরত নেয়ার জন্য সীমান্তে অবস্থান করেন। স্থানীয়রা অনেকেই ধারণা করছেন, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরএসওর সোর্স সন্দেহে আবুল কালামকে হত্যা করা হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, এ ঘটনার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সড়কে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে বিজিবি তাদের টহল জোরদার করেছে। এ ব্যাপারে বিজিবির কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন, বামহাতির ছড়া এলাকার যুবক আবুল কালামকে গুলি করে হত্যার বিষয়টি জেনেছি। তার লাশ এখনো মিয়ানমারের অংশে। রোববার সারা দিন নিহতের পরিবার অপেক্ষা করে খালি হাতে রাতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। তবে লাশ ফেরত আনার ব্যাপারে জোর তৎপরতা চলছে বলে তিনি জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা